নিজের জন্মদিনে যাঁরা বাড়তি আয়োজন পছন্দ করেন না, তাঁরা মানুষ হিসেবে কেমন

অনেকের কাছে জন্মদিন মানেই উৎসব। তবে সবাই কিন্তু জন্মদিনকে নিজের ব্যক্তিগত উৎসব হিসেবে দেখেন না। কেউ কেউ ইচ্ছা করেই বিষয়টা হালকা রাখেন; পার্টি এড়িয়ে যান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট করেন না, এমনকি কাছের মানুষদেরও আলাদা করে মনে করিয়ে দেন না। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, এটা নিছক স্বভাবগত বিষয় নয়। অনেক সময় এর পেছনে থাকে মানুষের ভাবনা, সম্পর্ক দেখার ধরন আর নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়ার নানা স্তর। যাঁরা জন্মদিন নিয়ে খুব একটা উৎসাহী নন, তাঁদের মধ্যে সাধারণত কিছু মিল পাওয়া যায়। মিলিয়ে দেখুন নিজের সঙ্গে।

জন্মদিন মানেই বাড়তি নজর; সবাই তাকিয়ে আছে আপনার দিকে, কেকের ওপরও আপনার নাম লেখা
জন্মদিন

১. আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে স্বচ্ছন্দ নন

জন্মদিন মানেই বাড়তি নজর; সবাই তাকিয়ে আছে আপনার দিকে, কেকের ওপরও আপনার নাম লেখা। যাঁরা জন্মদিন এড়িয়ে চলেন, তাঁদের অনেকেই জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত মনোযোগ পছন্দ করেন না। এর মানে তাঁরা মুখচোরা, লাজুক বা অন্তর্মুখী নন। তাঁদের অনেকেই আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু সবার দৃষ্টি নিজের ওপর পড়লে সেটা থেকে আনন্দ পান না।

২. বিশেষ দিনের চেয়ে দৈনন্দিন সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেন

এসব ব্যক্তির কাছে সম্পর্ক মানে বছরে এক দিন বড় আয়োজন নয়। বরং সারা বছরের ছোট ছোট যত্ন; খোঁজখবর নেওয়া, পাশে থাকা, কথা মনে রাখা—এসবই তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৩. উৎসব নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বেশ বাস্তববাদী

কেউ কেউ মনে করেন, জন্মদিন তো প্রতিবছরই আসে, এ নিয়ে এত আয়োজনের দরকার কী? এই মনোভাব সাধারণত বাস্তবমুখী চিন্তার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা উৎসব একেবারে অপছন্দ করেন না, তবে সেটাকে ‘অবশ্যই করতে হবে’—এমন নিয়মও মানেন না।

৪. অতিরিক্ত প্রশংসায় অস্বস্তি বোধ করেন

জন্মদিন মানেই প্রশংসার বন্যা—আপনি কত ভালো, কত প্রিয়। অনেকের কাছে এটা ভালো লাগলেও কেউ কেউ এতে অস্বস্তি বোধ করেন। তাঁরা সাধারণত নিঃশব্দ কৃতজ্ঞতা বা ব্যক্তিগতভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে বেশি পছন্দ করেন।

৫. ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে গুরুত্ব দেন

কারও জন্মদিন আপনি হঠাৎ অনেক দেরিতে জানতে পারলেন, এমন হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ ধরনের ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত তথ্য কাকে জানাবেন, সেটা সচেতনভাবে বেছে নেন।

অনেকের কাছে জন্মদিন মানেই উৎসব, তবে সবাই কিন্তু জন্মদিনকে নিজের ব্যক্তিগত উৎসব হিসেবে দেখেন না

৬. বয়স বাড়া নিয়ে জটিল অনুভূতি থাকতে পারে

সবার জন্য জন্মদিন আনন্দের নয়। অনেকের কাছে এটা সময় চলে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়—কী করা হলো, কী করা হলো না। বিশেষ করে সমাজের চাপ; এই বয়সে এটা করা উচিত ছিল—এই ভাবনাও জন্মদিন এড়িয়ে চলার কারণ হতে পারে।

৭. আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে আন্তরিকতা পছন্দ করেন

কেক কাটা, উপহার খোলা—সবকিছু অনেক সময় ‘স্ক্রিপ্টেড’ লাগে অনেকের কাছে। জন্মদিন কম গুরুত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা সাধারণত ছোট পরিসরে আন্তরিক সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন।

৮. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নীরবে

মজার ব্যাপার হলো, নিজের জন্মদিন গুরুত্ব না দিলেও তাঁরা অন্যের জন্মদিন ভুলে যান না। তবে বড় আয়োজন নয়; একটা আন্তরিক বার্তা ও উপহারেই তাঁদের যত্ন প্রকাশ পায়।

৯. সামাজিক চাপে সহজে প্রভাবিত হন না

‘সবাই করে’—এই যুক্তিতে তাঁরা কিছু করতে রাজি নন। জন্মদিন নিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তটা আসে ভেতরের বোধ থেকে, বাইরের প্রত্যাশা থেকে নয়।

১০. অন্য অর্জনও ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্‌যাপন করেন না

জন্মদিনের মতো চাকরিতে পদোন্নতি, ব্যক্তিগত সাফল্য—এসবও তাঁরা খুব চুপচাপ উদ্‌যাপন করেন। নিজের সন্তুষ্টিই তাঁদের কাছে যথেষ্ট।

জন্মদিন নিয়ে কারও কারও সিদ্ধান্তটা আসে ভেতরের বোধ থেকে, বাইরের প্রত্যাশা থেকে নয়

১১. মানসিকভাবে তুলনামূলক স্বনির্ভর

বছরে এক দিন সবাই তাঁদের ঘিরে না ধরলেও তাঁরা নিজেদের ভেতর থেকেই আনন্দ আর তৃপ্তি খুঁজে নিতে পারেন।

১২. আনন্দকে আলাদা চোখে দেখেন

জন্মদিন এড়িয়ে চলা মানেই আনন্দবিমুখ হওয়া নয়, বরং তাঁরা চান আনন্দটা স্বাভাবিকভাবে আসুক, ঢাকঢোল পিটিয়ে নয়।

১৩. নিতে নয়, দিতে বেশি স্বচ্ছন্দ

কেউ কেউ নিজের জন্মদিন উদ্‌যাপন এড়িয়ে যান। কারণ, তাঁরা গ্রহণের চেয়ে দেওয়ার জায়গায় বেশি স্বস্তি পান। কাছের মানুষের জন্য আয়োজন করা, খুশি করা—এসবেই তাঁরা বেশি তৃপ্তি পান।

১৪. সহজেই আলোটা অন্যের দিকে সরিয়ে দেন

নিজের দিকে নজর এলে কথা ঘুরিয়ে অন্যকে টেনে আনার একটা দক্ষতা তাঁদের থাকে। এতে দলগত পরিবেশও থাকে আরামদায়ক।

জন্মদিনে কেউ বড় পার্টিতে আনন্দ পান, কেউ আবার নীরবতায়

শেষ কথা

জন্মদিন উদ্‌যাপনে কোনটা ঠিক, কোনটা ঠিক নয়—এমন কোনো নিয়ম নেই। নিজের জন্মদিন আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্‌যাপনেও কোনো বাধা নেই। কেউ বড় পার্টিতে আনন্দ পান, কেউ আবার নীরবতায়।

তবে যাঁরা নিজের জন্মদিন নীরবেই পালন করতে চান, তাঁরা যে ‘রামগড়ুরের ছানা’, ‘অসামাজিক’ কিংবা ‘সিরিয়াস’—এমনটা ভাবার কারণ নেই। অনেক সময় তাঁরা শুধু আনন্দের সংজ্ঞাটাই একটু আলাদা করে নিয়েছেন।

কারও কাছে এক দিনের উৎসবের চেয়ে সারা বছরের ছোট ছোট মুহূর্তই বেশি অর্থবহ। আর সেটাও জীবনেরই আরেক রকম উদ্‌যাপন।

সূত্র: এক্সপার্ট এডিটর