বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ পর্বত মানাসলু অভিযানে পর্বতারোহী বাবর আলী
বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ পর্বত মানাসলু  অভিযানে পর্বতারোহী বাবর আলী

মনে মনে ঠিক করেছিলাম ক্রীড়া সাংবাদিক হব: এভারেস্টজয়ী বাবর আলী

কারও কৈশোরে, কারও বা তারুণ্যের শুরুতে প্রথম আলোর সঙ্গে পরিচয়। এই পত্রিকার পাতায় রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, দেখেছেন তাঁদের মতো হওয়ার স্বপ্ন। এখন তাঁরাই আবার পত্রিকায় পাতায় অন্যদের স্বপ্ন দেখান। প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে এমন চার রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের গল্প প্রকাশ করেছে শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’। এখানে পড়ুন এভারেস্টজয়ী বাবর আলীর অভিজ্ঞতা।

২০০০ সাল থেকে বাড়িতে প্রথম আলো আসতে শুরু করে। আমি তখন স্কুলে পড়ি। কিছুদিন পর অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, এই পত্রিকা পড়তে পড়তে আমার ‘জীবনের লক্ষ্য’ বদলে গেছে! ছোটবেলা থেকেই দেশ-বিদেশ ঘোরার সুপ্ত ইচ্ছা ছিল। প্রথম আলোর ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রের লেখা সেটাকে যেন আরও উসকে দিল। খেলা নিয়ে প্রতিবেদন এমন স্বাদু গদ্যের হতে পারে, জানা ছিল না। খেলা বাদে বাকি সময়টুকু নানা জায়গা ঘুরে, ইতিহাস খুঁড়ে উনি পাঠকের জন্য বের করে আনছিলেন নানা মণিমাণিক্য। ক্রীড়া সাংবাদিকের ভেতরে থাকা ভ্রমণপিপাসু মনটা পাঠকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এল। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম ক্রীড়া সাংবাদিক হতে হবে। জীবনের পাকেচক্রে সেটা না হলেও বিভিন্ন অফ-ট্র্যাক ক্রীড়ার সঙ্গে পরবর্তী জীবনে যুক্ত হলাম।

এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী বাবর আলী

সেই শৈশব থেকেই প্রথম আলো পত্রিকা হাতে এলেই সবার আগে ক্রোড়পত্রের খোঁজ করতাম। পছন্দের শীর্ষে ছিল ‘ছুটির দিনে’, ‘স্টেডিয়াম’, ‘রস+আলো’, ‘নকশা’, ‘স্বপ্ন নিয়ে’, ‘আনন্দ’। শৈশব-কৈশোরের নানা স্তরে থাকা আমরা তিন ভাই-বোনের পত্রিকা নিয়ে সে কী কাড়াকাড়ি! ‘রস+আলো’ আর ‘ছুটির দিনে’ নিয়েই মূলত হুটোপুটি। পরে কয়েকটি ক্রোড়পত্র বন্ধ হয়ে গেলে মনটা ভেঙেও গেছে। ‘ছুটির দিনে’র মূল প্রতিবেদনে সারা দেশ ছেঁকে পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে থাকা সত্যিকারের নায়কদের জীবনের গল্প ছাপা হতো। অবাক বিস্ময়ে কত লোকের শত জীবন পড়েছি। এরা কেউ বাঁধা পথের পথিক নয়। ভাবতাম, আমার জীবনও যেন এদের মতো অন্তহীন কর্মযজ্ঞে ভরা থাকে। কাওসার আহমেদ চৌধুরীর ‘আপনার রাশিফল’–এ তাঁর করা ভবিষ্যদ্বাণী সারা সপ্তাহজুড়ে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম! ‘নকশা’র পাতায় আঁতিপাঁতি খুঁজে বেড়াতাম বেড়ানো নিয়ে রাকিব কিশোরের লেখা। খুব একচোট হেসে নিতাম শাহরিয়ারের নিয়মিত কমিক স্ট্রিপ ‘বেসিক আলী’ পড়ে। এভাবেই প্রথম আলোর নানা ক্রোড়পত্রে মজে কৈশোরের সোনালি সময়টা কেটেছে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।

কালো মোটা হরফে আমার নাম প্রথমবারের মতো প্রথম আলোতে ছাপা হয় ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতায়। এর ঠিক ওপরেই আমার তোলা ছবি। তখন আমি শখের বশে ছবি তুলি। আলোকচিত্র কোর্সের অংশ হিসেবে ফটো ওয়াকে গিয়ে তোলা ছবি মেইল করেছিলাম। কালো হরফে নিজের নাম দেখে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। কী যে আনন্দ হয়েছিল সেদিন! মাঝে বার কয়েক ‘রস+আলো’তেও ছাপা হলো লেখা। হিউমার আর সূক্ষ্ম বুদ্ধির ছটায় ভরপুর এমন একটা ক্রোড়পত্রে লেখা ছাপা হওয়াটা বন্ধুমহলেও এনে দিয়েছিল সমীহ। নানা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস করার সূত্রে সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করলেও আমার রসবোধ যে একেবারে শুকিয়ে কাঠখোট্টা হয়ে যায়নি, সেটা প্রমাণ করতে এখনো ‘রস+আলো’তে ছাপা হওয়া লেখার কথা উল্লেখ করি!

শ্রীলঙ্কার উত্তরের বিন্দু ‘পয়েন্ট পেড্রো’তে বাবর আলী

সময়ের চাকা গড়িয়ে চলে। যে ‘ছুটির দিনে’তে ছাপা হওয়া মানুষের গল্প মুগ্ধ বিস্ময়ে পড়তাম, সেই ‘ছুটির দিনে’তেই একদিন আমাকে নিয়ে ছাপা হলো বড়সড় একটা প্রতিবেদন। অবাক ভালো লাগায় ছেয়ে গেল মন। নানা সময়ে লিখেছিও এই ক্রোড়পত্রের জন্য। এভারেস্ট, লোৎসে, অন্নপূর্ণা-১ কিংবা মানাসলু—প্রতিটি আট হাজার মিটার অভিযানের আগে, চলাকালে বা পরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনেক প্রতিবেদন ছাপা হলেও ফিরে এসে আমার অভিজ্ঞতা প্রথম লিখেছি ‘ছুটির দিনে’র জন্যই। প্রতি বাংলা নববর্ষে ‘ছুটির দিনে’ তার পাঠকদের সামনে নানা ক্ষেত্রের প্রতিভাবান তরুণদের হাজির করে। ১৪৩২ সনের আয়োজনে দেশের সাত তরুণ-তরুণীর ছোট্ট তালিকায় নিজেকে দেখে বিস্মিত হয়েছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি। গত বছর পদব্রজে শ্রীলঙ্কার এমাথা থেকে ওমাথা ভ্রমণ করেছি। সেই গল্পও হাঁটা চলাকালীনই ধারাবাহিক লিখে গেছি প্রথম আলো অনলাইনের পাঠকদের জন্য।

এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার সুবাদে প্রথম আলোর সৌজন্যে সংবর্ধনা পেয়েছিলাম। একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কৃতীদের শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগও পেয়েছি পত্রিকাটির আমন্ত্রণে। এখনো পত্রিকা হাতে এলে আঁতিপাঁতি করে খুঁজি আমার অন্যতম প্রিয় লেখক আলতাফ পারভেজের কলাম। পাঠক হিসেবে এই পৃথিবীর নানা অচেনা বিষয়ের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে প্রথম আলো। প্রথম দিন থেকে আজ অবধি বর্ণনাতীত আনন্দে ভরা সেই পরিচয়।