
কারও কৈশোরে, কারও বা তারুণ্যের শুরুতে প্রথম আলোর সঙ্গে পরিচয়। এই পত্রিকার পাতায় রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, দেখেছেন তাঁদের মতো হওয়ার স্বপ্ন। এখন তাঁরাই আবার পত্রিকায় পাতায় অন্যদের স্বপ্ন দেখান। প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে এমন চার রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের গল্প প্রকাশ করেছে শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’। এখানে পড়ুন আয়রনম্যান মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাতের অভিজ্ঞতা।
সেই অষ্টম শ্রেণি থেকে প্রথম আলোর নিয়মিত পাঠক আমি। বাসার কাছেই ছিল একটি ওষুধের দোকান। সেখানে পত্রিকা রাখা হতো। স্কুলে যাওয়া–আসার পথে সেই দোকানে বসে পত্রিকা পড়তাম।
কলেজে ওঠার পর প্রথম আলোতে একদিন বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার খবর পড়ি। পড়ে রোমাঞ্চিত হই। চিন্তা করি, কীভাবে সম্ভব সাগরে সাঁতার কাটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও সেটি মাথায় ছিল। ২০১৩ সালে সাঁতারু লিপটন সরকার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পার হওয়ার ইচ্ছার কথা তাঁকে জানালাম। তিনি উৎসাহ দিলেন। শুরু হলো অনুশীলন। ২০১৫ সালে সাঁতরে পাড়ি দিলাম ওই চ্যানেল। সেই খবর ছাপল প্রথম আলো। কাছের-দূরের, কম পরিচিত-বেশি পরিচিত—সবাই খবরটা জেনে শুভেচ্ছা জানালেন। অনেক উৎসাহ পেলাম।
আমার রোমাঞ্চকর যাত্রা অব্যাহত থাকল। ২০১৭ সালে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার মিশনে নামলাম। উদ্দেশ্য ছিল ‘দৌড়ের মাধ্যমে সুস্থতা’র বার্তা ছড়ানো। ২০ দিনের সেই যাত্রার গল্প ছাপা হলো ‘ছুটির দিনে’তে। শিরোনাম আজও মনে আছে, ‘দৌড়ে দৌড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া’। খবরটি দেখে সেই দিন এতটা নার্ভাস লাগছিল যে সারা দিন আর কোনো কাজ করতে পারিনি।
২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় আয়রনম্যান, এরপর ২০১৯ সালে জার্মানিতে আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম, সে খবরও ছাপল প্রথম আলো। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর উপহার পেলাম ২০২১ সালে। প্রথম আলোর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হলো আমার স্পোর্টস জার্নি নিয়েই—আয়রনম্যান। শুটিংয়ের সময়ও বুঝতে পারিনি আমার জীবনে কী ঘটতে চলেছে। সেটি টের পেলাম প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুধী সমাবেশে আমন্ত্রিত হয়ে।
সেই অনুষ্ঠানে মঞ্চে এলেন সম্পাদক মতিউর রহমান। করোনা অতিমারি দিয়ে বক্তৃতা শুরু করলেন। বললেন, জীবনে তো বাধা আসবেই, বাধা এলে পেরিয়ে যেতে হয়। সেই গল্পের মধ্যেই সবাইকে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখার আমন্ত্রণ জানান তিনি। পর্দায় নিজেকে দেখে নিজেই বিস্ময়ে হতবাক হই। নিজের জার্নিকে পেছন ফিরে দেখে নিজেই যেন অনুপ্রেরণা সঞ্চয় করলাম।
প্রামাণ্যচিত্র শেষ হলো, মতিউর রহমান বললেন, ‘আয়রনম্যান আরাফাত ইজ দেয়ার, প্লিজ, স্ট্যান্ডআপ আরাফাত।’
আমি দাঁড়ালাম। কনফারেন্স রুমের চারপাশ থেকে করতালির শব্দ শুনছিলাম। একসময় দেখি, একে একে সবাই উঠে দাঁড়ালেন, আবার করতালির মাধ্যমে আমাকে অভিবাদন জানালেন। আমার কাছে সেই ঘটনা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
আয়রনম্যান প্রামাণ্যচিত্র প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে আপলোড করার পর লাখ লাখ মানুষ দেখলেন। কেউ বললেন, কেঁদেছেন। কেউ বললেন, হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। কেউ আরও এগিয়ে যেতে শুভকামনা জানালেন। সেই থেকে আমার বারবার মনে হতে থাকল, আয়রনম্যানের স্বীকৃতি আসলে আমাকে প্রথম আলো দিয়েছে। এখনো প্রতিটি অভিযানেই প্রথম আলোকে পাশে পাই।
ধন্যবাদ, প্রথম আলো।