শীত পড়ছে, অনেকের মতো আপনিও হয়তো ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তবে পরিবারে যদি নবজাতক ও শিশু থাকে, তাহলে ঘুরতে যাওয়ার আগে বেশ কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি।
শিশুসন্তানের সঙ্গে আপনার ভ্রমণ কতটা ভালো হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনার ওপর। প্রত্যেকের পছন্দ–অপছন্দ এক রকম নয়। ভ্রমণে যাওয়ার আগে কীভাবে যাচ্ছেন, কখন যাচ্ছেন, কোথায় কোথায় থামছেন—এসব বিষয় মাথায় রাখা বেশ জরুরি।
যেহেতু সন্তানের সুস্থতা আর আনন্দই আপনাদের মূল লক্ষ্য, সেহেতু তাকে কেন্দ্র করেই পুরো পরিকল্পনা সাজান। তার সুবিধামতো সময়ে ভ্রমণ করুন, বাস কিংবা প্লেন বেছে নিন। এতে সন্তানের জন্য যাত্রাপথ সহজ হবে।
শিশুরা নিজেদের দৈনন্দিন রুটিনে বদল দেখতে চায় না। প্রতিদিন যেভাবে চলে, ঠিক সেভাবেই নিয়ম মেনে তাকে চালানোর চেষ্টা করুন। বিশেষ করে তিন বেলা খাবার, ঘুমের সময়সূচি ঠিকঠাক রাখুন।
এ ছাড়া শিশুদের পরিচিত ও পছন্দের জিনিস যাতে সঙ্গে থাকে, তা খেয়াল রাখবেন। প্রিয় খেলনা বা উপকরণ তাকে শান্ত করতে পারে মুহূর্তেই। শিশুদের যতটা সম্ভব আরামদায়ক পোশাকে রাখার চেষ্টা করুন। এতে তাদের মুড যেমন ভালো থাকবে, সহজে বিরক্তও হবে না।
ভ্রমণে গেলে বড়দের পছন্দসই জামাকাপড় নিলেই হয়। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে কেবল তাদের পছন্দসই কাপড় নিলে হয় না। বরং সঙ্গে নিন শীত উপযোগী আরামদায়ক কাপড়। যাতে তার ঠান্ডা লেগে না যায় কিংবা অতিরিক্ত গরম বা অস্বস্তিও না হয়।
প্যাকিং করার ক্ষেত্রে ডায়াপার, ওয়াইপ, অতিরিক্ত পোশাক, খাওয়ানোর সরঞ্জাম নিতে হবে। যাতে যেকোনো প্রয়োজনে তা হাতের কাছে পাওয়া যায়। সঙ্গে স্বাস্থ্যকর ছোট ছোট খাবার; যেমন আপেল, পেয়ারা–জাতীয় ফলমূল রাখতে হবে। যাতে ক্ষুধা লাগলেই হাতের কাছে কিছু থাকে।
শীতে শিশুরা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। সঙ্গে ত্বকের নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালু থাকার কারণেই মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টায় কিছুটা সচেতন থাকতে হবে।
শিশুদের ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালু থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু শীতে এ রোগগুলো বেশি দেখা দেয়, তাই যতটা সম্ভব শিশুদের জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় কম নেওয়াই ভালো।
শিশুদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা হওয়া উচিত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় শিশুদের দূরে রাখা উচিত। শিশুদের মুখে মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস করাতে হবে।
শিশুর এ ধরনের সমস্যায় আদা, লেবু চা, গরম পানিতে গড়গড়া, মধু, তুলসীপাতার রস প্রভৃতি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
শিশুদের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উলের পোশাক ভালো। তবে কোনো কোনো শিশুর উলের ক্ষুদ্র লোমে অ্যালার্জি হতে পারে। সুতি কাপড় পরিয়ে তার ওপর উলের পোশাক পরানোই ভালো। পোশাকটি যেন নরম কাপড়ের হয়।
হালকা শীতে শিশুদের গরম পোশাক খুব বেশি গরমকাপড়ের হওয়া উচিত নয়। কারণ, খুব বেশি গরমকাপড় পরালে গরমে ঘেমে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
শিশুদের ত্বক বেশি সংবেদনশীল। তাই তাদের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। শিশুর মুখে এবং সারা শরীরে বেবি লোশন, বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
এত কিছুর পরও যে ভ্রমণের সময় সব মনমতো হবে, তা কিন্তু নয়। বরং সন্তানকে নিয়ে ভ্রমণ করা সব সময়ই রোমাঞ্চকর। কারণ, যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে আপনার সঙ্গে। কিন্তু এটাও মনে রাখবেন, সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে যে স্মৃতি আপনি তৈরি করছেন, তা মনে থাকবে আজীবন। সেই স্মৃতি তৈরি করতে তো একটু–আধটু কষ্ট পোহাতে হবেই।
সূত্র: দ্য বেবি অ্যাবরোড