ছুটি কক্সবাজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ
ছুটি কক্সবাজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ

দেশের রিসোর্টগুলোতে কেন খরচ বেশি? যা বললেন ছুটি কক্সবাজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান

২০১২ সালে গাজীপুরে রিসোর্ট চালুর মাধ্যমে পর্যটন খাতে আসা। এরপর গড়ে তুলেছেন আরও কয়েকটি রিসোর্ট। চলমান প্রকল্পসহ দেশের পর্যটন খাত নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ছুটি কক্সবাজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সজীব মিয়া

প্রশ্ন

ছুটি রিসোর্টের শুরুটা কীভাবে?

মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ: গ্রামীণফোন কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে আবাসন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এফএনএফ প্রোপার্টিজ লিমিটেড। সেখান থেকে আমরা জয়দেবপুরে এফএনএফ রিসোর্ট শুরু করি। বর্তমানে যা ছুটি রিসোর্ট গাজীপুর নামে পরিচিত। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে।

প্রশ্ন

রিসোর্ট দিয়ে শুরু করলেন কেন?

মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ: আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শহরের বাইরে পরিবার নিয়ে মানুষ যেন প্রকৃতির মধ্যে আরামদায়ক সময় কাটাতে পারেন, সেই সুযোগ করে দেওয়া। পর্যটন খাত বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা—আমরা বিশ্বাস করি, মানসম্পন্ন রিসোর্টের মাধ্যমে শুধু ব্যবসা নয়, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। সেই ভাবনা থেকেই আমরা পর্যটন ব্যবসায় এসেছি।

প্রশ্ন

পরে তো আপনারা আরও রিসোর্ট করেছেন?

মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ: বর্তমানে আমাদের তিনটি রিসোর্ট চালু আছে। ছুটি রিসোর্ট গাজীপুরের পাশাপাশি রাজধানীর কাছেই পূর্বাচল ৩০০ ফিটে ছুটি রিসোর্ট পূর্বাচল আর মেরিন ড্রাইভে ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার। এটি নির্মাণাধীন পাঁচ তারকা রিসোর্ট।

প্রশ্ন

আনাচকানাচে এখন রিসোর্ট গড়ে উঠছে, মানুষও যাচ্ছে...

মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ: আমরা দেখেছি ১০ বছরে পর্যটন খাতের চাহিদা বহুগুণে বেড়েছে। তবে মান ও সেবার জায়গায় ধারাবাহিকতা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে মানুষ শুধু ঘুরতে আসত, এখন তারা চায় সেফটি–সিকিউরিটি এবং কোয়ালিটি, যা আন্তর্জাতিক মানের হসপিটালিটি হতে হবে। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা সব সময় উন্নত সেবা, নিরাপত্তা ও টেকসই বিনিয়োগের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

ছুটি কক্সবাজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ
প্রশ্ন

ভ্রমণকারীরা অভিযোগ করেন দেশের রিসোর্টগুলোতে খরচ বেশি।

মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ: বাংলাদেশে এখনো হোটেল ও রিসোর্ট খাতকে টেকসইভাবে গড়ে তুলতে অনেক খরচ হয়—বিদ্যুৎ, ট্যাক্স, আমদানিনির্ভর সরঞ্জাম, দক্ষ জনবল, প্রশিক্ষণ সবকিছুতেই ব্যয় বেশি। প্রতিবেশী দেশগুলোতে পর্যটন খাত সরকারিভাবে ভর্তুকি ও নানা রকম প্রণোদনা পায়, তাই তাদের সেবার দাম তুলনামূলক কম হয়। আমরা বিশ্বাস করি, যদি সরকারি সহযোগিতা আরও বাড়ে, তাহলে দাম কমানো সম্ভব হবে এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে বাংলাদেশ হবে আরও প্রতিযোগিতামূলক।

প্রশ্ন

আপনারা কক্সবাজারের রিসোর্টে শেয়ার মালিকানার সুযোগ দিচ্ছেন, বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?

মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ: হ্যাঁ, আমরা দেশের প্রথম দিককার রিসোর্ট, যারা শেয়ার মালিকানা মডেল চালু করেছি। এর মাধ্যমে ক্রেতা একটি নির্দিষ্ট শেয়ার কিনে আজীবন মালিকানা পান—বার্ষিক লভ্যাংশ, রিসোর্টে ফ্রি বা ডিসকাউন্টেড থাকার সুবিধা, শেয়ার পুনর্বিক্রয়ের স্বাধীনতা। এটা মূলত লাইফস্টাইল ও বিনিয়োগের সমন্বয়। একদিকে নিজের ভ্রমণের সুযোগ, অন্যদিকে প্যাসিভ ইনকাম।

প্রশ্ন

হোটেল–রিসোর্টে বিনিয়োগ করে শেয়ার না পাওয়ার অভিযোগ আসে। নিশ্চয়তা কীভাবে দিচ্ছেন?

মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ: আমরা প্রতিটি শেয়ার সাফকবলা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে প্রদান করি, যা একটি বৈধ দলিল। ফলে বিনিয়োগকারীর আইনি মালিকানা নিশ্চিত থাকে। তা ছাড়া আমাদের অডিটেড ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট ও বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার মিটিং হয়, যেখানে সব তথ্য প্রকাশ্যে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন

২৭ সেপ্টেম্বর পর্যটন দিবস, দেশের সামগ্রিক পর্যটন খাত সম্পর্কে কিছু বলবেন?

মুহাম্মদ তারিক মাহমুদ: বাংলাদেশে পর্যটনের সম্ভাবনা অপরিসীম। সুন্দরবন, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, পাহাড়ি অঞ্চল—সব মিলিয়ে অনন্য বৈচিত্র্য রয়েছে। তবে মানসম্মত অবকাঠামো, দক্ষ গাইড, আন্তর্জাতিক প্রচারণা—এসব বাড়াতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগ একসঙ্গে হলে পর্যটন খাত দেশের সবচেয়ে বড় আয়ের খাতে পরিণত হতে পারে।