২০২৫ সাল বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের জন্য হয়ে থাকবে বিশেষভাবে স্মরণীয়। এ বছর এভারেস্টসহ বিশ্বের সর্বোচ্চ তিনটি পর্বতে বাংলাদেশের পতাকা উড়েছে। পাশাপাশি হিমালয় পর্বতমালার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গও স্পর্শ করেছেন দেশের অভিযাত্রীরা। একক উদ্যোগ থেকে দলবদ্ধ অভিযান—সব মিলিয়েই বছরজুড়ে পর্বতারোহণে সক্রিয় ছিল বাংলাদেশ। বছরের শেষে দাঁড়িয়ে এমনই কিছু উল্লেখযোগ্য অভিযানের দিকে ফিরে তাকানো যাক। গ্রন্থনা করেছেন সজীব মিয়া

হিমালয় পর্বতমালার ৮ হাজার ৯১ মিটার উচ্চতার পর্বত অন্নপূর্ণা-১। উচ্চতার দিক থেকে বিশ্বে দশম হলেও মৃত্যুঝুঁকির দিক থেকে এটি অন্যতম ভয়ংকর পর্বত। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই দুর্গম শৃঙ্গ জয় করেন বাবর আলী। পেশায় চিকিৎসক এই পর্বতারোহী চট্টগ্রামভিত্তিক পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক। এর আগে একই অভিযানে তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ লোৎসে শৃঙ্গ জয় করে ইতিহাস গড়েছিলেন।
২০২৫ সালের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী অভিযানগুলোর একটি ছিল ইকরামুল হাসানের ‘সি টু সামিট’। ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে পায়ে হাঁটা শুরু করেন তিনি। ভারত হয়ে ৩১ মার্চ নেপালে প্রবেশ করে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ২৯ এপ্রিল পৌঁছান এভারেস্ট বেজক্যাম্পে।
দীর্ঘ প্রস্তুতি ও অভিযোজনের পর ১৯ মে নেপালের সময় সকাল সাড়ে ছয়টায় তিনি পৌঁছে যান বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। প্রায় ৮৪ দিনের এই অভিযানে তিনি হেঁটেছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ, যা বাংলাদেশি পর্বতারোহণের ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ।
২০১১ সালে প্রথমবারের মতো মানাসলু জয় করেছিলেন এম এম মুহিত। ১৪ বছর পর আবারও এই শৃঙ্গে উড়ল বাংলাদেশের পতাকা।
২৫ সেপ্টেম্বর ভোরে ৮ হাজার ১৬৩ মিটার উঁচু মানাসলু পর্বতের চূড়ায় ওঠেন তৌফিক আহমেদ তমাল। পরদিন একই শৃঙ্গে পৌঁছান তানভীর আহমেদ ও বাবর আলী। এই দুজনই ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সদস্য।
এই অভিযানের নাম ছিল ‘মানাসলু অ্যাসেন্ট: ভার্টিক্যাল ডুয়ো’। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই মানাসলু জয় করে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেন বাবর আলী। অন্যদিকে তমাল ও তানভীরের এটি ছিল প্রথম ‘আট হাজারি’ শৃঙ্গ।
নারীদের স্তন ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ৭ হাজার ১২৬ মিটার উঁচু হিমলুং হিমাল অভিযানে অংশ নেন নুরুননাহার নিম্নি। ১৫ দিনের অভিযানে ৩ নভেম্বর তিনি চূড়ায় পৌঁছান।
বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের (বিএমটিসি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই অভিযানে প্রথমবারের মতো ৭ হাজার মিটারের পর্বত জয় করেন নিম্নি। সামনে এভারেস্ট অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
২০২৫ সালে বাংলাদেশি পর্বতারোহীরা শুধু আট হাজারি শৃঙ্গেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। ৫ থেকে ৭ হাজার মিটার উচ্চতার বহু পর্বতেও সফল আরোহণ হয়েছে। কেউ গেছেন একা, কেউ দল বেঁধে—বেশির ভাগ অভিযানই ছিল প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে।
পর্বতারোহী প্রবল বর্মণ শুরু করেন ‘সেভেন সামিট’ অভিযান। প্রথম ধাপে ৯ জুন আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো জয় করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিন্ময় সাহা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ১০ থেকে ২১ জনের দল নিয়ে বাংলাদেশিরা কিলিমানজারোতে অভিযান চালান।
বছরজুড়েই হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গে ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের পদচারণ।
৪ নভেম্বর আহসানুজ্জামান তৌকির জয় করেন ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম। ২০ নভেম্বর ৬ হাজার ৪৭৬ মিটার উঁচু মেরা পিকে পৌঁছান ইমতিয়াজ ইলাহী ও শাহনাজ আক্তার।
নারী পর্বতারোহীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। ইউনেসকোর স্বীকৃত ‘সুলতানাজ ড্রিম’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আয়োজিত ‘সুলতানাজ ড্রিম আনবাউন্ড’ অভিযানে এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের নেতৃত্বে তিন নারী ১৫ ডিসেম্বর ৬ হাজার ৫৯ মিটার উঁচু চুলু ফার ইস্ট শৃঙ্গ জয় করেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০২৫ সাল বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের জন্য শিখর জয়ের বছর