
‘ডাই হার্ড’, ‘দ্য সিক্সথ সেন্স’, ‘দ্য ফিফথ এলিমেন্টস’, ‘পাল্প ফিকশন’-এর মতো আইকনিক সব সিনেমায় অভিনয় করে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন মার্কিন অভিনেতা ব্রুস উইলিস। ৭০ বছর বয়সী এই অভিনেতা এখন অভিনয় থেকে দূরে। অবসর নেওয়ার পেছনে অবশ্য আছে একটি ভয়াবহ কারণ।
ব্রুস উইলিস ২০২২ সালে আক্রান্ত হন অ্যাফেসিয়া রোগে। এটি এমন একটি রোগ, যা মানুষের যোগাযোগক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। কমে যেতে থাকে বাক্শক্তি। অ্যাফেসিয়া ক্রমে বাড়তে বাড়তে ব্রুসকে এখন মারাত্মক এক সমস্যার মুখে ফেলে দিয়েছে।
ব্রুস এখন আর কথা বলতে বা পড়তে সক্ষম নন এবং হাঁটতে গেলেও ভয়ানক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ‘ইনসাইড স্টোরি’ এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এমনটাই জানিয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বর্তমানে ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া বা এফটিডিতে আক্রান্ত।
উইলিসের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ব্রুস এখন পুরোপুরি পরিবারের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তিনি আর কারও সঙ্গে কথা বলতে কিংবা নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। এমনকি নিজের অতীত সিনেমা বা জীবন সম্পর্কেও কোনো স্মৃতি নেই তাঁর।
গত এপ্রিল মাসে ব্রুস উইলিসের পরিবার একটি বিবৃতি দেয়। তাতে জানানো হয়, রোগটি ধীরে ধীরে এগোলেও প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখা ও ব্রুসের পাশে সব সময় থাকার অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরা হয় এবং ভক্তদের কাছে সমর্থন ও গোপনীয়তা বজায় রাখার অনুরোধও জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই অভিনেতা পুরোপুরি নীরব হয়ে পড়েছেন এবং তিনি কিছু পড়তেও পারছেন না। এ ছাড়া তাঁর চলাফেরার সক্ষমতা কমে গেছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ করা হয়।
ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া বা এফটিডি এমন একটি রোগ, যাতে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল ও টেম্পোরাল লোব ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়, যার ফলে ভাষা, আচরণ, আবেগ ও চলাফেরার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। রোগটি সাধারণত ৪৫–৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে দেখা যায় এবং প্রাথমিক অবস্থায় অনেকে একে আলঝেইমারস ডিজিজ কিংবা মানসিক রোগ হিসেবে ভুল ধারণা করেন।
ডিমেনশিয়ার রোগীদের মধ্যে ১০–২০ শতাংশ এফটিডিতে আক্রান্ত হন। প্রাথমিক লক্ষণ ও অস্বাভাবিক আচরণ দেখে অনেকে এফটিডির ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না। স্মৃতিভ্রান্তি সাধারণত অনেক পরের ধাপে এসে দেখা যায়।
এফটিডির প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকতে পারে—
কথা বলার সময় সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে অসুবিধা।
হুটহাট মেজাজের পরিবর্তন।
হঠাৎ হঠাৎ অসামাজিক বা অস্বাভাবিক আচরণ।
পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে থাকলে একসময় আক্রান্ত ব্যক্তি কথা বলা, পড়া বা লেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন।
পেশির নিয়ন্ত্রণ কমে যেতে থাকে।
স্বাভাবিক চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়তে হয়।
এমনকি খাবার গিলতেও কষ্ট হয়।
প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয়।
মায়ো ক্লিনিকের মতে, যখন মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল ও টেম্পোরাল লোবের কিছু অংশ সংকুচিত হয় (যা অ্যাট্রফি নামে পরিচিত), তখন এফটিডির লক্ষণ প্রকাশ পায়। শরীরের কোন অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে উপসর্গগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। কেউ কেউ আবেগের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, কেউ আবার সামাজিকতার বাইরে চলে যান। এ ছাড়া অনেকে নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে পুরো বাক্য সম্পন্ন করতে পারেন না। কারও কারও কথা বলার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে যায়।
ব্রুস উইলিস রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর তা বিশ্বব্যাপী আলোচনায় উঠে এসেছে। তুলনামূলকভাবে অজানা এই ডিমেনশিয়া রোগ সম্পর্কে মানুষ আরও জানতে চাইছেন। চিকিৎসকেরা মনে করেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা; স্পিচ ও ফিজিওথেরাপি এবং শক্তিশালী মানসিক ও পারিবারিক সহায়তা এই রোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস, ইনসাইড স্টোরি