
সন্ধ্যায় আমরা প্রায়ই মুঠোফোন স্ক্রল করি, ওটিটিতে সিনেমা দেখতে বসি কিংবা টিভির পর্দায় হারিয়ে যাই। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্করা তাঁদের জাগ্রত সময়ের এক-তৃতীয়াংশ, গড়ে ৫ ঘণ্টার বেশি টিভি ও অনলাইনে ভিডিও দেখে কাটান। কিন্তু সন্ধ্যা হতে পারে মস্তিষ্কের বিশ্রাম, মনের আনন্দের সময়। ফোন বন্ধ রাখতে হবে না, টিভিও সরিয়ে ফেলতে হবে না; শুধু বেছে নিন এমন কিছু কাজ, যা মস্তিষ্ককে তাজা রাখে, মনটাকে ভরিয়ে দেয়। এখানে ১০টি কাজ করার পরামর্শ রইল, যা আপনার সন্ধ্যাকে করে তুলবে প্রাণবন্ত ও অর্থপূর্ণ
সন্ধ্যায় কয়েক মিনিট ব্যয় করুন পরের দিনের পরিকল্পনায়। ডেস্ক গোছান, কাজের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখুন অথবা ৫ মিনিটের জন্য পরদিনের কাজের তালিকা তৈরি করুন। ফোন বেডরুমের বাইরে রাখার অভ্যাস করুন। এসব ছোট পদক্ষেপ আগামী দিনের বিশৃঙ্খলা দূর করবে, মস্তিষ্ককে শান্ত ও স্বচ্ছ রাখবে।
রিয়েলিটি শো, ফোনে পরচর্চা বা নিম্নমানের কনটেন্ট মস্তিষ্কের জন্য জাঙ্ক ফুডের মতো। এর বদলে একটি ভালো সিনেমা, তথ্যচিত্র বা ভালো মানের ইউটিউব কনটেন্ট বেছে নিন। এমন কিছু দেখুন, যা মস্তিষ্ককে ক্লান্ত না করে উদ্দীপ্ত করে।
কাজের পর সন্ধ্যায় আমরা ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা টিভিতে ডুবে যাই। মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়ার বদলে আমরা আরও তথ্য দিয়ে তাকে ভারাক্রান্ত করি। ডিভাইস পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে না, তবে অবসর সময়কে প্রাধান্য দিন। এটি মস্তিষ্কের শক্তি ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনে।
পরিবারের সঙ্গে একটি সন্ধ্যা দাবা খেলে কাটান। লুডুও খেলতে পারেন। এ ধরনের খেলা সম্পর্ককে গভীর করে, সন্ধ্যাকে আনন্দময় করে। পরিবারের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকা যায় বলে পারিবারিক সময়টাও মধুর হয়। বন্ধন হয় সুদৃঢ়।
গবেষণায় দেখা গেছে, টেক্সটিং বা খুদে বার্তা চালাচালি সম্পর্কের গভীরতা কমায়। তাই সন্ধ্যার পর অবসরে খুদে বার্তা চালাচালিতে সময় নষ্ট না করে, বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে ফোন করুন। সবচেয়ে ভালো হয় দেখা করে কথা বলতে পারলে। এটি সম্পর্ককে মজবুত ও সুখী করে, হৃদয়কে উষ্ণ রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফিকশন ঘরানার বই পড়লে ৬৮ শতাংশ মানসিক চাপ কমে। পড়া কেবল জ্ঞানের জন্য নয়, আনন্দেরও। ভ্রমণকাহিনি পড়তে পড়তে গড়িয়ে যাক আপনার সন্ধ্যা।
হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে তাৎক্ষণিক উত্তর দেওয়ার প্রত্যাশা থেকে মুক্ত হন। সত্যিকারের বন্ধুরা আপনার ব্যক্তিগত সময়ের প্রয়োজন বুঝবেন। এটি মস্তিষ্ককে মুক্ত ও শান্ত রাখে। অফিসের চাপও মাথায় করে বাড়িতে বয়ে আনবেন না। অফিসের বার্তা হলেও চেষ্টা করুন মিনিটে মিনিটে উত্তর না দিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পর ফোন চেক করতে।
বেডরুম শুধু ঘুম, প্রশান্তি ও ঘনিষ্ঠতার জন্য। টিভি, ল্যাপটপ বা কাজের জিনিস এই ঘর থেকে সরিয়ে রাখুন। এতে ঘুমের গুণগত মান বাড়ে। মস্তিষ্ককে শান্ত হতে সাহায্য করে।
দিনের অন্তত একটি চিন্তা বা আনন্দের মুহূর্ত লিখে রাখুন। অভ্যাসটি সহজ, কিন্তু জীবনের ছোট ছোট সুখ ধরে রাখতে সাহায্য করে। লেখার অভ্যাস মস্তিষ্ককে শান্ত করে, হৃদয়কে আলোয় ভরায়।
সন্ধ্যায় বেড়ানো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সবচেয়ে ভালো হয়, একটু হেঁটে আসুন। সন্ধ্যার আলোয় চারপাশটা দেখুন। জিমেও যেতে পারেন সন্ধ্যায়। এসব কাজ আপনার সন্ধ্যাকে উৎপাদনশীল, আনন্দময় ও মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করবে। মস্তিষ্ক পরিষ্কার থাকবে, হৃদয় হাসবে, আর জীবন নতুন রঙে সেজে উঠবে।
সূত্র: মিডিয়াম