ক্ষমতা মানেই শুধু টাকাপয়সা, উঁচু পদ বা শারীরিক শক্তি নয়। সত্যিকার ক্ষমতা আসে অন্যের মন বুঝে, সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলার দক্ষতা থেকে। আর এই ক্ষমতা গড়ে তুলতে মনোবিজ্ঞান হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় সহায়।
কখন কীভাবে কথা বলবেন, কার সামনে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করবেন কিংবা কীভাবে কারও আস্থা অর্জন করবেন—এসব জায়গায় একটু বুদ্ধি খাটালেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন আরও আত্মবিশ্বাসী ও প্রভাবশালী।
মনোবিজ্ঞানের শক্তি কাজে লাগিয়ে বাড়াতে পারেন আপনার আত্মবিশ্বাস ও প্রভাব। শরীরী ভাষা, শব্দ নির্বাচনের কৌশল ও সময়জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আরও কার্যকর ও যুক্তিসংগত হয়ে উঠতে পারেন যেকোনো আলোচনা বা সম্পর্কে।
বেতন বাড়ানো নিয়ে আলোচনা, সম্পর্ক উন্নয়ন কিংবা কোনো কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলে কিছু সহজ মনস্তাত্ত্বিক কৌশল আপনার জন্য হতে পারে দারুণ সহায়ক। এসব কৌশল আপনাকে দ্রুত আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জন এবং আগের চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
বেশির ভাগ মানুষ অস্বস্তিকর নীরবতা সহ্য করতে পারে না, বিশেষ করে কথোপকথনের সময়। কিন্তু এই নীরবতাই হতে পারে আপনার গোপন অস্ত্র। গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বা কঠিন প্রশ্ন করার পর একটুখানি চুপ করে থাকুন। এই নীরবতা অন্য পক্ষের ওপর চাপ তৈরি করবে। অনেক সময় তাঁরা না ভেবেই এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা তাঁরা বলতে চাইছিলেন না।
কাউকে স্পষ্টভাবে না বুঝিয়ে বরং সূক্ষ্মভাবে তাঁর অঙ্গভঙ্গি, বসার ভঙ্গি বা কণ্ঠস্বরের ভঙ্গি অনুকরণ করতে পারেন। এতে তিনি আপনাকে আপনজন ভাবতে শুরু করবেন। একে বলে ‘মিররিং’ বা আয়নার মতো অনুকরণ করা, যা বিশ্বাস তৈরি করার একটি স্বাভাবিক কৌশল।
মানুষ সাধারণত তাঁদের মতো মানুষদেরই বেশি পছন্দ করে। তাই যদি আপনি দ্রুত কারও সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে বা তার চোখে ভালো ভাবমূর্তি গড়তে চান, তাহলে তাঁর শরীরী ভাষার সঙ্গে খানিকটা মিলিয়ে চলুন।
আপনি যখন কথা বলেন, সে সময় মাথা নাড়লে অন্যদের আপনার মতের সঙ্গে একমত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটি একটি অচেতন সংকেত, যা আমাদের মস্তিষ্কে একধরনের বার্তা পাঠায়—‘এই কথাটা যুক্তিসংগত।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আপনি আগে মাথা নাড়ালে শ্রোতারাও মাথা নাড়াতে শুরু করেন, এমনকি আপনার কথায় সম্মতিও প্রকাশ করেন।
মানুষকে সরাসরি কিছু করতে বললে তাঁরা ভালোভাবে নেন না, কিন্তু নিজের মতো বেছে নিতে পারলে তাঁরা খুশি হন। তাই ‘এটা এখন করুন’ না বলে আপনি বলতে পারেন, ‘আপনি এই কাজটা আজ করবেন, নাকি আগামীকাল?’ এভাবে বললে তাঁরা মনে করেন, সিদ্ধান্তটা তাঁদের নিজেদের, কিন্তু আপনি যেটা চাইছেন, সেটাই তাঁরা শেষ পর্যন্ত করেন।
মার্কিন লেখক ও আত্ম–উন্নয়ন প্রশিক্ষক ডেল কার্নেগি বলেছিলেন, ‘নিজের নাম প্রত্যেকের কানে সবচেয়ে মধুর শব্দ।’ কথার মাঝে মাঝে মানুষের নাম ব্যবহার করলে এটা তাঁদের মনোযোগ কাড়ে এবং আপনার কথা আরও আপন মনে করেন। এতে তৈরি হয় আন্তরিকতা এবং অপর পক্ষ বুঝতে পারে, আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন। এতে অন্যরা আপনার কথায় আরও ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন।
উপকার করার অনুরোধ করলে কোনো ব্যক্তি আদতে আপনাকে আরও বেশি পছন্দ করতে শুরু করেন। এই মনস্তাত্ত্বিক কৌশলটি ‘বেন ফ্র্যাঙ্কলিন ইফেক্ট’ নামে পরিচিত। এর কারণ হলো, কেউ যদি আপনার জন্য কিছু করেন, তাহলে তিনি নিজের মনকে বোঝান, তিনি আপনাকে পছন্দ করেন বলেই এটা করেছেন। আপনি চাইলে খুব ছোট্ট একটি পরামর্শ বা সাহায্য চেয়ে শুরু করতে পারেন।
কেউ যখন কথা বলছেন, তখন তাঁদের কিছু শব্দ বা বাক্যাংশ আপনি আপনার উত্তরে ব্যবহার করুন। এতে তাঁরা বুঝতে পারেন আপনি মন দিয়ে তাঁদের কথা শুনছেন, আর তাঁরা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। যেমন কেউ যদি বলেন, ‘অফিসে খুব চাপ যাচ্ছে!’ তখন আপনি উত্তর দিতে পারেন, ‘হ্যাঁ, তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ভীষণ চাপে আছ!’ এই ছোট কাজটাই মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে।
সূত্র: এমএসএন