মিতব্যয়ী ব্যক্তিদের জীবনে যে ৭টি সুফল মিলে

মিতব্যয়িতা একজন মানুষকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে শেখায়।
ছবি: পেক্সেলস

প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় ও অপচয় না করাই মিতব্যয়িতা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জীবনযাপন–বিষয়ক ব্লগ ফ্রুগাল কনফেশনসের প্রধান নির্বাহী এবং অর্থবিষয়ক লেখিকা অ্যামেন্ডা এল গ্রসম্যান বলেন, পরিমিত ব্যয় একটি পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করে। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, খরচের ব্যাপারে একটু সচেতন হলে একই আয়ে জীবনের অনেক লক্ষ্য ও শখ মেটানো সম্ভব।

মিতব্যয়িতা বলতে আমরা কেবল অর্থ সঞ্চয়কে বুঝি। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে মিতব্যয়ী শুধু অর্থই না, সময় ও সম্পদেরও যথাযথ ব্যবহার করে।

মিতব্যয়ী হওয়া কেন ভালো, জীবনে হিসাব করে চললে কী লাভ, চলুন জেনে নিই।

খরচের ব্যাপারে একটু সচেতন হলে একই আয়ে জীবনের অনেক লক্ষ্য ও শখ মেটানো সম্ভব

১. মিতব্যয়িতা সম্পদশালী হতে শেখায়
মিতব্যয়ী ব্যক্তিরা হিসাব করে জীবন যাপন করেন। এ কারণে তাঁদের সঞ্চয়ের মানসিকতা গড়ে ওঠে, যা মিতব্যয়ী ব্যক্তিকে সম্পদশালী হতে সাহায্য করে।

২. অন্যের সহযোগিতার অপেক্ষা করে না
অন্য কারও সহযোগিতা ছাড়া নিজের সব প্রয়োজন ও চাহিদা মেটাতে পারা মিতব্যয়ী ব্যক্তির একটি বড় গুণ। মিতব্যয়িতা একজন মানুষকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে শেখায়। একজন মিত্যব্যয়ী ব্যক্তি সম্পদের ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারেন।

৩. মিতব্যয়ীরা পরিবেশের উপকার করেন
মিতব্যয়ী ব্যক্তিরা নানা দিক দিয়ে কার্বন উৎপাদন কম করেন। অনেক মিতব্যয়ী ব্যক্তি যাতায়াতের জন্য গণপরিবহন ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। অনেকেই আবার ব্যবহৃত পণ্য কিনে থাকেন। আবার নতুন আসবাবের পরিবর্তে অনেকেই ব্যবহৃত আসবাব কিনে কার্বন নির্গমন ও প্লাস্টিক উৎপাদন কমাতে সাহায্য করেন।

৪. আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ে
আর্থিক বিষয়ে মিতব্যয়ী ব্যক্তিরা অনেক ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ, মিত্যব্যয়ী ব্যক্তিরা ধৈর্যশীল হন, তাড়াহুড়া করেন না। সিদ্ধান্তটির ভালোমন্দ দিকগুলো সময় নিয়ে যাচাই করেন। যতই জরুরি প্রয়োজন হোক না কেন, সীমিত সম্পদকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, তাঁরা তা বেশ ভালোভাবে জানেন।

মিতব্যয়ী ব্যক্তিরা কেনাকাটায় সাশ্রয়ী হন

৫. জীবনে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কম
জানেন কি মিতব্যয়ী ব্যক্তিদের জীবনযাপনে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব অন্যদের তুলনায় কম পড়ে। কারণ, মিতব্যয়ী ব্যক্তিরা কেনাকাটায় সাশ্রয়ী হন। তাঁরা সবচেয়ে কম দামি অথচ কার্যকর জিনিসটি দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করেন। ব্যয় কম হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবও তাদের জীবনে কম পড়ে।

৬. মিতব্যয়িতা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
সম্পূর্ণ অর্থের ওপর নির্ভর না করে জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে পারা এমন একটি স্বাধীনতা, যা সবার উপভোগ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা অনেক সাহায্য করে। প্রচুর অর্থ সঞ্চয় থাকার পরও মিতব্যয়ী জীবনযাপন আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।

৭. প্রয়োজনের সময় মানসম্মত পণ্য কেনার দক্ষতা
মিতব্যয়ী ব্যক্তি অপ্রয়োজনে যতটা সম্ভব কম খরচ করেন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে টাকা খরচ না করার কারণে প্রয়োজনের সময় গুরুত্বপূর্ণ দামি জিনিস কেনার সামর্থ্য তাঁদের থাকে।

৮. স্বাস্থ্যঝুঁকি কমায়
দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে পণ্যগুলো ব্যবহার করি, তার সব কটি স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। এর অনেকগুলোতেই সীসা, ক্ষতিকর রং বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। মিতব্যয়ী ব্যক্তিরা যেহেতু কম পণ্য ব্যবহার করেন, অনেক ক্ষেত্রে বাজার থেকে না কিনে নিজেরাই তৈরি করেন, সে কারণে অন্য ভোক্তাদের চেয়ে তাঁরা কিছুটা কম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন।

পরিমিত ব্যয় একটি পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করে

সম্পদ যতটা সম্ভব সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করার চেষ্টা করার সময় আমরা অনেক কিছু শিখি। এতে সীমিত সম্পদ দিয়ে আরও বেশি কিছু করতে পারার দক্ষতা গড়ে ওঠে। সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্ষতির ঝুঁকি কমে। এ দক্ষতা সম্পদশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করে।


পরিশেষে মিতব্যয়িতা একটা জীবনাচরণ, যা অল্পতে সন্তুষ্ট হতে শেখায়। মিতব্যয়ী হওয়া কেবল আর্থিক উন্নতির জন্যই নয়, জীবনের জন্যও মঙ্গল বয়ে আনে।

সূত্র: ফ্রুগাল লিভিং