আজও প্রথম আলো সংরক্ষণ করে চলেছেন কামরুল আরেফিন ও সালমা খাতুন
আজও প্রথম আলো সংরক্ষণ করে চলেছেন কামরুল আরেফিন ও সালমা খাতুন

২৭ বছর ধরে প্রথম আলো সংরক্ষণ করে চলেছেন চুয়াডাঙ্গার এই দম্পতি

১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর থেকে আজও প্রথম আলো সংরক্ষণ করে চলেছেন কামরুল আরেফিনসালমা খাতুন। এ জন্য বাড়ির দুটি কক্ষ ছেড়ে দিয়েছেন এই দম্পতি। চুয়াডাঙ্গায় তাঁদের সংগ্রহশালাটি দেখতে গিয়েছিলেন শাহ আলম

চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়ায় থাকেন কামরুল আরেফিন ও সালমা খাতুন। ১ নভেম্বর সকালে তাঁদের বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষে ঢুকতেই কাগজের গন্ধ পেলাম। এই কক্ষেই তাঁরা গড়ে তুলেছেন সংগ্রহশালা। যার বেশির ভাগজুড়ে কেবলই প্রথম আলো। দোতলায় আরেকটি কক্ষের আংশিক সারি সারি করে পত্রিকায় সাজানো। প্রথম আলোর সহযোগী প্রকাশনা ও ম্যাগাজিনগুলো আলাদাভাবে সাজানো। তাঁদের এই আর্কাইভে প্রতিবেশী ছাড়াও অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী পুরোনো পত্রিকা পড়তে আসেন। কেউ কেউ গবেষণার কাজে সংগ্রহ করেন পুরোনো প্রতিবেদন। দুজনেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমাদের এই আর্কাইভ প্রথম আলোকে ভালোবেসে গড়া।’

কামরুল আরেফিন বলেন, ‘প্রথম আলো প্রকাশের আগে আমি ভোরের কাগজ–এর পাঠক ছিলাম। কাগজটির সম্পাদক মতিউর রহমান নতুন ধাঁচের একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের ঘোষণা দিলে তা বাজারে আসার আগেই চারদিকে হইচই পড়ে যায়। সালমা বিষয়টি আমার নজরে আনে। নতুন এই পত্রিকা সংগ্রহ করার বিষয়ে দুজনে মিলেই সিদ্ধান্ত নিই।’

১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর সকালে ক্রোড়পত্রসহ উদ্বোধনী সংখ্যা হাতে পাওয়ার পর অন্য রকম ভালো লাগায় তাঁদের মন ভরে যায়। কামরুল বলে যান, ‘প্রথম দিনেই দেশবরেণ্য লেখকদের লেখায় সমৃদ্ধ ছিল। পরবর্তী দিনগুলোতেও যার ধারাবাহিকতা দেখতে পাই। এমন ভালো লেগে যায় যে প্রথম আলোকে আর ছাড়তে পারিনি।’

সংগ্রহের একাংশ দেখাচ্ছেন কামরুল আরেফিন

২৭ বছরে প্রকাশিত প্রতিটি সংখ্যা এই দম্পতি পড়েছেন, সংরক্ষণ করেছেন। দিনের শুরুতে সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শুরু হয় তাঁদের প্রথম আলো পড়া। উল্লেখযোগ্য সংবাদগুলো পড়ার পর ভেতরে অর্থনীতিসহ অন্যান্য পাতা পড়েন। তবে সালমা খাতুনের পছন্দ উপসম্পাদকীয়। এরপর শুক্রবারের ‘অন্য আলো’। স্মৃতি হাতড়ে কামরুল আরেফিন জানান, একসময়ে প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত শিশির ভট্টাচার্যের কার্টুন, আলপিন, রস+আলো খুবই মিস করেন। সে সময়ে প্রকাশিত কার্টুনগুলো নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চলত দীর্ঘ আলোচনা ও বিশ্লেষণ। মাঝেমধ্যে দুজনেই নিজেদের আর্কাইভ থেকে এসব বিষয় খুঁজে বের করে দেখেন, পড়েন। তাঁরা দেখেন—বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ খবর, নির্বাচন, দুর্ঘটনা বা ঐতিহাসিক দিনগুলোর খবর কেমনভাবে ছাপা হয়েছিল।

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য কামরুল আরেফিন এবং চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সালমা খাতুন। ১৯৬৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৫৩ বছর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কামরুল আরেফিন। একসময় ছিলেন ডেইলি স্টার–এর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি। ২০১৮ সাল থেকে কেবলই আইন পেশায় জড়িত। তাঁদের দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে কানিজ ফাতেমা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় শিক্ষকতা করলেও বর্তমানে গৃহবধূ। ছেলে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন প্রকৌশলী তিতুমীর আহমেদ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।

কামরুল আরেফিন চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য আর সালমা খাতুন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক

অনেকে কাগজগুলো বিক্রি করে ঘর ফাঁকা করার পরামর্শ দিলেও কামরুল-সালমা দম্পতি বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। কামরুল আরেফিন বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই কাগজগুলো বিক্রি করা মানে আমাদের অতীত বিক্রি করা। এগুলো কেবল খবর নয়, আমাদের জীবনের গল্প। কাগজগুলোর প্রতি এতটাই মায়া এসে গেছে যে কখনোই তা বিক্রি করতে পারব না।’

সালমা খাতুনের কণ্ঠেও একই সুর। তিনি বলেন, ‘বিক্রি করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। আমাদের জীবদ্দশায় বিক্রি হবেও না।’