
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে লেখা আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভালোবাসার টক–ঝাল–মিষ্টি গল্প লিখে পাঠিয়েছেন পাঠক। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। তেমনই একটি লেখা পড়ুন এখানে।
প্রিয় তুমি,
কেমন আছ? জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে পারবে না জানি। যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে তোমাকে হঠাৎ চিঠি লিখলাম কেন, সে প্রশ্নের উত্তর একটু পরে দিচ্ছি।
এইমাত্র একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙে গেল। তোমাকে এই অবেলায় ফোন দিয়ে কোনো দুঃস্বপ্নের গল্প শোনানোর দিন আমাদের ফুরিয়ে গেছে। অগত্যা কলম হাতে লিখতে বসে গেলাম। আইডিয়াটা ভালো, তোমার কাছে কোনো নোটিফিকেশন যাবে না, তবু তুমি শুনতে পাবে। এতটা আত্মবিশ্বাস কীভাবে হলো, সেটিও পরে বলছি, তার আগে কী দেখলাম সেটা শোনো—
পাশের কোনো বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। কোন বিল্ডিং, সেটি দেখার জন্য জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখি, ওই বিল্ডিংয়ের অর্ধনির্মিত ছাদবিহীন দেয়ালগুলো পানিতে ভেসে যাচ্ছে, এক্ষুনি নিচে পড়বে। ভাবতে ভাবতেই বুঝি আমাদের ছাদেই এসে পড়ল।
উফ্! কী বিকট শব্দ।
মাথা চেপে ধরে দরজার দিকে যেতেই কারও বুকে ধাক্কা খাই। শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরি।
পরিচিত একটা ঘ্রাণ, নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিই।
বুকের ভেতরে ঢুকে যাই একদম।
একি! আমি তার হৃৎপিণ্ডটা দেখতে পাচ্ছি, লাল লাল রক্তের শিরা–উপশিরা। মনে হচ্ছে, কোনো ব্যবচ্ছেদ করা মানবশরীরে মুখ ডুবিয়ে আছি। হৃৎপিণ্ড সংকোচনের পর জোরে প্রসারিত হয়েই আমার চোখেমুখে রক্তের ছিটা এসে লাগল।
চোখ মেলে তাকালাম। মুখটা আসলেই ভেজা। চোখের কোণে পানি। সেটি কি কারও হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দেখে? নাকি লুবানার ছুড়ে দেওয়া পানিতে?
হ্যাঁ, লুবানা ডাকছে। ১২টা বেজে গেছে, ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ, শনিবার, আমার জন্মদিন। আমি কি ভুলে গিয়েছিলাম এই দিনের কথা? তাহলে ১২টা বাজার আগেই স্লিপিং পিল খেয়ে কেন ঘুমাচ্ছিলাম? আচ্ছা, তুমি তো বলেছিলে, ভুলে যাবে আমাকে, তাহলে লুবানার নিয়ে আসা রেড ভেলভেট কেকের নিচে শক্ত কাগজের উল্টো দিকে এই কাস্টমাইজ লেখাটা কীভাবে এল? লুবানাকে জিজ্ঞেস করলে হতো; কিন্তু মেয়েটা তো এখন ঘুমিয়ে গেছে। নিজের অজান্তেই আমার প্রিয় বইটা খুঁজে এনেছে ও, কোথায় পেয়েছে, সেটিও শোনা হলো না।
আমার আর ঘুম আসবে না। লুবানার গিফট দেওয়া বইয়ের ভাঁজে কী মিষ্টি পরিচিত একটি গন্ধ। সেটিকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। বইটা ঢিপ ঢিপ করা হৃৎপিণ্ডটাকে আগলে রেখেছে যেন। ফাঁকা রাস্তায় কয়েকটি কুকুর দৌড়াদৌড়ি করছে। হাবিব চাচা এখনো তাঁর চায়ের দোকান বন্ধ করেননি। আশপাশের রাস্তায় আর কোনো রিকশার শব্দ নেই, দূরের হাইওয়ে থেকে দূরপাল্লার গাড়ির শব্দ আসছে মাঝেমধ্যে। ভাবছি, নিউইয়র্কে এখন কয়টা বাজে? ঝকঝকে রোদ, নাকি মেঘলা আকাশের বরফপাত, কিসে মুড়ে আছ তুমি? নিউইয়র্কেও কি এখন বইমেলা চলছে?
পাশেই কোনো এক ব্যালকনি থেকে গিটারের টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে। কয়েকটা ছেলে দল বেঁধে গাইছে, ‘হঠাৎ তোমায় মন দিয়েছি/ ফেরত চাইনি কোনো দিন/ মন কি তোমার হাতের নাটাই/ তোমার কাছে আমার ঋণ/ মন হারালেও মনের মানুষ
হারে না।’
ইতি,
প্রিয়লতা