কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এই তিনটি বিদেশি কুকুর স্যাম, কোরি ও ফিনকে নিলামে তোলা হচ্ছে
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এই তিনটি বিদেশি কুকুর স্যাম, কোরি ও ফিনকে নিলামে তোলা হচ্ছে

ডিএমপি কেন তিনটি কুকুর নিলামে তুলছে, কারা অংশ নিতে পারবেন এই নিলামে

ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি) নিলামে তুলছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের তিনটি বিদেশি কুকুর। ২৫ নভেম্বর ঢাকার মিরপুরে বসবে এ নিলাম। কেন হচ্ছে এ নিলাম? কারাই–বা অংশ নিতে পারবেন এ নিলামে?

মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে কুকুরের সুনাম জগৎজোড়া। যাঁর কাছে কুকুর একটু খাবার কিংবা আশ্রয় পায়, তাঁর বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিঃসংকোচে। কুকুরকে নানান রকম প্রশিক্ষণ দেওয়ারও সুযোগ আছে। এমনকি অপরাধজগতের নানান বিষয়ে মানুষকে সাহায্য করতে পরম বন্ধু হয়ে কাজ করে লড়াকু এই প্রাণী।

এ ধরনের কাজে নিযুক্ত করা হয় বিশেষ জাতের কুকুর। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে তো বটেই, বাংলাদেশেও নির্দিষ্ট ধরনের কাজে লাগানো হয় প্রশিক্ষিত কুকুরদের। এমন কিছু কুকুর কাজ করে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গেও।

ডিএমপির সিটিটিসি’র কে–৯ ইউনিটের প্রশিক্ষিত কুকুরদের বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়

যে পেশা বা কাজের সঙ্গে অপরাধজগৎ সম্পর্কিত, তাতে নিয়োজিত থাকতে হলে শারীরিক শ্রম স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি হয়। বুঝতেই পারছেন, তরুণ বয়সী কুকুর যেভাবে এই কাজ করতে পারবে, একটু বেশি বয়সী কুকুর তা আর পারবে না। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট বয়সে অবসরে যেতে হবে এই কুকুরদের।

চলতি পথে এক কৌতূহলী পথচারির সঙ্গে ‘হাত’ মেলাচ্ছে ফিন

ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের তেমনই তিনটি কুকুর—ফিন, কোরি ও স্যাম। ওরা যে বিশেষায়িত ইউনিটে কাজ করে, তার নাম ‘কে-৯’। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক বস্তু খুঁজে বের করার কাজে বিশেষ প্রশিক্ষণ আছে এই ইউনিটের কুকুরদের।

এই তিন কুকুরের প্রতিটিরই বয়স আট বছর পেরিয়েছে। ফিন ও কোরি ল্যাব্রাডর জাতের কুকুর। আর স্যাম জার্মান শেফার্ড। যুক্তরাজ্য থেকে আনা এই তিন কুকুরের জন্য এই বিশেষায়িত ইউনিটে কাজ করার সময় ফুরিয়েছে।

যেকোনো বড় বিপর্যয়ে প্রশিক্ষিত কুকুরদের কাজে লাগায় আইন শৃঙ্খলার বিশেষ বাহিনিগুলো

ডিএমপির সিটিটিসি বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত আইনশৃঙ্খলার কাজে যেসব কুকুর ব্যবহৃত হয়, সেসবের গড় আয়ু ধরা হয় ১১ বছর। সেই হিসাবে যে তিনটি কুকুর নিলামে তোলা হচ্ছে, সেগুলো বার্ধকে৵র কারণে মূল দায়িত্ব পালনে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। সুস্থ–সবল থাকলেও এখন ওদের অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে। তাই নিলামে প্রাণিপ্রেমীদের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে ওদের বাকি জীবন সুন্দরভাবে কাটানোর আশা করে কে–৯ ইউনিট।’  

ইউনিট থেকে এখন তাদের সরিয়ে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। তবে ওরা সুস্থ আছে বলে জানা গেছে। আপনি যদি কুকুর ভালোবাসেন, তাহলে দারুণ সব বৈশিষ্ট্য দেখে ওদের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায় কে ৯ ইউনিটের টহল

নিলামে তোলা তিনটি কুকুর সম্পর্কে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে ওরা বাংলাদেশ পুলিশের সিটিটিসি গ্রুপের হয়ে নারকোটিক ও এক্সপ্লোসিভ (বিস্ফোরক দ্রব্য) তল্লাশির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। বিশেষ করে বইমেলা, সভা–সমাবেশ, এয়ারপোর্টে কার্গো চেকিংয়ের মতো দায়িত্ব সন্তোষজনকভাবে সামলাতে পারে এই জাতের কুকুরগুলো।

সাধারণত বিদেশ থেকে এ ধরনের কুকুর যখন কেনা হয়, তখন ওদের বয়স থাকে ছয় মাস থেকে এক বছরের নিচে। এই বয়সেই ওদের প্রশিক্ষণ শুরু করতে হয়। নিলামে তোলা ফিন, স্যাম ও কোরি—তিনটিরই জন্ম যুক্তরাজ্যে। এর মধ্যে কোরি স্ত্রী, বাকি দুটি পুরুষ।

মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রশিক্ষিত কুকুর

আপনি যদি কুকুর তিনটিকে নিজের কাছে রাখতে চান, তাহলে ওদের জন্য ঠিক কতটা জায়গা প্রয়োজন, খাদ্যাভ্যাস কেমন, টিকা কখন দিতে হয়, চেকআপের জন্য কখন নিতে হয়—এসব বিষয়ই জানতে হবে আপনাকে। তবেই না আপনি ওদের দায়িত্ব নিতে পারবেন।

তল্লাশি চলছে মেট্রো স্টেশনে

নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুকদের নগদ এক হাজার টাকা জমা দিয়ে ডাকে অংশ নিতে হবে। চাইলে আগে যোগাযোগ করে কুকুরগুলো দেখেও আসা যাবে। সে ক্ষেত্রে যোগাযোগ করতে হবে উপপুলিশ কমিশনারের (স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ) সঙ্গে। প্রতিটি কুকুরের জন্য আলাদাভাবে ডাক অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি কুকুর বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত নিলাম চলবে। নিলামের পর তিন দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে কুকুর বুঝে নিতে হবে।

বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাবে এই নম্বরে ফোন করে—০১৩২০০৪৬৩৫৬।

২৫ নভেম্বর দুপুরে কুকুর তিনটির নিলাম হবে মিরপুর-১৪ নম্বর সেকশনে মিরপুর পুলিশ লাইনসের পুলিশ ক্যানাইন টিম হেডকোয়ার্টারে। নিলামে অংশ নিতে পারবেন ব্যবসায়ী, নিলামকারী, কন্ট্রাক্টর ও কুকুরপ্রেমীরা। আপনিও যাবেন নাকি?