মুক্তারহস্য

.

‘ছোট্ট কণা থেকেই তো হয় গোলাপি মুক্তো’—শুনেছ গানটা? এতে ছিল ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা গড়ে ওঠার কথা৷ আচ্ছা, মুক্তা কীভাবে তৈরি হয়, তোমরা কি জানো?
মনে করো, ছোট্ট কোনো জলজ জীব বা কোনো বালুকণা হঠাৎ করে ঝিনুকের মধ্যে ঢুকে গেল৷ ঝিনুক তখন কী করে, জানো? ঝিনুক তখন ওই ছোট্ট জীব বা বালুকণাটির চারপাশে একটি থলের মতো অংশ তৈরি করে ফেলে৷ সেই সঙ্গে ঝিনুকটির নিজস্ব কিছু রাসায়নিক পদার্থ সেখানে জমা হতে থাকে৷ থলেটিও দিনে দিনে বেড়ে ওঠে৷ এভাবেই একসময় তৈরি হয় মুক্তা৷
তবে সব ঝিনুকেই কিন্তু মুক্তা তৈরি হয় না৷ আর তুমি বাইরে থেকে দেখে বুঝতেও পারবে না, কোন ঝিনুকে মুক্তা আছে৷ হাজার হাজার ঝিনুক তুলে আনলেও তুমি একটি সুন্দর মুক্তা পাবে কি না সন্দেহ৷
এসব কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল মুক্তাডুবুরি কিনোর কথা৷ আমেরিকান লেখক জন স্টেইনবেকের লেখা দ্য পার্ল বইটিতে আছে কিনোর গল্প৷ হঠাৎ করে সে পেয়ে গিয়েছিল বেশ বড় আর দামি একটি মুক্তা৷ ভেবেছিল, মুক্তা বিক্রি করে তার ছোট্ট শিশুটিকে একদিন পড়াশোনা শেখাবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না লোভী কিছু মানুষের জন্য৷ প্রাকৃতিকভাবে যে সুন্দর মুক্তাগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো বেশ দামি হয়৷ এ কারণেই লোভী মানুষগুলোর জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল কিনোর ছোট্ট শিশুটিকে৷
মুক্তা কিন্তু চাষও করা যায়, সেটা কি জানো? ঝিনুক চাষ করে তার মধ্যে ছোট্ট কোনো এক ক্ষুদ্র কণা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়৷ আবার সেই ঝিনুককে রাখা হয় পানিতে৷ পরে সময়মতো ঝিনুক উঠিয়ে এনে মুক্তা বের করে আনা হয়৷
মুক্তা কীভাবে চাষ করা যায়, তা প্রথম আবিষ্কার করেন তিন জাপানি, তবে প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে করেন এই আবিষ্কার৷ আর এই তিনজনের মধ্যে ককিচি মিকিমটো একাই পান আবিষ্কারকের স্বীকৃতি৷ শোনা যায়, তিনি নাকি প্রতিদিন দুটি করে মুক্তা খেতেন, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য! চীনে অবশ্য মুক্তাকে ওষুধের উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা হয়৷
এখন তোমরা যে মুক্তাগুলো দেখো, তার বেশির ভাগই চাষ করা মুক্তা৷ এগুলো অবশ্য দেখতে অতটা সুন্দর নয়৷ প্রাকৃতিক মুক্তাগুলো হয় খুব সুন্দর আর উজ্জ্বল৷ শত শত বছর ধরে মুক্তার সৌন্দর্যে অবাক হয়েছে মানুষ৷ অলংকারে ব্যবহার ছাড়াও আগে দামি কাপড়ে লাগানো হতো মুক্তা৷
সাদা, গোলাপি, রুপালি, হলুদ মুক্তা যেমন আছে, তেমনি আছে সবুজ, নীল, এমনকি কালো রঙের মুক্তাও৷ অভিজ্ঞ মুক্তাডুবুরিরা নাকি একনিঃশ্বাসে পানির নিচে ২০০ ফুট পর্যন্ত চলে যেতে পারেন৷ তবে গভীর পানির নিচ থেকে মুক্তা তুলে আনতে গিয়ে কত মানুষের যে মৃত্যু হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই৷
সাগরের অতলে মুক্তা খঁুজে বেড়ান কিছু মানুষ৷ মূল্যবান এই রত্ন খঁুজে পেতে জীবনের ঝুঁকি নিতেও ভয় পান না তাঁরা৷ মুক্তার সৌন্দর্যে অবাক হতে দোষ নেই, কিন্তু যেখান থেকে এল মুক্তা, সেই ঝিনুকের কথা আর যাঁরা জীবন বিপন্ন করে সত্যিকারের মুক্তা খঁুজে বেড়ান, তাঁদের কথা ভুলে যেয়ো না, কেমন?
রাফিয়া আলম, সূত্র: ফাইন্ড ফাস্ট