জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের চারপাশে বর্ষা নেমেছে
প্রেমরঙা মাছের নেশায়
বাজারের কোলাহল-নুয়ে-পড়া রাতে
গাছপালানো পাখিদের জ্বরগ্রস্ত যৌবন
নেচে ওঠে পারদের নানা রং–ছন্দে
আর তিন তাসের হাত ধরে বুকসমান উঁচু দিয়ে
উড়ে যায় টইটম্বুর নৈঃশব্দ্যের লীলা—
আয়ুর ভেঙে পড়া ঘরে অদৃশ্য গোলাপায়ন
কিংবা ল্যাজারাস ফেনোমেনন
যেন সরল দোলকের রোদ-পোহানোর সুখ
মিশে গেছে ব্যাঙ-ডাকের অপরূপ কৌশলে
জ্বরের তাণ্ডবে নেচে ওঠে বৃষ্টি ও মেঘ
চৈতন্যের টিলায়
তখন জলের তোড়ে ছায়া ফেলে দূরে চলে যায়
গাছ ও জলের জ্যামিতি
আঁধারের যুগল বাহুতে ঢেকে যায় নদীপাড়
জয়তির দেউড়িতে ভোরের খুৎবা স্নান সেরে ওঠে—
লীলাময় জ্বর নেমে গেলে
রাতের বুক থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ে অন্ধকার...
তোমার মুখস্থবিদ্যার নিচে একটি ফলিত সুখগাছ
সিজদার ভঙ্গিতে পড়ে আছে, তুমি সেই সুখগাছ থেকে
বয়স্ক হলুদ পাতাগুলো তুলে নিয়ে খোঁপায় গুঁজেছ—
রাতের নদীর প্রণয়ের দিকে চেয়ে তোমার নিশাচর হাত
আলতো করে কুড়িয়ে নিচ্ছে আকাশের ছায়া
তোমার মুখস্থবিদ্যার নিচে মেঘের খাম্বায় সাঁটা
একটি অনাথ শিমুলগাছের পৈতৃক হাহাকার—
কার ধামে কে আঁকে চিরায়ত নির্জনতা, কে জানে!
তোমার তন্দ্রার পাশে পালের নৌকা ভেসে যায়
হলুদখেত পেরিয়ে যাওয়া বিকেলের হাওয়ায়
আমি স্বপ্নের ভেতরে তোমার বিনম্র আয়ুরেখার কড়িকাঠ
সাদা মোরগের রক্ত দিয়ে ধুয়ে দিই
ফলিত সুখগাছ থেকে ঝরে পড়ছে অশ্রুগ্রন্থির ফনেটিকস;
তোমার মুখস্থবিদ্যার নিচে উলুখড় দিয়ে ঘর বাঁধে
মেঘমুলুকের ঘরামি, আর চিরায়ত নির্জনতার বয়নপ্রণালি
সমুদ্রতীরের ঝাউবনের দিকে উড়ে যায়...
রাত্রির গহনতম আলোয় দেখা যায়—
চাঁদপাখির গানের ভেতরে ভেসে ওঠা
পরিণত বিষের যন্ত্রণা
জঙ্গলের গোপন ভাষায় অনূদিত হয়ে
যখন ছড়িয়ে পড়ে ত্রিভুবন
তখন অঙ্কুরিত হয় নিঃশব্দ মাতৃদুগ্ধ
আমাদের মানবজনম ভিজে ওঠে
গোপন পিরিতে, শিশিরে হাওয়ায়
মায়াজাল বিস্তৃত করো নির্জন আলোয়
ছলাৎ ছলাৎ শব্দগুলো দূরে সরে গেলে
যে রকম বিলুপ্ত নগরীর দেয়াল ভেসে ওঠে
সেভাবে খুলে যাক রাত্রির গোপন দরজা
জল নিঃশব্দে গড়িয়ে যাক চাঁদের সঞ্চারী হয়ে
নিরক্ষর আদিম গুহায়—
ইচ্ছে হলে ভোরের ইশারাটুকু সাথে নিয়ে
তুমি কোনো রাখাল শামুকের গানের
মুখরায় ঢুকে
সঞ্চারীর সেলাইয়ের ফোঁড়ে
দেখতে পারো—জলের অন্ধকারে
কামিনী ফুটেছে নীল শাড়ি পরে...
কামিনী ফুটেছিল
রাতের গোপন ছায়ায়, লেবুপাতার গন্ধে
রানি জোনাকির মৃদু আলোয়
কামিনী ফুটেছিল
শিশিরের টুপটাপ পতনে, শীতের ইশারায়
কামিনী ফুটেছিল
রাখাল শামুকের ডেরায়, উদ্বাস্তু ঘুমের আঙিনায়
কোথাও কি উড়ছে ধুলো, উড়ছে কারও
নিবিড় করে কাছে পাওয়ার সুবর্ণ দিন?
শূন্য থেকে পড়ছে ঝরে পাতার মিছিল
ঘুমের পালক খসে পড়ার সালতামামি
রুগ্ন মেঘে ঝুলছে যত উপার্জিত অবহেলা
দেখছি দূরে মাঠের আলে প্রাচীন ছায়া
আমি শুধু কাকতাড়ুয়ার হৃদয় খুঁজি
শুদ্ধ করে স্বপ্ন পড়ি ডাকছে যখন বিকেলবেলা
রাতের পাশে চেনা কটি অন্ধ গোলাপ
তারাও যেন রাতের মতো আঁধার পোষে
একখানা হাত ডাকছে কাছে অন্তরঙ্গ পেখম তুলি
আমার কি আর সময় হবে সে ডাক শোনার
শালবাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
জলের দিকে মায়ামন্ত্র ছড়িয়ে যাচ্ছি নিরিবিলি