অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার
অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

গুচ্ছকবিতা

চুমু ও চালকুমড়া

আমাকে নতুন নতুন

আমাকে নতুন নতুন কবিতা লিখতে হবে।

সেসব কবিতা কোনো মনুমেন্ট পাহারা দেওয়ার কথা বলবে না,

খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকার কথা,

দৌড়ানোর কথা বলবে।

কোনো আগ্নেয়গিরির কথা বলবে।

দূর মাঠ থেকে ভেসে আসা গরুর হাম্বা ডাক থাকবে।

পুকুর থেকে উঠে আসা হাঁসের ডাক থাকবে।

খালের ওপর বাঁশের সাঁকো থাকবে।

গন্ধ থাকবে ন্যাপথালিনমাখা দুঃখের।

চাঁপা ফুল

হলুদ শাড়ি পরা চাঁপা ফুল।

চাঁপা ফুলের আঁচল কাঁপছে খোলা হাওয়ায়।

চাঁপা ফুল খুব চাপা স্বভাবের ফুল।

চাঁপা ফুল চিরকালের ইনট্রোভার্ট।

চুপচাপ, ঠান্ডা, কুল।

আমি চাঁপা ফুলের গন্ধ নিই,

চাঁপা ফুলও নেয় আমার গন্ধ।

সময়ের মায়া নেই

সময়ের মায়া নেই, মমতা নেই। সময় নৃশংস বর্বর হয়ে উঠেছে।

এখানের মাটিতে বাতাসে গাছে আকাশে রাশি রাশি মৃত্যুবিষ।

মৃত্যু বাদুড়ের মতন ঝুলে থাকে গাছে গাছে।

এই যে চারপাশে গাছ—

এরা কী সাংঘাতিক, কী বিশ্বাসঘাতক!

একেকটা গাছ থেকে মৃত্যু ঝুপ ঝুপ করে লাফিয়ে পড়ে মাটিতে।

পাতায় পাতায় প্রাণপতনের শব্দ।

মৃত্যু পড়ে গেল নির্দয় নিয়তির পরিহাসে।

ঘাসে, বাতাসে অপরিমিত মৃত্যু ভাসে।

আমাকে তো কোথাও যেতে হবে।

হায়, নিরাশ্রয় সময়।

চুমু ও চালকুমড়া

সেদিন বাজারে যাচ্ছি, বউ এসে বলল,

তোমার চোখে চালকুমড়া পড়েনা?

হায় চালকুমড়া!

এক সময় আমার বউ আমার কাছে চুমু চাইতো,

আর এখন চায় চালকুমড়া।

চালকুমড়া খাওয়া এই সংসার

নন্দনকানন হয়ে উঠতে পারল না।

চিন্তা

আমি অনেক ভেবেচিন্তে বলেছি। তৃণের চেয়ে চিন্তার সংখ্যা বেশি।

কথাটা মগজের মধ্যে চরে বেড়িয়েছে দিনভর।

চিন্তা যায় না। চিন্তার যেন শেষ নেই। চিন্তা আনলিমিটেড।

চিন্তার ছায়া পড়ে মুখের ওপরেও। কপালে ভাঁজ পড়ে চিন্তার।

চিন্তা বড় বড় পাখনা মেলে আমার মনে হাওয়া তুলছে।

সামুদ্রিক ফেনার মতো চিন্তা মস্তিষ্কজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।