নিছক আনন্দ–বিনোদনের জন্য সূচনা হলেও দিন দিন ফুটবলের সঙ্গে মিশে গেছে রাজনীতির জটিল অনুষঙ্গ। বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তুঙ্গ মুহূর্তে এই খেলার ইতিহাসের অন্য রকম এক আখ্যান

এ জগতে নিছক ঘরের ভেতরের সম্পর্ক থেকে শুরু করে বিপুল কলেবরের আন্তর্জাতিক আয়োজন—রাজনীতি নেই কোথায়? ফুটবলের মতো শারীরিক কসরত আর মানসিক উত্তেজনার খেলায়ও তাই বরাবর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপ থাকে। কখনোবা ফুটবল নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতির মঞ্চ। তাই ‘নির্দোষ’ ফুটবলকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ রাখার আহ্বান যেমন অবাস্তব, তেমনই হাস্যকর।
জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব এসেছে বেশি দিন হয়নি। তবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দেশ ও জাতিতে জাতীয়তাবাদের চর্চা সেই শিল্পবিপ্লবের সময় থেকে। ভাষা, খাদ্য, পোশাক, বিনোদন, আত্মত্যাগী মানুষ, পতাকা, জাতীয় সংগীত জাতীয়তার স্বরূপ এ রকম কিছু বিষয়ের সমষ্টি। খেলাধুলাও তার আরেক উপাদান, যা জাতির ভালোমন্দ এবং আদর্শগত অবস্থান প্রকাশ করে। খেলা যেমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণকে প্রভাবিত করে, তেমনি রাষ্ট্রও প্রভাবিত করে খেলাকে। খেলায় সফল হলে জাতীয়ভাবে নিজেদের শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরতে আপাতগণতান্ত্রিক তো বটেই, অন্যান্য শাসনব্যবস্থাসম্পন্ন দেশও উদ্গ্রীব। রাষ্ট্রের কূটনৈতিক আন্তসম্পর্ক স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খেলা কিংবা ফুটবল এমন এক প্রক্রিয়া, যার আয়োজন পারস্পরিক যুদ্ধের আয়োজনের চেয়ে নির্দোষ ও নিরাপদ।
ইউরোপে শুরু হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপকে ইউরোপের দেশগুলো তো বটেই, সারা পৃথিবী রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে এবং করছে। এই যে মরুভূমির বুকে প্রথম বিশ্বকাপ, সে সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়া প্রচুর সতর্কবাণী প্রচার করেছে। কাতারে স্টেডিয়াম বানাতে আয়োজক দেশটি নৃশংসতার আশ্রয় নিয়েছে, নির্মাণকাজের সময়ে বিদেশি শ্রমিকদের অপমৃত্যুর বিষয়টি চেপে গেছে। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রহীনতা, সমকামিতার ওপর নিষেধাজ্ঞা এমনকি মৃত্যুদণ্ডের বিধান, প্রচুর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগিয়ে স্টেডিয়ামের চারদিকে বায়ুদূষণ—নানান অভিযোগ এসেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের। ওদিকে মানবাধিকারের প্রশ্নে হয়তো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হতে পারে। আবার রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করাও তাদের যুদ্ধজনিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের শাস্তিস্বরূপ। সুতরাং এ খেলা রাজনৈতিকই।
ফুটবল একবার এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল। উনিশ দশকের শুরুর দিকে দুটো দেশের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের অমিল, আঞ্চলিক বিরোধ, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে বিরোধিতার পরিস্থিতি চলছিল। ফুটবল সেই বিরোধিতায় নিমজ্জিত হন্ডুরাস আর এল সালভাদরের মধ্যে যুদ্ধের আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি দেশ দুটো কনকাকাফ অঞ্চল থেকে নবম বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে মুখোমুখি হয়। খেলার মাঠ থেকে তাদের কেবল ক্রীড়াযুদ্ধ নয়, ভৌগোলিক যুদ্ধেরও সূচনা, ইতিহাসে যার নাম ‘ফুটবল-যুদ্ধ’ কিংবা ‘এক শ ঘণ্টার যুদ্ধ’ হিসেবে থেকে গেছে।
এদিকে চলতি বিশ্বকাপের কয়েক দিন আগে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলে আর্জেন্টিনার সঙ্গে তাদের এক প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল। এর পেছনে গুরুতর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের গন্ধ ছিল। ধারণা করা যায়, ইসরায়েল জেরুজালেমে খেলাটি আয়োজন করে শহরটির ওপর তাদের একচ্ছত্র আধিপত্যের কথা বিশ্ববাসীকে জানাতে চেয়েছিল। তাতে করে জেরুজালেমের ওপর যে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নেই, তা প্রমাণ করা সহজ হতো। ঠিক তখনই আর্জেন্টিনা তাদের দেখিয়েছে রেড কার্ড। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে আয়োজিত ম্যাচটি রাজনৈতিক কারণেই বাতিল হয়েছে।
দিন কয়েক হলো, ব্রাজিলে মানুষ হলুদ-সবুজ জার্সি কিনতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন, কেউ আবার তাঁকে প্রেসিডেন্টের সমর্থক মনে করেন নাকি! কারণ, ব্রাজিলের হলুদ ক্যানরি পাখির রঙের কানারিনহো জার্সির রং পুনর্নির্বাচনের প্রার্থী প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো ছিনিয়ে নিয়েছেন। তাঁর সমর্থকদের দেখা যাচ্ছে একই রঙের জার্সিতে। সমর্থন আদায়ের এক নিরীহ ও চমৎকার কৌশল বটে। বিরোধী বা নিরপেক্ষরা চেঁচামেচি করছেন, রাজনীতির সঙ্গে খেলাকে মেশানো যাবে না! তবে এই প্রথম নয়, ১৯১৪ সালে দিলমা রুসেফকে গদি থেকে সরানোর জন্য যাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁদের গায়েও ছিল একই রঙের পোশাক। বহুল জনপ্রিয় জার্সির রং চুরি করা হয়েছিল রাজনীতিতে সফল হওয়ার প্রত্যাশা থেকেই।
ফুটবল কোনোমতেই সাধারণ নির্দোষ কোনো খেলা নয়। হাজার হাজার মানুষের আবেগ ও স্বপ্ন-কল্পনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা খেলাটির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। আধুনিক ফুটবলের শুরুর দিক থেকেই রাজনীতিবিদেরা ফুটবলের তারকাকে নিজের সমর্থনের প্রচারযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। সে ধারা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেসি এখন যে কারণে আঘাতপ্রাপ্ত ও খেলায় অনুপস্থিত হয়েও ভক্তের রোষানলের শিকার হয়েছেন, সমর্থনের হাত বাড়িয়ে একজন রাজনৈতিকভাবে সুবিধাবাদী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ফলেই।
যাহোক, প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রুদেশের সঙ্গে খেলায় জয় লাভ করা যেন যুদ্ধ বিজয়ের নামান্তর—মানুষের মনে খেলার ব্যাপারে এ রাজনৈতিক চেতনা বরাবর জাগ্রত থাকে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে কেউ নিজের দেশের দলকে পরাজিত হতে দিতে চান না। এই উপায়ে ফুটবলের প্রতি আবেগকে পুঁজি করে বহু শাসক প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছেন। বেনিতো মুসোলিনি থেকে শুরু করে স্বয়ং হিটলার—কেউই এই সুযোগ ছাড়েননি। এমনকি আর্জেন্টিনার শাসক হুয়ান পেরন ১৯৪৯ সালের কোপা আমেরিকা ও ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে নিজ দেশকে অংশগ্রহণ করতে দেননি। দল হেরে গেলে জাতির মনোবল নষ্ট হবে—দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এই আশঙ্কায়। ওদিকে বর্ণবৈষম্যের আধিক্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী ফুটবল দলকে আফ্রিকান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার বর্জন করেছে। এভাবে ফুটবলকে প্রায়ই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, কমিউনিস্ট দেশগুলোর অবস্থা ভাবলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লোভাকিয়া কিংবা য়ুগোস্লাভিয়া ভেঙে টুকরা টুকরা দেশে পরিণত হয়েছে, যারা জাতিসংঘের সদস্যপদ চাওয়ার আগেই ফিফার সদস্য হওয়ার জন্য ধরনা দিয়েছে। বলতে গেলে রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ দাঁড়িয়েছে চারটিতে—সীমানা, জনগণ, সরকার ও জাতীয় ফুটবল দল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও ইউরোপে জার্মানির ভাবমূর্তি ছিল ‘অতীত যুদ্ধশত্রু’। ইউরোপের অনেকের কাছেই জার্মানির ইতিহাস ১৯৪৫ সালে থেমে আছে। এর পেছনে কিছু গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। তবে ইংল্যান্ডের আপত্তি সত্ত্বেও একসময় ফিফা জার্মানিকে দলভুক্ত করেছিল। কিন্তু ফ্রেঞ্চদের সিদ্ধান্তে ১৯২০ ও ১৯২৪ সালের অলিম্পিকে জার্মানির অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা ছিল যুদ্ধ শুরুর হোতা হওয়ার শস্তিস্বরূপ। আবার উল্টোভাবে কূটনৈতিক সিদ্ধান্তেও খেলার ভূমিকা অপরিসীম। ফ্রান্সের রেসিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফিলিপ বদিলন নিজের স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেন, কূটনৈতিক থাকার সময় একবার আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছিল। সাক্ষাতের ঠিক আগে ফ্রান্স আর জার্মানির খেলা দেখার জন্য সময় চেয়ে নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। খেলার পর ফ্রান্সের চাওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্টকে আর কিছুই বলতে হয়নি। খেলাই সব সমাধান করে দিয়েছে।
‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি’ আর ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি’ নামে আমাদের দেশের মানুষেরা আপাত–বাইনারি পদ্ধতিতে ভাগ হওয়ার আগেও দুই ভাগই ছিল—মোহামেডান আর আবাহনী। দুই পক্ষের রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্থক্য বা হার–জিতের প্রসঙ্গ এলে কখনো তুমুল মারধর শুরু হয়ে যেত। খেলার শেষে স্টেডিয়ামে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য। এই ঘটনা একটি জাতির কেবল বিশৃঙ্খল স্বভাবই জানায় না, ফুটবল-উন্মাদনার কথাও জানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হাজার হাজার ছাত্র একত্র হয়ে বড় পর্দায় বিশ্বকাপ দেখার আয়োজনের উন্মাদনা সে তুলনায় কী আর এমন! হাল আমলে দুর্মূল্যের জমি বিক্রি করে বাজারে একজন মানুষের পাঁচ কিলোমিটার আর্জেন্টিনার পতাকা বানানোও একই উন্মাদনার ফসল। এ তো কেবল ব্যক্তির উন্মাদনা। দেশের বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও কি তা–ই? যেমন কোনো এক সূত্র থেকে জানা যায়, কাতার বর্তমান আয়োজনে ব্যয় করছে ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার কিন্তু বিপরীতে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে মাত্র ১ হাজার ৭০০ কোটি। আয়োজনের স্বার্থেই এই ত্যাগ, তবে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ কেবল উন্মাদনা নয়। কাতার জানে, আর্থিক ক্ষতি হলেও আয়োজনের সুনামকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীকালে বড় বড় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা সম্ভব।
আমাদের ভূখণ্ডের কথা ধারাবাহিকভাবে বলতে গেলে, বাংলার ফুটবল প্রথম থেকেই রাজনীতি ও ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ফুটবল নিয়ে উন্মাদনার শুরু আর জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম একই সময়ে। পর্যায়ক্রমে ফুটবল দল মোহনবাগানের সঙ্গে মোহামেডান আর ইস্ট বেঙ্গল যোগ হয়। তৎকালীন মুক্তি আন্দোলনের ও ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে এই দুই দলের গভীর সম্পর্ক ছিল। সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও ফুটবল তখন ঢুকে গেছে অনায়াস। যেমন কবিতায় শক্তিশালী ও সুঠাম যুবকের কথা ভাবতে গিয়ে ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ভেবেছেন ফুটবল খেলোয়াড়ের কথা। বাসে মেয়েদের উত্ত্যক্তকারীকে শায়েস্তা করার জন্য আবির্ভাব ঘটিয়েছেন এক ফুটবল বীরের।
‘মুখ থেকে টেনে ফেলে দিলেম চুরোট রাস্তায়।
হাতে মুঠো পাকিয়ে একবার তাকাল কট্মট্ ক’রে—
আর কিছু বললে না, একলাফে নেমে গেল।
বোধ হয় আমাকে চেনে।
আমার নাম আছে ফুটবল খেলায়, বেশ একটু চওড়া গোছের নাম।’
খোদ বাংলাদেশে প্রথম ফুটবল দল তৈরি হয়েছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সমর্থন ও অর্থসহায়তার উদ্দেশ্যে দলটি সংগঠিত হয়, নাম ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’। স্বাধীন বাংলা বেতারের মাধ্যমে ডাক পেয়ে খেলোয়াড়েরা সীমানা পেরিয়ে ভারতের মাটিতে মিলিত হন। কলকাতা ও মহারাষ্ট্রে ১৬টি ম্যাচ খেলে তারা ১২টিতে জয়লাভ করেন। খেলার মাধ্যমে উদ্বাস্তু ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাড়ে তিন লাখ রুপি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। তৎকালীন বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বিরুদ্ধে মনসুর আলী খান পতৌদির নেতৃত্বে মাঠে নামে মহারাষ্ট্র ফুটবল দল। গ্যালারি পূর্ণ থাকে দিলীপ কুমার, সায়রা বানু, সাংস্কৃতি অঙ্গনের আরও গুরুত্বপূর্ণ মানুষে। খোদ শর্মিলা ঠাকুর আসেন বাংলাদেশের সমর্থনে স্লোগান দিতে। লড়াকু খেলোয়াড়েরা তখন মুক্তিযোদ্ধা! তাঁদের হাতে স্টেনগান বা পকেটে গোলাবারুদের বদলে পায়ে ছিল ফুটবল। যেকোনো মহান স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্তরালে অসংখ্য ক্ষুদ্র যুদ্ধ লুকিয়ে থাকে। যুদ্ধে নিয়োজিত নিষ্ঠাবান মানুষ একমনে নিজের ক্ষেত্রে কাজ করে যান। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়েরাও তা–ই করেছিলেন। বাংলাদেশের নতুন পতাকা হাতে মাঠ প্রদক্ষিণ করে উড়িয়েছিলেন তাঁরা। নদীয়ার ম্যাচে স্বীকৃতিবিহীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর দায়ে সেখানকার ডিসিকে পরদিন চাকরিচ্যুত করা হয়। ফুটবল আধুনিক পৃথিবীর বহু রাজনৈতিক সংগ্রামের সঙ্গে এভাবেই হয়তো জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে প্রথম ক্রীড়া পুরস্কার নিশ্চয়ই স্বাধীন বাংলা দলেরই পাওয়ার কথা ছিল। তা কেন মেলেনি, সে-ও হয়তো কোনো রাজনীতির মারপ্যাঁচের কাহিনি।
খেলার মাধুর্যে এ দেশের খেলোয়াড়কে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ বলা হয়েছিল কখনো। সেদিন আর নেই। পৃথিবীর ২১১টি দেশের ফুটবল দলের মধ্যে বাংলাদেশ ফুটবল দল এখন ১৯২তম। বিশ্ব তো নয়ই, সার্ক ফুটবল বিজয় এখন বাংলাদেশের ফুটবল দলের লক্ষ্য। হাল আমলে নারী ফুটবলাররা অবশ্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছেন। তবে দেশের ফুটবলার বা ভক্তরা এখন আন্তর্জাতিক ফুটবল দেখাতে মেতে আছেন। অন্যদিকে আমাদের দেশের ফুটবল ক্লাবগুলোর ভেতর হাউজি বা ক্যাসিনোর আড্ডা জমার খবর পত্রপত্রিকা মারফত অনেক আগেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কোন রাজনীতির কবলে পড়ে সংগঠক ও খেলোয়াড়েরা মাঠের অনুশীলন থেকে মুখ ফিরিয়ে ক্যাসিনোর গুপ্ত ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন—তা অবশ্যই ভাবনার দাবি রাখে। শেষে এটা বলতে হবে, রাজনীতি খেলাকে প্রভাবিত করবে, প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণও করবে—এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।