গ্রাফিকস: প্রথম আলো
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

সংস্কৃতি

কেমন ছিল ওয়ানগালা উৎসবের আদি রূপ

গারোরা নিজেদের ‘মান্দি’ বা ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দিতে অধিক পছন্দ করে। তাদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওয়ানগালা। এ উৎসবকে তারা বলে—ওয়ান্না, ওয়ানাগালা, ওয়ানমা রংচুয়া ও দ্রুয়া ওয়ানবলা। এ সময়ে গারো গ্রামগুলোতে চলছে ‘ওয়ানগালা’ উৎসবের নানা প্রস্তুতি। নৃত্য ও গানের মহড়ায় ব্যস্ত সবাই। ‘ওয়ানগালা ওয়ানগালা আচিকরাং ওয়ানগালা...ওয়ানগালা ওয়ানাগালা...মিদ্দিনা রুগালা’—মনোমুগ্ধকর এই গানের সুর ধ্বনিত হয় গ্রামগুলোতে।

সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল কাটার সময় ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন চলে। পরপর দুই বছর হালুয়াঘাট উপজেলার গারো গ্রামে খুব কাছ থেকে দেখেছি উৎসবটি।

‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেব-দেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা। গারোদের বিশ্বাস, দেবতা মিসি সালজংয়ের নির্দেশে সূর্য বীজ থেকে চারার অঙ্কুরোদ্‌গম ও তার পরিপক্বতা ঘটায়। তাই ফসল গ্রহণের আগে তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় এ উৎসবে। একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলা হয়ে থাকে।

এ উৎসবের নিয়ম অনুসারে, জুমখেতের মাঝখানের কিছু অংশের ধান কাটা হয় সবশেষে। ওই স্থানকে গারোরা বলে আ’সিরকার স্থান। ধান কাটা হয় দেবতার উদ্দেশ্যে ধূপ উৎসর্গ করে। অতঃপর গোড়া থেকে কেটে আঁটি বেঁধে ধান নিয়ে আসে বাড়িতে। এ সময় সবাই আনন্দধ্বনি করে। তাদের বিশ্বাস, শেষ ফসলের সঙ্গে তারা দেবতাদেরও বাড়িতে নিয়ে আসে। তারা মনে করে, দেব-দেবীরা পৃথিবীতে সব সময় থাকেন না। ওয়ানগালার সময় তাঁরা ভক্তদের আশীর্বাদ করে আবার চলে যান নিজ আবাসে।

ওয়ানগালায় ধান ঘরে এনে প্রথমে গারোরা মোরগ উৎসর্গ করে মিসি সালজং বা দেবতা সূর্যের নামে। কারণ, দেবতা সূর্যের নামেই ওই স্থানে ধান রোপণ করা হয়েছিল। অতঃপর নতুন ধানের চাল দিয়ে তারা মদ তৈরি করে। এ অনুষ্ঠানের পর সংনি নকমা (গ্রামপ্রধান) সবাইকে ডেকে সভা করে ওয়ানগালা উৎসবের দিন নির্ধারণ করেন।

দিনের সংখ্যা অনুসারে সমতলের গারোরা একটি রশিতে আর পাহাড়ের গারোরা ওমাক বিগিল নামে এক প্রকার গাছের ছাল দিয়ে গিঁট বেঁধে তা ঘরের চালে বেঁধে রাখে। এক দিন পার হলেই একটি করে গিঁট খুলে দেওয়া হয়।

সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল কাটার সময় ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন চলে। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেব-দেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা। গারোদের বিশ্বাস, দেবতা মিসি সালজংয়ের নির্দেশে সূর্য বীজ থেকে চারার অঙ্কুরোদ্‌গম ও তার পরিপক্বতা ঘটায়। তাই ফসল গ্রহণের আগে তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় এ উৎসবে। একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলা হয়ে থাকে।

ওয়ানগালার আগে গারোদের কলাপাতা ছিঁড়ে ব্যবহার করা নিষেধ থাকে। উৎসবের দিন ঘনিয়ে আসার আগেই গ্রামগুলোতে মদ তৈরির ধুম পড়ে যায়। সবাই পূজার স্থান, বাড়িঘর ও গোলাঘর মেরামত ও পরিষ্কার করে। উৎসবের জন্য বাজার থেকে কিনে আনা হয় গরু, শূকর, ছাগল, মোরগ। বাড়ির লোকদের জন্য কেনা হয় নতুন পোশাক ও অলংকারাদি। উৎসবে ব্যবহারের জন্য জোগাড় করা হয় মোরগ ও ডুকুয়া পাখির পালক।

উৎসবের আগের দিনটি গারোদের কাছে অতি পবিত্র। ওই দিন কেউ গ্রামের বাইরে যায় না। কোনো কাজকর্মও করে না। সন্ধ্যারাতে পাহাড়ি গারোরা নকপান্থে নারী-পুরুষ একত্র হয়ে মদ, ভাত দিয়ে ভোজ সারে। অতঃপর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তারা নাচ–গান করে ওয়ানগালার মহড়া দেয়।

ওয়ানগালা উৎসবে ফং দিয়ে প্রিয় পানীয় চু পানের গারো আচার

ওয়ানগালার প্রথম দিনটিতে মূলত উৎসর্গের উৎসব হয়। শস্যের জননী ও ভান্ডারদেবী রক্ষিমে, গৃহদেবতা, দেবতা সূর্য প্রমুখের উদ্দেশে মদসহ উৎসর্গ করা হয় নতুন ধানের ভাত, নতুন ফসলের ফলমূল, শাকসবজি ও পশু-পাখি। এ দিন উৎসবের জন্য গরু, শূকর উৎসর্গ করে গারোরা সবার মধ্যে মাংস বিলি করে।

নকমা (গ্রামপ্রধান) নিকটস্থ ঝরনা বা খাল বা নদী থেকে দুটি কাঁকড়া ধরে এনে একটি পাত্রে রাখেন। ওই দিন দুপুরের আগে তিনি একটি লাল বা সাদা মোরগ নিয়ে জুমখেতে যান। সেখানে আ’সিরকা স্থানে সেটি মিসি সালজং বা দেবতা সূর্যের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে পূজা-অর্চনা করেন। অতঃপর বাড়ি ফিরে তিনি ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের দ্রব্যসামগ্রী সাজান।

সাজানোর পদ্ধতিটি কেমন?

ঘরের মাঝখানে কয়েকটি কলাপাতা ইংরেজি (ইউ) অক্ষরের মতো অথবা বর্গাকারে পেতে তাতে নতুন ধানের ভাত, আদা, নানা জাতের কচু, কুমড়া, সলংগা, তে, চিনারা প্রভৃতি শাকসবজি, ফলমূল দুই ভাগ করে কেটে সাজিয়ে রাখেন। পাশেই জুমখেতে ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতি—দা, কুড়াল, কোদাল, নিড়ানি প্রভৃতি রেখে কলাপাতায় ঢেকে তার ওপর রাখা হয় কয়েক মুষ্টি চাল।

এরপর একদিকে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র—দামা, দাদিক, ক্রাম, রাং, নাগরা, আদিল, কাক্ওয়া, খা’আর প্রভৃতি। চালের মটকা বা পাত্রে মালার মতো সাদা সুতা দিয়ে বেঁধে, সুতায় বেঁধে দেওয়া হয় তিনটি তুলার পি-। অতঃপর তাতে চাল পুরোপুরি পূর্ণ করে তার মধ্যে একটি মুরগির ডিম ও মোরগের পালকগুচ্ছ বসিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামের লোকেরা নকমার বাড়িতে জড়ো হলে দুপুরের পরই শুরু হয় ওয়ানগালার অনুষ্ঠান।

কীভাবে?

উৎসবের আগের দিনটি কেউ গ্রামের বাইরে যায় না। কোনো কাজকর্মও করে না। সন্ধ্যারাতে পাহাড়ি গারোরা নকপান্থে নারী-পুরুষ একত্র হয়ে মদ, ভাত দিয়ে ভোজ সারে। অতঃপর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তারা নাচ–গান করে ওয়ানগালার মহড়া দেয়। ওয়ানগালার প্রথম দিনটিতে মূলত উৎসর্গের উৎসব হয়। শস্যের জননী ও ভান্ডারদেবী রক্ষিমে, গৃহদেবতা, দেবতা সূর্য প্রমুখের উদ্দেশে মদসহ উৎসর্গ করা হয় নতুন ধানের ভাত, নতুন ফসলের ফলমূল, শাকসবজি ও পশু-পাখি।

নকমা নিজেই বা পুরোহিত লাল বা সাদা রঙের পাগড়ি ও মোরগের পালকগুচ্ছ মাথায় পরে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। প্রথমেই তিনি চাল রাখার মটকা বা পাত্রে ভান্ডারদেবী ও খাদ্যশস্যের জননী রক্ষিমের পূজা-অর্চনা করেন মন্ত্র পড়ে। অতঃপর একটি মুরগি জবাই করে তার রক্ত সুতার মালায় বাঁধা তিনটি পিণ্ডে মাখিয়ে মটকা বা পাত্রের গায়ে রক্ত ছিটান এবং ভেজা রক্তে মুরগির লোমগুলো লাগিয়ে দেন। এ সময় নতুন মদ ভান্ডারদেবীর উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়। গারোরা একে বলে ‘রংদিক’ বা ‘মিত্দে’।

ভান্ডারদেবীর পর গৃহদেবতার উদ্দেশে মন্ত্র পড়ে মদ ও পানীয় উৎসর্গ করা হয়। ঘরের ভেতরে এসে নকমা বা পুরোহিত গৃহদেবতার উদ্দেশে মোরগ উৎসর্গ করে মন্ত্র পড়ে ঘরের সামনের বেড়ায় মোরগের রক্ত ও লোম লাগিয়ে দেন। একইভাবে ঘরের মাঝখানের খুঁটির জন্যও একটি মোরগ উৎসর্গ করে তার রক্ত ও লোম মাখিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে রক্ত ও লোম লাগিয়ে দেওয়া হয় বাদ্যযন্ত্রগুলোতেও। কলাপাতায় ঢেকে রাখা কৃষিযন্ত্রপাতির ওপর মন্ত্র পড়ে মদ ঢেলেও উৎসর্গ করা হয়। এরপরই শুরু হয় উৎসবের প্রধান পূজা-অর্চনা।

নকমা বা পুরোহিত পেতে রাখা ভাত-তরকারি, ফলমূল, শাকসবজি প্রভৃতি সামনে রেখে মন্ত্র পড়ে সারা ঘরে ছিটিয়ে দেন নতুন ধানের চাল বা রান্না করা ভাত। অতঃপর সকালে ধরে আনা কাঁকড়া দুটির ওপর মন্ত্র পড়ে মদ ঢেলে একটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যটিকে একটি বাঁশের কাঠিতে বিদ্ধ করে কাঁকড়াটিকে ওপরে রেখে ঘরের মেঝেতে পুঁতে দেওয়া হয়। এই বিদ্ধ কাঁকড়াটিকেই সূর্যদেবের বিদায়কালের সহযাত্রী হিসেবে মনে করা হয়।

ওয়ানগালা উৎসবে গারোরা ডিকখায় প্রথম ফসল বিন্নি চাল দিয়ে প্রিয় পানীয় চু তৈরি করে রাখে

অতঃপর নকমা বা পুরোহিত মিসি সালজং বা দেবতা সূর্যকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্র পড়েন। তিনি পং-এর মদ সাজানো দ্রব্যসামগ্রী-ভাত-তরকারি, কৃষিজাত ফলমূল, শাকসবজি প্রভৃতির ওপর একেক করে ঢালতে ঢালতে দ্রুত আসন থেকে উঠে সম্মুখ দরজা পার হয়ে পুনরায় নিজ আসনে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ডান ও বাঁ পাশে রাখা মিল্লাম (গারো দ্বিধার তরবারি) ও স্পি (ঢাল) হাতে নিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে নাচতে আরম্ভ করেন। এ সময় সবাই সাজিয়ে রাখা বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজাতে শুরু করে। এভাবে গারো গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রুগালা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। তাই বড় বড় গ্রামে প্রয়োজনে রাতে বা পরদিনও রুগালা অনুষ্ঠান করতে হয়।

সব বাড়িতে এ অনুষ্ঠান শেষ হলে সবাই আবার নকমার বাড়িতে চলে আসে। রুগালার রাতে গারোরা নাচগান, আমোদ-প্রমোদ করে কাটায়। প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হয় পিঠা। যুবক-যুবতীরা খুশিমনে নেচে-গেয়ে পরম্পরকে মদ পান করায়। এ সময় তারা পরস্পরকে আজেয়া, দরোয়া খাবি ইত্যাদি গান দ্বারা প্রশ্ন করে ও উত্তর দেয়। প্রশ্নের উত্তর সাধারণত প্রৌঢ় নর-নারীরা দিয়ে থাকেন। এ উৎসবের মাধ্যমে এভাবেই নবীন বয়সের গারোরা জেনে যায় সৃষ্টিতত্ত্ব, দেবতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, দর্শন, পৌরাণিক কাহিনি ও গারোদের অতীত গৌরবময় ঐতিহ্য। ফলে বংশপরম্পরায় টিকে থাকে গারোদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি।

সাসাত স’আ মানে ধূপসামগ্রী উৎসর্গ। ওয়ানগালার দ্বিতীয় দিনে হয় এ অনুষ্ঠান। ওই দিন খুব সকালে গ্রামের সবাই এসে জড়ো হয় নকমার (গ্রামপ্রধান) বাড়িতে। তিনি প্রথমে তাঁর সারা ঘরে নতুন চালের ভাত ছিটিয়ে দেন। গারোদের কাছে এ ছিটানো ভাতগুলো শিলাবৃষ্টির প্রতীক। কৃষি মৌসুমে যেন সুবৃষ্টি হয় এবং খেতে ফসলের ভালো ফলন ফলে, এটি সেই কামনারই বহিঃপ্রকাশ।

সাসাত স’আ মানে ধূপসামগ্রী উৎসর্গ। ওয়ানগালার দ্বিতীয় দিনে হয় এ অনুষ্ঠান। ওই দিন খুব সকালে গ্রামের সবাই এসে জড়ো হয় নকমার (গ্রামপ্রধান) বাড়িতে। তিনি প্রথমে তাঁর সারা ঘরে নতুন চালের ভাত ছিটিয়ে দেন। গারোদের কাছে এ ছিটানো ভাতগুলো শিলাবৃষ্টির প্রতীক। কৃষি মৌসুমে যেন সুবৃষ্টি হয় এবং খেতে ফসলের ভালো ফলন ফলে, এটি সেই কামনারই বহিঃপ্রকাশ। নকমা নিজে বা পুরোহিত নকমার ঘরের চারকোণে পং-এর মদ নিয়ে দেবতার উদ্দেশে মদ উৎসর্গ করেন ভান্ডারে ও মালজুরিতে। অতঃপর তিনি ধূপ পোড়া দিয়ে দেবতা সূর্য বা মিসি সালজংয়ের নামে মন্ত্র পড়ে ধূপ উৎসর্গ করে সারা ঘর ধোঁয়ায় ভরিয়ে দেন। ধূপের কালো ধোঁয়া ঘরের বাইরে চলে গেলে আগামী বছর মেঘ এভাবেই ভেসে এসে বৃষ্টি বর্ষণ করবে বলে গারোরা বিশ্বাস করে। তারা মনে করে, দেবতা সূর্য ধূপের সুগন্ধে খুশি হন।

এ সময় বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজানো হয় এবং গারোরা খামাল মিল্লাম ও স্ফি নিয়ে ‘গ্রিকা’ নাচ শুরু করে। নাচের ফাঁকে চলে মদ ও খাজি পরিবেশন। তারা উঠানে বৃহৎ বৃত্তাকারে নানা অঙ্গভঙ্গি করে নাচে ও গান গায়। একে সা’আডাল বা মারা রোয়া বলে। এটি মূলত মুক্ত নাচ ও গান। এভাবে নাচ-গান ও ভোজন-পান প্রতিটি বাড়িতে সম্পন্ন হয়। ওয়ানগালার এদিনের অনুষ্ঠানগুলোই বেশি আকর্ষণীয়।

ওয়ানগালা উৎসবে গারো নারীদের আনন্দ নৃত্য

ওয়ানগালার তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান ক্রাম গগাতা বা জল ওয়াতা। ‘ক্রাম গগাতা’ মানে নকমার ক্রাম নকমার ঘরে তুলে দেওয়া। আর ‘জল ওয়াতা’র অর্থ শেষবিদায়। ওই দিন সকালে নাশতা সেরে সবাই নকমার বাড়িতে সমবেত হয়। নকমার বাড়িতে দেব-দেবীদের উদ্দেশে পুনরায় সংক্ষিপ্ত আকারে রুগালা ও সাসাত স’ওয়ার আচারগুলো করা হয়। সারা দিন গ্রামের সব বাড়িতেই এ অনুষ্ঠান হয়। আগের দিনের মতোই চলে নাচ-গান, ভোজন-পান। তবে তাতে আগের মতো জৌলুশ থাকে না। যুবক-যুবতীদের মধ্যে এদিন বিচ্ছেদের ভাব জেগে ওঠে।

সন্ধ্যার ঠিক আগে সবাই বাদ্যযন্ত্রগুলো নিয়ে হাজির হয় নকমার বাড়িতে। তিনি তখন শেষবারের মতো সবাইকে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে বলেন। বাদ্যযন্ত্রে সুর উঠতেই নকমা তাঁর ঘরের মালজুরিতে দেবতা সূর্য ও রক্ষিমের উদ্দেশে শেষ রুগালা ও সাসাত স’ওয়া করে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অতঃপর তাঁরা যেন আগামী বছর আবার এসে আশীর্বাদ করেন সে আবেদন জানিয়ে খুশিমনে তাঁদের বিদায় দেন। দামা, ক্রাম, রাং প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র নকমার ঘরেই জমা থাকে। এভাবেই ওয়ানগালা উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

সময়ের হাওয়ায় এখন বদলে গেছে গারোদের উৎসবগুলো। ধর্মান্তরের ফলে এখনকার মান্দি বা গারোরা আজ হারিয়ে ফেলেছে ওয়ানগালা উৎসবের আদি রূপটিও। উৎসবের অনেক আচার তাদের কাছে কুসংস্কারমাত্র। ফলে ওয়ানগালা উৎসব এখন কেবল নাচ-গান আর কিছু আচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু তবু এ উৎসবেই ফুটে ওঠে গারোদের ঐতিহ্য ও আদি সংস্কৃতি।