জীবনের গল্প

'বড় হয়ে পুলিশ হইতে চাই'

সাগর আহমেদ
সাগর আহমেদ

তারপর এই হাসপাতালের ক্যানটিনে কাজ জোটে। থাকে মিরপুর ২ নম্বরে ওই চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে।

জানতে চাই, ‘কত দিন ধরে চাকরি করছ এখানে?’

 ‘এই ধরেন তিন মাস।’

‘বেতন কত পাও?’

 ‘তিন হাজার টাকা।’

 ‘এই টাকায় হয় তোমার?’

 ‘পুরো টাকাই বাড়ি পাঠাই দিই।’

 ‘কেন, তোমার কোনো খরচ নাই?’

 ‘আমি তো এই ক্যানটিনেই খাই। তাই খাওয়ার খরচ নাই। কোনো মাসে যদি জামাকাপড় কিনি সেই মাসে কিছু টাকা রেইখে বাকি টাকা বাড়ি পাঠাই। আর ডেইলি বকশিশ পাই ৫০-৬০ টাকা। তা দিয়া মোবাইল ফোনে টাকা ভরি। টুকটাক এটা-সেটা কিনি। আমার চইলে যায়।’

‘সকাল কয়টায় এখানে আসো আর কখন বাসায় যাও’

 ‘সকাল আটটায় আসি। আর রাত আটটায় ছুটি হয়।’

সপ্তাহের সাত দিনই সাগরকে কাজ করতে হয়। তবে মাঝেমধ্যে ছুটি চাইলে তা পাওয়া যায়। দুই ঈদেও ছুটি মেলে। ছুটি পেলে পাড়ার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সিনেমা হলে চলে যায় সিনেমা দেখতে। কখনো কখনো বেড়াতে যায়। চিড়িয়াখানায় বেশ কয়েকবার গেছে। পশুপাখি দেখতে সাগরের বেশ ভালো লাগে। সিনেমা হল ছাড়াও মোবাইল ফোনেও সিনেমা দেখে। সাগর যে বাসায় থাকে, সেখানে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ইউটিউবে ঢুকে পছন্দের সিনেমা দেখে। ফেসবুকেও একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে সাগরের।

‘কোন নায়ককে বেশি পছন্দ?’

একটু যেন লজ্জা পায় সাগর। বলে, ‘আরিফিন শুভ। তার একটা সিনেমা দেখছি ছুঁয়ে দিলে মন। খুব ভালো লাগছে।’

‘বাংলাদেশের কোন নায়িকাকে ভালো লাগে?’

সাগরের ঝটপট উত্তর, ‘কাউরেই না।’

‘একজনকেও ভালো লাগে না?’

 ‘না’।

‘ইন্ডিয়ান সিনেমার কোন নায়ককে ভালো লাগে?’

‘ঋ​িত্বক রোশন আর শাহরুখ খানকে।’

‘নায়িকা কাউকে ভালো লাগে না?’

‘হিন্দি ছবির সব নায়িকাকে ভালো লাগে।’

‘কাকে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?’

আবারও যেন লজ্জা পায়। একটু হেসে বলে, ‘দীপিকা পাড়ুকোন।’

‘তুমি তো মোবাইল ফোনে গানও শোনো। কার গান শুনতে ভালো লাগে?’

‘আরেফিন রুমির গান খুব ভালো লাগে।’

সিনেমা দেখা আর গান শোনা ছাড়াও সাগরের আরেকটি শখ আছে। আর তা হচ্ছে বই পড়া। বই পড়তে খুব ভালো লাগে সাগরের। ভূতের গল্প তার বেশি পছন্দ। এ বছরের বইমেলায় গিয়ে সে বেশ কয়েকটি ভূতের গল্পের বই কিনেছে।

‘আর পড়ালেখা করবে না?’

‘করব, সামনের বছর স্কুলে ভর্তি হব।’

‘ঢাকায় না গ্রামের বাড়িতে?’

‘না, ঢাকায়।’

‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’

‘পুলিশ হইতে চাই।’

‘কেন পুলিশ হতে চাও? পুলিশেরা অনেক সাহসী হয় সে জন্য?’

 ‘না, আমার এক মামা আছে পুলিশের এসআই। মামা আমারে বলছে এসএসসি পাস করার পর আমারে পুলিশের চাকরি দেবে। পোস্টিং হবে যশোরে। বাড়ির কাছে চাকরি হবে। তাই এই চাকরিই মনে ধরছে।’

‘ঢাকা শহর ভালো না যশোর ভালো?’

‘যশোর ভালো। সেখানে অনেক শান্তি।’

‘ঢাকা শহরের কোন জিনিসটা খারাপ লাগে?’

‘ঢাকা শহরে গ্যাঞ্জাম বেশি। বড় ভাই-ছোট ভাইয়ে মারামারি হয়। এগুলা ভয় লাগে। আর মানুষের ভিড় বেশি। এত ভিড় ভালো লাগে না। গ্রামে এসব ঝামেলা নাই।’

এই সময় ডাক পড়ল সাগরের। শুরু হয় তার এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ছোটাছুটি।

রোকেয়া রহমান: সাংবাদিক