Thank you for trying Sticky AMP!!

তারাবিহর নামাজ ২০ রাকাত ও খতমে কোরআন

সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। এ মাসের বিশেষ ইবাদত হলো তারাবিহ নামাজ। এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ৩৬)

রমজানের চাঁদ দেখা গেলে সাওম বা রোজা পালন শুরুর আগেই তারাবিহ সালাত আদায় করা সুন্নত। এমনকি যাঁরা শরিয়তসম্মত কোনো গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে রোজা পালনে অক্ষম, তাঁরাও সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে তারাবিহর নামাজ পড়বেন।

পুরুষদের জন্য তারাবিহ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। জামাতে শরিক হতে না পারলে একা হলেও পড়বেন। নারীরা তারাবিহ সালাত ঘরে আদায় করবেন। শিশুরাও সামর্থ্যমতো বড়দের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব তারাবিহ নামাজ পড়বে।

তারাবিহ সালাতের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ও উদ্দেশ্য কোরআন তিলাওয়াত করা ও শোনা। রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস। তারাবিহ নামাজে পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার পাঠ করা সুন্নত। একে খতম তারাবিহ বলা হয়। তারাবিহ নামাজে পূর্ণ কোরআন মজিদ না পড়ে বিভিন্ন সুরা বা আয়াত দিয়ে তারাবিহ নামাজ পড়াকে সুরা তারাবিহ বলা হয়

‘তারাবিহ’ অর্থ বিশ্রাম নেওয়া ও স্বস্তি লাভ করা। শব্দটি ‘তারবিহাহ’ শব্দের বহুবচন। পরিভাষায় ‘রমজান মাসে এশার নামাজের পর আদায়কৃত সুন্নত নামাজকে তারাবিহ নামাজ বলে।’ (কামুসুল ফিকহ) তারাবিহ নামাজে প্রতি চার রাকাত পরপর বিরতির মাধ্যমে বিশ্রাম নেওয়া হয় বলে এর নাম তারাবিহ। তারাবিহর নামাজে দেহ–মনে প্রশান্তি ও স্বস্তি আসে বলে এর নাম তারাবিহ বা শান্তির নামাজ। ২০ রাকাত তারাবিহর নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

নামাজ ও রোজা ইসলামের অন্যতম প্রধান দুটি ইবাদত। ধনী–গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য এ দুটি ফরজে আইন হিসেবে অবশ্যপালনীয়। রোজার সঙ্গে তারাবিহ নামাজের সম্পর্ক অত্যন্ত সুনিবিড়। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নত করেছি।

যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে দিনের বেলায় সাওম বা রোজা পালন করবে এবং রাতে তারাবিহ সালাত আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হয়ে যাবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়।’ (নাসায়ি, পৃষ্ঠা: ২৩৯)

Also Read: রমজানের বিধিবিধান: করণীয় ও বর্জনীয়

তারাবিহ সালাতের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ও উদ্দেশ্য কোরআন তিলাওয়াত করা ও শোনা। রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস। তারাবিহ নামাজে পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার পাঠ করা সুন্নত। একে খতম তারাবিহ বলা হয়। তারাবিহ নামাজে পূর্ণ কোরআন মজিদ না পড়ে বিভিন্ন সুরা বা আয়াত দিয়ে তারাবিহ নামাজ পড়াকে সুরা তারাবিহ বলা হয়।

সুরা তারাবিহ পড়লেও ২০ রাকাত পড়া সুন্নত। একা পড়লেও ২০ রাকাতই পড়া সুন্নত। মহিলাদের জন্যও ২০ রাকাত তারাবিহ সুন্নত। এশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের আগপর্যন্ত তথা সাহ্‌রির শেষ সময় পর্যন্ত তারাবিহ নামাজ পড়া যায়। একসঙ্গে একই সময় ২০ রাকাত পড়তে না পারলে ভেঙে ভেঙে আলাদাভাবেও পড়া যাবে। যেহেতু এটি সুন্নত নামাজ, তাই কোনো কারণে পড়তে না পারলে অসুবিধা নেই, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজাদারের উচিত তারাবিহ নামাজ পড়তে সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

উমরে সানী ষষ্ঠ খলিফায়ে রাশেদ হজরত উমার ইবনে আবদুল আজিজ (রা.)–এর খিলাফতকালে বিখ্যাত তাবেয়ি ও প্রথম মুহাদ্দিস হজরত আবদুল ইবনে মুবারক (রা.)–এর তত্ত্বাবধানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে এক রুকু করে তিলাওয়াতের প্রচলন হয়।

Also Read: স্বাধীনতা ও বিজয়ে রমজান

২৭ রমজানে খতম তারাবিহ শেষ করা হয় এবং নিয়মিত ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন ২০ রাকাত করে তারাবিহ নামাজ পড়া হয় বলে কোরআন মজিদে (২৭ x ২০) ৫৪০ রুকু হয়েছে। এ ধারা এখনো চালু রয়েছে।

সাহাবায়ে কিরামের জমানা থেকে ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান প্রতিষ্ঠিত সুন্নত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রা.) বলেন, ‘তবে তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, নিশ্চয় উবাই ইবনে কাআব (রা.) রমজানে রাত্রি জাগরণে ২০ রাকাতে তারাবিহ নামাজ পড়তেন এবং ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন।’ তাই উলামায়ে কিরাম মনে করেন, (২০ রাকাত তারাবিহ) এটাই সুন্নত। কেননা তা আনসার ও মুহাজির সব সাহাবির মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত, কেউ তা অস্বীকার করেননি।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    smusmangonee@gmail.com