মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

মতামত

যুক্তরাষ্ট্রের আসল শত্রু দেশটির ভেতরেই

যুক্তরাষ্ট্র গঠনের পর থেকে প্রায় আড়াই শ বছর ধরে এক বড় সৌভাগ্য ছিল—সেনাবাহিনী কখনো দেশের ভেতরের রাজনৈতিক বিরোধ মেটানোর হাতিয়ার হয়নি। সেনাবাহিনী কেবল বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে দেশ রক্ষা করেছে।

অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা নাগরিকদের দমনে তাদের ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সেই ইতিহাস বদলানোর চেষ্টা করছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে এমনভাবে কাজে লাগাতে চাইছেন, যেন তা তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয় দেখানোর হাতিয়ার হয়। তিনি তাঁর বিরোধীদের ‘দেশের ভেতরের শত্রু’ বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন। আর সেই ‘শত্রু’ দমন করতে তিনি সেনাবাহিনী নামাতে চাইছেন।

এ রকম ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে শেষ দেখা গিয়েছিল ১৮৬৭ সালে, যখন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন আর কংগ্রেস পুনর্গঠন ইস্যুতে সাংবিধানিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক চাপের কাজে টেনে আনার চেষ্টা হয়েছিল। এরপর আর এমন ঘটনা ঘটেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান অবশ্যই নাগরিকদের নেতৃত্বে হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কংগ্রেসকে তার আর্টিকেল ১ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রয়োগ রোধ করতে হবে। কংগ্রেসই একমাত্র বাজেটের ক্ষমতা রাখে এবং এটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করাও তার দায়িত্ব।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা আগে থেকেই এ ধরনের বিপদ নিয়ে সতর্ক ছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেই রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তিনি সেনাবাহিনীকে বেসামরিক প্রশাসনের ওপর চড়াও করে রেখেছিলেন, যা স্বৈরাচারের লক্ষণ। আজ ট্রাম্প সেই বিপজ্জনক পথেই হাঁটছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা শুধু সেনাবাহিনীকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না, তাঁরা সেনাবাহিনীতে থাকা নিজেদের দেশের নাগরিকদের নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন। ১৮০৭ সালে কংগ্রেস একটি আইনের সিরিজ পাস করে, যা একসঙ্গে ইনসারেকশন অ্যাক্ট নামে পরিচিত।

এই আইনে বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট শুধু নির্দিষ্ট শর্তপূরণ হলে সেনা নামাতে পারবেন, যেমন কোনো গভর্নর আবেদন করলে বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা আক্রমণ হলে বা কোনো রাজ্য নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার নষ্ট করলে। ১৮৭৮ সালে পোসে কমিটেটাস অ্যাক্ট নামের আরেক আইন পাস করা হয়। সেটি স্পষ্টভাবে সেনাবাহিনীকে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহার করতে দেয় না, যদি না সেটিকে কংগ্রেস অনুমোদন করে।

অনেকেই ইনসারেকশন অ্যাক্টকে পোসে কমিটেটাস অ্যাক্টের ব্যতিক্রম হিসেবে দেখেন। কিন্তু বাস্তবে উভয় আইনই সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।এ আইনগুলো পরিষ্কার করে দেয়, কেবল খুব সীমিত ও নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সেনা ব্যবহার করা যাবে।

তবু ট্রাম্প ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহার করছেন। তিনি সেনা মোতায়েন করেছেন ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের সহায়তায় এবং এটি স্পষ্ট যে তিনি এই সেনা ব্যবহার থামানোর কোনো সদিচ্ছা দেখাচ্ছেন না। এমন কাজ তিনি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া, অরেগন ও ইলিনয় রাজ্যের গভর্নরদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে। তা ছাড়া তিনি ইনসারেকশন অ্যাক্ট ব্যবহার করেননি এবং কোনো অঙ্গরাজ্যে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দাবিও করেননি। অথচ সেখানে তিনি সেনা পাঠিয়েছেন বা পাঠাতে চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান অবশ্যই নাগরিকদের নেতৃত্বে হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কংগ্রেসকে তার আর্টিকেল ১ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রয়োগ রোধ করতে হবে। কংগ্রেসই একমাত্র বাজেটের ক্ষমতা রাখে এবং এটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করাও তার দায়িত্ব।

সাম্প্রতিক ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে, কংগ্রেসকে ইনসারেকশন অ্যাক্ট সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করতে হবে, যাতে কোনো বিদ্রোহ বা সশস্ত্র হুমকির ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত একতরফা না হয় এবং তা নির্বাহী শাখার বাইরে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাই হতে পারে। আপাতত যদি রাজ্য গভর্নরদের সার্বভৌম ক্ষমতা লঙ্ঘিত হয়, তাহলে তাঁদের উচিত ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা।

  • কোরি শ্যাকি আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের বিদেশ ও প্রতিরক্ষানীতি বিভাগের পরিচালক

  • স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ