Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোটে এরদোয়ান জিতলেও গণতন্ত্রপন্থীদের হার হবে না

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

তুরস্কে ১৪ মে (আজ) যে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে, সেটি বিশ্বে এই বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন মনে করা হচ্ছে। জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ বিরোধী জোটের প্রতিনিধি ও রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা কেমাল কিলিচদারোগলুর চেয়ে পিছিয়ে আছেন।

নির্বাচনে যদি এরদোয়ান হেরে যান, তাহলে তার বৈশ্বিক তাৎপর্য হবে অনেক। কেননা বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণতন্ত্রের যে সংকোচন প্রবণতা চলছে, তাঁর পরাজয় সেই প্রবণতার রাশ টেনে ধরবে এবং কঠোর কর্তৃত্ববাদী শাসককেও বেরিয়ে যাওয়ার দরজা দেখিয়ে দিতে পারার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর মতো গণতন্ত্রবিরোধী নেতাদের ছেঁটে ফেলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তুরস্কের বিরোধী দলগুলোর জন্য একইভাবে এরদোয়ানকে বিদায় করা অনেক কঠিন। কারণ, দেশটি পূর্ণ বিকশিত কর্তৃত্ববাদের একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।

Also Read: যে কারণে এরদোয়ান জিতলেও হারতে বাধ্য

২০ বছরের বেশি সময় ধরে (অর্থাৎ ট্রাম্প ও বলসোনারোর চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে) এরদোয়ান ক্ষমতায় আছেন এবং নিজের মতো করে রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে তিনি এই পুরো সময়টা ব্যয় করেছেন।

এরদোয়ান আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের সব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন এবং ইতিমধ্যে কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অধিকতর কেন্দ্রীভূত করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ খুব কমই রেখেছেন। এখন পার্লামেন্ট তাঁর হাতের পুতুল এবং বিচার বিভাগকেও তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সামরিক বাহিনী দ্বিধাবিভক্ত এবং পুলিশ বাহিনী তাঁর একান্ত অনুগত।

অতি-ডানপন্থী দল ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) সঙ্গে এরদোয়ানের জোট গড়ার অর্থ হলো কারও ওপর চড়াও হওয়ার জন্য তাঁর হাতে একটি আধা সংগঠিত বেসামরিক মিলিশিয়া বাহিনীও আছে। এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ স্বজন ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া যেসব লোক সমানে দুর্নীতি করে যাচ্ছেন, কিলিচদারোগলু জিতলে তাঁদের সবাইকে সেই সুযোগ হারাতে হবে।

তুরস্কের গণমাধ্যমকেও এরদোয়ান মুঠোর মধ্যে নিয়ে নিয়েছেন। দেশটির বেশির ভাগ টিভি চ্যানেল ও ছাপা পত্রপত্রিকা ক্রমাগত একেপিপন্থী অবস্থান নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে, যেখানে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের অনলাইন সাক্ষাৎকার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভর করে প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) নেতা সেলাহাত্তিন দেমিরতাসকে জেলে বসে প্রচারণা চালাতে হচ্ছে।

যদি বিরোধী দলগুলো এরদোয়ানের চেয়ে বেশি ভোট পায়, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব পাবে তুরস্কের জনগণ। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তারা আবারও দেখিয়েছে, গণতন্ত্রের দাবি শুধু পশ্চিমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভোটের পর যা-ই ঘটুক না কেন, গণতন্ত্রপন্থী ভোটারদের প্রতিশ্রুতিই হলো গণতন্ত্রের বিজয়ের সর্বোত্তম গ্যারান্টি।

বিরোধীরা ভোটে জিতবে কিংবা এরদোয়ান হার মেনে নেবেন—সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা সন্দিহান আছেন। সর্বোপরি, যে নেতার হাতে এই সীমাহীন ক্ষমতা রয়েছে, তিনি তা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেবেন, সেটি মনে করা কঠিন। বিরোধী ভোটারদের এমনভাবে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা প্রবল আশাবাদে জেগে উঠতে না পারেন।

কিন্তু ‘বাস্তবতা’ থেকে যে প্রধান বিষয়টি বাদ পড়ে যাচ্ছে, সেটি হলো বিরোধীরা আশাহত হয়নি বলেই এই নির্বাচনে এরদোয়ানের হেরে হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি অন্তত অনুমান করা যাচ্ছে। ম্যাক্স ওয়েবার ১৯১৯ সালে দেওয়া ‘রাজনীতি যখন চাকরি’ শীর্ষক বক্তৃতায় যেমনটি বলেছিলেন, ‘মানুষ যদি বারবার অসম্ভবের দিকে না যেত, তাহলে সে সম্ভবকে অর্জন করতে পারত না।’

এরদোয়ানপূর্ব তুরস্কের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ অভিযোগ ছিল, তুর্কিরা যথাযথ সংস্কৃতিমান ও গণতন্ত্রমনস্ক হয়ে উঠতে পারেনি। তখন বলা হতো, তুর্কিরা রাজনৈতিক সংকট থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের দিকে চেয়ে থাকে। এ কথা সত্য হয়ে থাকলে তুরস্কের বিরোধী দলের অবস্থা রাশিয়ার বিরোধী দলগুলোর অবস্থার চেয়ে খারাপ থাকত।

Also Read: যে কারণে এরদোয়ান জিতলেও হারতে বাধ্য

 এখন নির্বাচনের ফল যা-ই হোক না কেন, তুরস্কের জনগণ ইতিমধ্যে তাদের জেগে ওঠার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে। বিরোধী দলগুলোর বেশির ভাগই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নে এক হয়েছে এবং এরদোয়ানকে পরাজিত করতে পারলে আবার তুরস্কে সংসদীয় সরকার চালু করতে চেয়েছে।

যদি বিরোধী দলগুলো এরদোয়ানের চেয়ে বেশি ভোট পায়, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব পাবে তুরস্কের জনগণ। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তারা আবারও দেখিয়েছে, গণতন্ত্রের দাবি শুধু পশ্চিমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভোটের পর যা-ই ঘটুক না কেন, গণতন্ত্রপন্থী ভোটারদের প্রতিশ্রুতিই হলো গণতন্ত্রের বিজয়ের সর্বোত্তম গ্যারান্টি।

  • স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

  • আয়ে জারাকল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং সম্প্রতি প্রকাশিত বিফোর দ্য ওয়েস্ট: দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অব ইস্টার্ন ওয়ার্ল্ড অর্ডারস বইয়ের লেখক