দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও জাপানের বিরুদ্ধে জয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনের সামরিক মহড়া। তিয়েনআনমেন স্কয়ার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও জাপানের বিরুদ্ধে জয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনের সামরিক মহড়া। তিয়েনআনমেন স্কয়ার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মতামত

চীন যেভাবে বিশ্বব্যবস্থা বদলে দিতে চাইছে

ওয়াশিংটনের চোখে একক শক্তি হিসেবে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। সে লক্ষ্যেই তারা গড়ে তুলেছে একাধিক সামরিক আঁতাত, দেশটির চারধারে নির্মাণ করেছে দুই ডজনের বেশি সামরিক ঘাঁটি। অথচ সেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম নতুন একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। চীন যেভাবে বিশ্বব্যবস্থা বদলে দিতে চাইছে, তা নিয়ে লিখেছেন হাসান ফেরদৌস

আকাশজুড়ে ৮০ হাজার সাদা কবুতর ও ৮০ হাজার রঙিন বেলুন। একমুহূর্তের জন্য হলেও পুরো আকাশই যেন বদলে দিল তারা। ভূমিতে সে সময় সমান কদমে এগিয়ে চলেছে ১০ সৈনিক। দীর্ঘদেহী, সুদর্শন সেসব সৈনিকের দিকে তাকিয়ে মনে হতে পারে, এই ধরার নতুন অধিকর্তা তারা।

এ ব্যাপারে যদি কারও কোনো সন্দেহ হয়, তা ঘুচিয়ে দিতে লম্বা রাস্তাজুড়ে ছিল সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রের এক অভূতপূর্ব প্রদর্শনী। তার মধ্যে ছিল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, আন্তমহাদেশীয় পারমাণবিক বোমা, বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য সাঁজোয়া গাড়ি, ডুবন্ত ড্রোন ও চালকবিহীন যুদ্ধবিমান।

এমন জাঁকজমকপূর্ণ সামরিক মহড়া দেখতে ৩ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন চত্বরে সমবেত হয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত রাষ্ট্রনায়কেরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

একবার তাঁদের দিকে, একবার ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আত্মতৃপ্তি হাসি দিয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বললেন, ‘চীনা জাতি এক গর্বিত জাতি। কোনো স্বৈরশাসককেই সে ভয় করে না। আমরা নিজের দুই পায়ের ওপর শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম।’

ইতিহাসের পুনর্লিখন

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই বর্ণাঢ্য যুদ্ধমহড়ার উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকীর উদ্‌যাপন। এত দিনে আমরা শুনে এসেছি ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধে জার্মান ও জাপানকে পরাস্ত করার পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট সি জানালেন, না, অন্য কেউ নয়; সে যুদ্ধে প্রধান ভূমিকা ছিল চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের। তিনি বললেন, ‘সে যুদ্ধের প্রধান বিজয়ী শক্তি হিসেবে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।’

সির সে কথার একটি প্রধান লক্ষ্য যে কয়েক হাজার মাইল দূরে ওয়াশিংটনে টিভির সামনে বসে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাতে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। মুহূর্তেই তার প্রমাণও মিলে গেল।

কুচকাওয়াজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা না করেই ট্রাম্প নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে পাল্টা জবাব হিসেবে লিখলেন, ভুলে যাবেন না, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মার্কিন সৈনিকদের রক্তত্যাগের ভেতর দিয়েই চীন তার মুক্তি অর্জন করেছিল। কিছুটা খেদ, কিছুটা বিদ্রূপের সুরে তিনি আরও লিখলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের আমার সালাম পৌঁছে দেবেন দয়া করে।’

সির বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, তিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস নতুন করে লিখতে চান। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য এতেই সীমিত নয়। কারণ, চলতি বিশ্বব্যবস্থাই বদলে দিতে চান।

মার্কিন পর্যবেক্ষকেরাই বলেছেন, ট্রাম্পের কারণেই একসময়ের বৈরী সম্পর্ক ভুলে সি ও মোদি হাতে হাত মিলিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পুতিন। এই তিন বৃহৎ শক্তি মিলে গড়ে উঠেছে এক নতুন আঁতাত, যার লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে আমেরিকার একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করা।

সামরিক মহড়ার এক দিন আগে তিনজিয়ান শহরে অনুষ্ঠিত হয় সাংহাই কো-অপারেশন অ্যাসোসিয়েশনের (এসসিও) এক শীর্ষ বৈঠক। সে বৈঠকে সি চিন পিংকে সঙ্গ দিতে আরও অনেকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দুই মান্যবর অতিথি—রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এই তিনজনের হাতে হাত ধরে চলার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে, তাঁরা যেন থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। ওয়াশিংটনের চোখে আঙুল দিয়ে তাঁরা দেখিয়ে দিতে চান, পৃথিবী এখন আর মার্কিন নেতৃত্বে ইউনিপোলার বা এক মেরুর নয়, সে বহু মেরুর বা মাল্টিপোলার।

ঘটনাটা হয়তো অন্য সময় হলে তেমন গুরুত্ব পেত না। কিন্তু কয়েক মাস ধরেই বাণিজ্য শুল্ক প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে চীন ও ভারতের দর-কষাকষি চলছে। ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার সঙ্গে চলছে শান্তিসংলাপ।

ভারত যুক্তরাষ্ট্রের নিকট মিত্র, ‘কোয়াড’ নামে পরিচিত একটি আধা সামরিক জোটের সদস্য হিসেবে তারা কৌশলগত সম্পর্কে জড়িত। অন্যদিকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যসঙ্গী। বাণিজ্যঘাটতি পূরণের দাবি তুলে চীন ও ভারতকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্পের ভয়ে কেঁপে ওঠার বদলে দুই দেশই জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ধমকে তারা ভীত নয়।

মার্কিন পর্যবেক্ষকেরাই বলেছেন, ট্রাম্পের কারণেই একসময়ের বৈরী সম্পর্ক ভুলে সি ও মোদি হাতে হাত মিলিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পুতিন। এই তিন বৃহৎ শক্তি মিলে গড়ে উঠেছে এক নতুন আঁতাত, যার লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে আমেরিকার একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করা।

সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রেসিডেন্ট সি ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের নাম উচ্চারণ না করে সে রকম এক নতুন বিশ্বব্যবস্থা গঠনের প্রস্তাব রাখলেন। তিনি বললেন, ‘আমরা চাই এমন এক বিশ্বব্যবস্থা, যেখানে (এক পরাশক্তির আধিপত্যের পরিবর্তে) প্রতিষ্ঠা পাবে নিয়মনির্ভর বহু মেরুর এক ভিন্ন বিশ্বব্যবস্থা।’

এক মেরু নয়, বহু মেরুর বিশ্ব

খুব রাখঢাক বা কূটনৈতিক অস্পষ্টতা রেখে কথাগুলো বলেননি সি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তার কেন্দ্রে একসময় ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বের একক অধিপতি হয়ে বসে যুক্তরাষ্ট্র।

গত দুই দশকে একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশ্বিক আধিপত্য হারিয়েছে। একই সময়ে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে চীন। একুশ শতকের গোড়া থেকেই বৈশ্বিক দক্ষিণকে সঙ্গে নিয়ে চীন একটি সমান্তরাল বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার পথে পায়ে-পায়ে এগিয়েছে।

২০০৯ সালে গঠিত বহুজাতিক ব্রিকস (ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) ছিল সেই পথে একটি বড় পদক্ষেপ। কিন্তু নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রথম ইটটি পাতা হয়েছিল আরও আগে। ২০০১ সালে গঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) ছিল সেই লক্ষ্যে প্রথম সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ।

ত্রইকা বা তিন দেশ

মজার ব্যাপার হলো, চীন নয়, এমন একটি বিকল্প বিশ্বনেতৃত্বের কথা প্রথম প্রস্তাব করে রাশিয়া, নব্বই দশকের মাঝামাঝি। চীন, রাশিয়া ও ভারত নিয়ে গঠিত এমন একটি সম্ভাব্য জোট, যার নাম হবে ‘ত্রইকা’—সোজা বাংলায় তিনজন—সে প্রস্তাব করেছিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভগেনি প্রিমাকভ। তত দিনে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়েছে, তার জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়া।

প্রিমাকভ প্রস্তাব রাখলেন, আমরা তিন দেশ একজোট হলে মার্কিন-নিয়ন্ত্রিত এক মেরুর বিশ্বের বদলে একটি বহুকৌণিক বা মাল্টিপোলার বিশ্ব গঠন সম্ভব। কৌশলগত ত্রিকোণ বা স্ট্র্যাটেজিক ট্রায়াঙ্গেল হিসেবে এই ত্রইকার লক্ষ্য হবে নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও উন্নয়ন প্রশ্নে দেশ তিনটির কার্যক্রমের সমন্বয় প্রতিষ্ঠা।

সেই লক্ষ্যে ২০০২ সালে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এই তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তবে কোনো আনুষ্ঠানিক সংগঠন হিসেবে তা কখনোই আত্মপ্রকাশ করেনি।

এখন স্পষ্ট, সেটি ছিল ২০০১ সালে গঠিত হয় সিএসওর পূর্বসূরি। আর আট বছর পরে গঠিত হলো ব্রিকস, যা এখন খোলামেলাভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের প্রতি একটি স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ।

ওয়াশিংটনের চোখে একক শক্তি হিসেবে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। সে লক্ষ্যেই তারা গড়ে তুলেছে একাধিক সামরিক আঁতাত, দেশটির চারধারে নির্মাণ করেছে দুই ডজনের বেশি সামরিক ঘাঁটি। অথচ সেই চীন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম নতুন আঁতাত ব্রিকস নয়, একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। তিয়ানজিন সম্মেলনে চীন তেমন বিশ্বব্যবস্থার একটি খসড়া নীলনকশা হাজির করল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও জাপানের বিরুদ্ধে জয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনের সামরিক মহড়ায় প্রেসিডেন্ট সি পিন পিং। তিয়েনআনমেন স্কয়ার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা

সির প্রস্তাবিত নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার নাম গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভ বা বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা উদ্যোগ। লক্ষ্যমাত্রার হিসাবে তা অনেকটা আজকের জাতিসংঘের আদলে। পুরোনো ব্রেটন উডসভিত্তিক বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বদলে প্রেসিডেন্ট সি এই সংস্থার সদস্যদের জন্য একটি নতুন উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও করেছেন।

প্রাথমিকভাবে এই ব্যাংকের জন্য মূলধন হিসেবে তিনি দুই বিলিয়ন চীনা মুদ্রা ইউয়ান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া আরও ১০ বিলিয়ন ইউয়ান দেওয়া হবে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।

ডলার, যা বর্তমানে বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তার নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে একটি বিকল্প মুদ্রাব্যবস্থা চালুর কথা ব্রিকসের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছে। তিয়ানজিন বৈঠকে চীনের প্রস্তাবিত নতুন উন্নয়ন ব্যাংকটিকে সেই লক্ষ্যে একটি প্রথম সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বলে ভাবা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন চীনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে একে ‘প্রকৃত বহুকৌণিকতা’ উল্লেখ করেন। তিনি ডলারের বিপরীতে একটি ভিন্ন মুদ্রাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়াও সংস্থাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে যার যার মুদ্রা ব্যবহারের পক্ষেও জোর আওয়াজ তোলেন।

ডলারের বিপরীতে একটি বিকল্প বৈশ্বিক মুদ্রার প্রস্তাব আরও সরাসরি উত্থাপন করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। সদস্যদেশগুলোর মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্যের পাশাপাশি তিনি একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাধীন ডিজিটাল মুদ্রা ও বহুপক্ষীয় মুদ্রা বিনিময় তহবিল গঠনের প্রস্তাব রাখেন। এই তিন প্রস্তাবের একটি বড় লক্ষ্য হবে বাইরে থেকে আরোপিত কোনো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করার সক্ষমতা অর্জন।

সোজা কথায়, তাঁরা বলছেন, ডলারের মাতব্বরি আর নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঠিক এই ভয়টাই করছিলেন। দ্বিতীয় দফা ক্ষমতা গ্রহণের পর ২৫ জানুয়ারি ট্রুথ সোশ্যালে এক বার্তায় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো যাতে ডলারের বিপরীতে কোনো বিকল্প মুদ্রা চালু না করে, তার স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

অন্যথায় তাদের প্রত্যেকের ওপর ১০০ শতাংশ হারে নতুন বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করা হবে। তিয়ানজিন সম্মেলনে সি, পুতিন ও মোদির হাতে হাত মেলানো দেখে উদ্বিগ্ন ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, তাঁরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন।

চক্রান্ত অথবা অন্য যে নামেই ডাকি না কেন, চীনের নেতৃত্বে যে একটি বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার সম্ভাবনা ক্রমে উজ্জ্বল হচ্ছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। একদিকে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে চীনের নেতৃত্ব বিস্তৃত হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নিয়ে পড়ে থাকায় একদিকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর বহুপক্ষীয় বিশ্বব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের ঢালাও বাণিজ্যযুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের খামখেয়ালি ব্যবহারে তিক্ত দেশগুলো চীনের ছাতার নিচে এক হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। মার্কিন ভাষ্যকার জন ডেলুরি মন্তব্য করেছেন, আসলে ট্রাম্পই চীনকে নতুন বিশ্বব্যবস্থায় নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে দিচ্ছেন।

আগামীকালই যে এই নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠবে, সে কথা কেউ বলে না। তবে চীনের নেতৃত্বে রাশিয়া, ভারত ও ব্রাজিলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধদেয়াল গড়ে উঠছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গত সপ্তাহে তিয়ানজিন ও বেইজিং থেকে আমরা সে বার্তাই পেয়েছি।

  • হাসান ফেরদৌস প্রাবন্ধিক

*মতামত লেখকের নিজস্ব