
দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ঘৃণাবাদী রাজনৈতিক-সংস্কৃতির চাষবাসে আরএসএস বরাবরই এক পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় আছে। বলিউড কীভাবে বিতর্ক ও বিভেদের নতুন পণ্য তৈরি করেছে, তা নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ
সমকালীন ভারতে ৩১ অক্টোবর একটা বিশেষ দিন। ইন্দিরা গান্ধীকে দুজন শিখ এই দিন হত্যা করে এবং পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে শিখবিরোধী সহিংসতা শুরু হয়। তবে দিনটি আবার সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবারও। এবার উদ্যাপিত হবে তাঁর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী।
বলা বাহুল্য, আরএসএস পরিবার এই দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উদ্যাপন করতে চায়। সেই উদ্যাপনে যুক্ত হচ্ছে নতুন এক শিল্পকলাও। দ্য তাজ স্টোরি নামে একটা মুভি মুক্তি দেওয়া হচ্ছে এই দিন, যা ইতিমধ্যে ভারতীয় ইসলামি শিল্পকলার অনন্য স্থাপনা তাজমহল নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এক বিতর্ক উসকে দিয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, এতে ভারতীয় সমাজের নাজুক আন্তসাম্প্রদায়িক সম্পর্কে আরেকটু বিষ ঢালা হবে।
শিল্পকলাকে ধর্মীয় বিদ্বেষের কাজে লাগানোর অপচেষ্টা বলিউডে নতুন নয়। কিছুদিন আগেও ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ নিয়ে হইচইয়ের চেষ্টা ছিল। তেমন কাজ হয়নি, যেমনটি হয়েছিল ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ বা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে। এ রকম পটভূমির মাঝেই আসছে দ্য তাজ স্টোরি।
বড় খবর হলো এতে অভিনয় করেছেন পরেশ রাওয়াল। পরেশ খ্যাতনামা অভিনয়শিল্পী। তবে একই সঙ্গে তিনি যে বিজেপির লোক, এটাও কোনো গোপন ব্যাপার নয়। এর আগেও ২০১৬–তে তিনি সরদার ছবিতে বল্লভভাই প্যাটেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এবার তাজ স্টোরিতে তাঁকে মুখ্য চরিত্র বানিয়ে তুষার গোয়েল তাজমহলের বিরুদ্ধে সংঘ পরিবারের পুরোনো ‘গল্প’গুলোতে বাড়তি জ্বালানি জোগাতে চাইছেন।
মুভিটি মুক্তির আগে যে পোস্টার ছাড়া হয়, তাতে দেখানো হয়, রাওয়াল তাজমহলের সর্বোচ্চ গম্বুজ খুলছেন আর তার ভেতর থেকে বের হচ্ছে হিন্দুদেবতা শিবের মূর্তি। এ রকম একটা পোস্টারের লক্ষ্য ছিল সহজ: তাজমহল নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সেসব গল্প ও মিথ উসকে দেওয়া যে মোগল সম্রাট স্থাপনাটি নির্মাণ করিয়েছেন একটা হিন্দু মন্দিরের ওপর।
মুভির ভেতরে কী আছে, সেটা নভেম্বরের শুরু থেকে জানা যাবে। তবে বিজেপিপন্থী মিডিয়াগুলোর ব্যাপক প্রচার এবং পরেশ রাওয়ালকে দেখে তাজমহলপ্রেমীরা চট করে ধরে নিচ্ছেন এটা ঐতিহাসিক এই শিল্পস্থাপনা নিয়ে হিন্দুত্ববাদী প্রচার ইতিহাসের নতুন প্রকল্প আকারেই আসছে।
তাজমহল ‘তেজো মহালায়া’ নামে একটা শিবমন্দিরের ওপর নির্মিত এই গল্প বহুদিনের। বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছরই এটা নিয়ে বড় আকারে রাজনীতি শুরু হয়। সে সময় আগ্রায় তারা এই বিষয়ে সাতটি মামলা দায়ের করে। সেখানে দাবি করা হয় তাজমহলকে যেন হিন্দুদের পূজার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলায় এ–ও দাবি ছিল তাজের কক্ষগুলো যেন পরীক্ষা করে দেখা হয় সেখানে অন্য ধর্মের কোনো চিহ্ন আছে কি না।
মামলাকারীরা আগবাড়িয়ে এমনও দাবি করছিলেন, তাঁদের কাছে শতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ আছে এই বিষয়ে। এসবই ছিল বিষয়টিকে সমাজে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার রাজনৈতিক প্রচারধর্মী বয়ান মাত্র।
বাস্তবে ওই সব মামলা নিয়ে আগ্রার আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি। কিন্তু বিজেপিপন্থীরা থেমে যাননি। ২০২২ সালে তাঁরা এলাহাবাদে একই ধরনের মামলা করেন। সেখানেও তাজমহলের বিশেষ ২০টি কক্ষ খোলার জন্য বলা হয়। এসব কক্ষ কেন খোলা হয় না, নিশ্চয়ই তাতে হিন্দুধর্মীয় কোনো স্মারক আছে, এই ছিল মামলাকারীদের প্রশ্ন।
সেবারও আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। কোর্ট বুঝতে পেরেছিলেন মূলত মোগলদের তৈরি বলে তাজমহলে কলঙ্ক লেপনের জন্যই এ রকম বলা হচ্ছে।
এলাহাবাদের দুই বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় ও সুভাষ বিদ্যার্থী তখন মন্তব্য করেছিলেন, এভাবে ‘জনস্বার্থে মামলা’ চলতে থাকলে একদিন হয়তো আমাদের চেম্বারও খুলে দেখতে চাওয়ার আরজি হবে।
এ সময় আরএসএসের এ–সংক্রান্ত প্রচারে বাড়তি গতি দিতে জয়পুরের মহারাজা মান সিংয়ের নাতনি দীয়া কুমারী বলছিলেন তাজমহল তাঁদের পরিবারের জমিতে নির্মিত! অনেকেই জানেন দীয়াও বিজেপির লোক। এখন রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী। আগের লোকসভায় রাজস্থান থেকে এমপি হয়েছিলেন তিনি।
একই বিষয়ে ২০১৯ সালে কর্ণাটকের বিজেপি নেতা অনন্ত কুমার হেগড়ের দাবি ছিল আরেক কাঠি সরেস। তাজমহলের মূল মালিক রাজস্থানের রাজা জয়সিং বলে উল্লেখ করে তিনি এ–ও দাবি করেন, শাহজাহান এই স্থাপনা খরিদ করেন মাত্র। তারও বহু আগে, ১৯৬৫ সালে পি এন ওক (পুরুষোত্তম নাগেশ ওক) এ বিষয়ে মোটাসোটা একটা বই লেখেন, তাজমহল ইজ আ রাজপুত প্যালেস নামে।
পি এন ওক কাজ করতেন ভারতের সেনাবাহিনীতে। সেখানে প্রচার বিভাগে ছিলেন তিনি। সম্ভবত পেশাগত অভ্যাস থেকে পরবর্তীকালে তাজমহল নিয়ে নানান ধরনের কল্পিত তথ্য প্রচার করতে শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ভারতীয় ইতিহাস পুনর্লিখন ইনস্টিটিউট নামে একটা প্রতিষ্ঠানও গড়েন।
দ্য তাজ স্টোরির শিল্পী তালিকায় পরেশ রাওয়ালের মতো সুপারস্টারের নাম দেখে স্পষ্টই মনে হচ্ছে পিএন ওকের রূপকল্প পুরো ব্যর্থ হয়নি। যদিও বিদেশি অনেক স্থপতি বহু আগেই ওকের যুক্তিগুলো খণ্ডন করেছেন। বিশেষ করে তাজমহল নির্মাণের কারিগরি ও নান্দনিক ধরন যে মোগল-পূর্ব দক্ষিণ এশিয়ায় অনুপস্থিত ছিল না, সেটা বিস্তারিতভাবে দেখান জাইলস টিলোটসনের মতো শিল্প-প্রত্নতত্ত্বের পণ্ডিতও।
টিলোটসনকে এ বিষয়ে একালের সেরা বিশেষজ্ঞ মনে করা হয়। তবে এরপরও ওক এ বিষয়ে আরেকটি বই লেখেন তাজমহল: ট্রু স্টোরি নামে এবং ২০০০ সালে এ নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদলতে একটা মামলাও করেন। আদালত সেটা অগ্রাহ্য করেন। এতসব কিছুর পরও বিজেপি পরিবার যে তাজমহল প্রকল্প থেকে সরছে না, তারই নমুনা আগামী সপ্তাহে মুক্তির মিছিলে থাকা তাজ স্টোরি।
হিন্দুত্ববাদী শিবিরের বিভিন্ন পেশাজীবী এবং রাজনীতিবিদদের তাজমহলকেন্দ্রিক বিবিধ চেষ্টার লক্ষ্য হিসেবে এটাই অনুমান করা হয়, স্থাপনাটিকে বৈধভাবে ভাঙচুর চালাতে সরকারের হাতে তুলে দিতে ইচ্ছুক তারা। বাবরি মসজিদের মতো নিজ হাতে তারা কিছু করতে চাইছে না এবার। কিন্তু আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া ২০১৭ সালে বিজেপি সমর্থকদের এই মর্মে আশাহত করে। তারা জানিয়ে দেয়, তাজমহলের ভেতরে বা নিচে কোনো হিন্দু মন্দির নেই বা ছিলও না। এ বিষয়ে ব্রিটিশদের তরফ থেকে ১৯০৪ থেকে তাদের হাতে আসা যাবতীয় কাগজপত্র দেখানো হয়।
কিন্তু বিরুদ্ধবাদীরা তারপরও ক্ষান্ত দেয়নি। আদালতকে প্রভাবিত করতে তারা সামাজিক জনমত তৈরির দিকে মনোযোগ দেয় এরপর। তারই অংশ হিসেবে এখন চলচ্চিত্র তৈরির পথ বেছে নেওয়া হলো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাজ স্টোরির পোস্টার ও টিজার দেখে দর্শকেরা অনেকে হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করতে শুরু করলে তাজ স্টোরির প্রযোজক বলছেন, তাঁরা তেজো মহালায়ার রহস্য উন্মোচনমূলক একটা মুভি তৈরি করতে চেয়েছেন মাত্র। অর্থাৎ বিশ্বের সপ্তম আশ্চার্যের একটি হয়েও তাজমহল তাঁদের কাছে এখনো তেজো মহালায়া।
সংঘ পরিবার চাইছে বড় কোনো ইস্যু, যা ভারতজুড়ে সংখ্যাগুরুকে নাড়া দেবে, আকর্ষণ করবে। তাজমহল যেহেতু মোগল শাসনামলের বড় এক প্রতীক এবং মোগলদের আগ্রাসী শক্তি হিসেবে দেখানো যেহেতু গেরুয়া শিবিরের রাজনীতির প্রধান এক প্রতিজ্ঞা, সে কারণে তাজকে তারা এখন ব্যাপক প্রচারে আনতে চাইছে। একই প্রকল্পের পাইপলাইনে আছে কুতুব মিনার, লালকেল্লা ইত্যাদিও।
তাজ স্টোরির প্রযোজক হলেন সরনিম গ্লোবাল সার্ভিসেস নামের প্রতিষ্ঠানের সুরেশ ঝা। এই সংস্থার কার্যালয় রয়েছে মহারাষ্ট্রে। সুরেশ ঝা এর আগে বানিয়েছেন মোদি কা গাঁও। ২০১৭ সালে গুজরাট নির্বাচনের আগে এটা মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। বিষয়বস্তু ছিল ভারতের এখনকার প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা। সেই সুরেশ ঝা এখন তাজ স্টোরিতে কী বলতে চাইবেন, সেটা অনুমান করা তাই দুরূহ নয়।
কৌতূহলোদ্দীপক হলো, সুরেশ ঝা এখনকার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মুভি বানালেও গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে মোদির আমলে যে গণহত্যা হয়, সে বিষয় এড়িয়ে গেছেন। মুভিতে এমন কোনো তথ্যও নেই যে নরেন্দ্র মোদি কখনো গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
বাবরি মসজিদ ভেঙে মন্দির গড়ার পর আরএসএস পরিবার ভারতজুড়ে মোগল আমলে স্থাপিত রাস্তাঘাট, শহর ও বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার নাম বদলের হিড়িক ফেলে। কিন্তু তাতে তেমন কোনো বড় দাঙ্গা বাধানো যায়নি। এরপর তারা অনেকগুলো পুরোনো মসজিদের মালিকানা নিয়ে হাঙ্গামা করে। দেশটির সংখ্যালঘুরা সেসব নিয়েও মারমুখী কোনো প্রতিরোধ গড়তে যায়নি বা পারেনি। এমনকি সংখ্যাগুরুরাও তাতে মোটাদাগে তেমন প্রভাবিত হয়নি, অংশ নেয়নি।
স্বভাবত এখন সংঘ পরিবার চাইছে বড় কোনো ইস্যু, যা ভারতজুড়ে সংখ্যাগুরুকে নাড়া দেবে, আকর্ষণ করবে। তাজমহল যেহেতু মোগল শাসনামলের বড় এক প্রতীক এবং মোগলদের আগ্রাসী শক্তি হিসেবে দেখানো যেহেতু গেরুয়া শিবিরের রাজনীতির প্রধান এক প্রতিজ্ঞা, সে কারণে তাজকে তারা এখন ব্যাপক প্রচারে আনতে চাইছে। একই প্রকল্পের পাইপলাইনে আছে কুতুব মিনার, লালকেল্লা ইত্যাদিও।
লালকেল্লাও কোনো এক হিন্দু রাজা একাদশ শতাব্দীতে বানিয়েছিলেন বলে ব্যাপক প্রচার চলছে। অথচ বাস্তবতা হলো লালকেল্লা শাহজাহান তৈরি করেন ১৬৪০–এর দিকে এবং একাদশ শতাব্দীর দাবিকৃত দুর্গের জায়গা থেকে বহুদূরে। আপাতদৃষ্টে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও মোগল আমলে নির্মিত সব বড় বড় স্থাপনা আরএসএসের চক্ষুশূল এবং প্রতিটির স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক মাহাত্ম্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে।
এ কাজে ইতিহাস চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে নানান সামাজিক রূপকথা ও গল্পের মাধ্যমে। অর্থাৎ ঐতিহাসিক তথ্য ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কল্পনা দিয়ে। যখনই এ রকম অপচেষ্টা প্রত্নতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় চ্যালেঞ্জে পড়ছে, তখন আবার ধর্মীয় আবরণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে সাম্প্রদায়িক হিংসা-বিদ্বেষমূলক প্রচার আকারে হাজির করা হচ্ছে ভোটের রাজনীতিতে।
আরএসএস পরিবারের এ রকম রাজনীতির ছায়ায় অনেক উচ্চাভিলাষী লেখক-শিল্পী নিজেদের ভাগ্য বদলে নিতেও সচেষ্ট হচ্ছেন। ভারতে গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেক নিরপেক্ষ ভাষ্যকার লিখছেন, পরেশ রাওয়াল তাজ স্টোরির মাধ্যমে আসলে আবারও বিজেপির নির্বাচনী টিকিট পেতে চাইছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব আহমেদাবাদ আসনে অনায়াসে জিতলেও বিজেপি দ্বিতীয়বার তাঁকে সেই সুযোগ না দিয়ে দিল্লিতে এনএসডির (ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা) সভাপতি করে দেয়। ৭০ বছর বয়সে এখনো এই দায়িত্বে আছেন তিনি। তাজ স্টোরি তাঁর জন্য তাই বড় এক বাজি।
রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডাধর্মী মুভিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র রূপায়ণের ভেতর দিয়ে তিনি দেশটির উদারনৈতিক শিল্পী সমাজে বড় মাত্রায় বিরাগভাজন হতে পারেন। ঝুঁকি নিচ্ছেন তিনি দক্ষিণ দিক থেকে নিশ্চিতভাবে বড় কিছুর আশায়। একজন জাতীয় শিল্পীর স্বাভাবিক নির্মোহতা ছুড়ে ফেলে সম্প্রতি তাজ স্টোরিতে অভিনয় করার সিদ্ধান্তকে এই বলেও ন্যায্যতা দিলেন তিনি যে তাজমহল হলো গণহত্যার প্রতীক। ঘৃণার এ রকম প্রকাশ মূলত তাজ স্টোরি মুক্তির পর সংখ্যাগুরুদের সিনেমা হলে টানতে।
বাংলাভাষীদের নিয়েও পরেশের ঘৃণাসূচক মন্তব্যের রেকর্ড আছে এবং এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও পুরোনো ক্ষোভ রয়েছে। ২০২২–এ গুজরাটে বিজেপির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বলেন, ‘গুজরাটিরা অনেক কিছু সহ্য করে। তারা মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেবে। কিন্তু ঘরের পাশে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বসবাস মেনে নেবে না। যে ভাষায় ওরা কথা বলে, তাতে মুখে ডায়াপার পরানো উচিত।’ এখানে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা বলতে পরেশ বাংলাভাষীদের দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন এবং এ নিয়ে কলকাতায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর পর্যন্ত দায়ের হয় তখন।
পরেশের বাংলাভাষী ঘৃণাবিদ্বেষ ওই সময় এ–ও নতুন করে সামনে নিয়ে আসে যে ধর্মীয় ঘৃণাবাদের মধ্যে জাতিবাদী ঘৃণাও মিশে থাকে অনেক সময়। তবে এটা কেবল ভারতের একার সমস্যা নেই আর। যদিও দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে এ রকম ঘৃণাবাদী রাজনৈতিক-সংস্কৃতির চাষবাসে আরএসএস বরাবরই এক পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় আছে আজও।
এমনকি ২০২৫ সালে দল হিসেবে তাদের শত বছর পূর্তিকালেও সূচনাকালীন বিদ্বেষের মতাদর্শ ছাড়ছে না তারা এবং তার বলি হচ্ছে শিল্পকলাও। বলিউডকে ব্যবহার করে প্রোপাগান্ডা ও শিল্পের ব্যবধান অনেকখানি কমিয়ে এনেছে তারা। তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে আবার একদল ‘শিল্পীসমাজ’। তাজ স্টোরির বিজ্ঞাপন উন্মুক্ত করার দিন হিসেবে যে ১৪ আগস্টকে (পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস) বেছে নেওয়া হয়, সে–ও বেশ বিদ্বেষী মনোভাবেরই পরিচয় দেয়।
আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে গবেষক
*মতামত লেখকের নিজস্ব
[২৪ অক্টোবর ২০২৫ প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে এ লেখা ‘টার্গেট তাজমহল: বলিউড থেকে আসছে বিভেদের নতুন পণ্য’—শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে]