Thank you for trying Sticky AMP!!

চীন থেকে সৌদিকে বিচ্ছিন্ন করতে সফল হবে কি যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এবং এর বিনিময়ে আরবের কাছে ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চাওয়া হয়েছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি আনার চেষ্টা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ ধরনের চুক্তি এই অঞ্চলকে অধিকতর মেরুকরণ, প্রক্সি সংঘাত ও অধিকতর জনদুর্ভোগের দিকে পরিচালিত করবে বলে মনে হচ্ছে।

Also Read: যে কারণে বাইডেনের কথা শুনছে না সৌদি আরব

এ বিষয়ে আগ্রহী আমেরিকান পর্যবেক্ষকেরা ইতিমধ্যে উদ্যোগটির জন্য বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা ‘বিশ্বের দুজন সবচেয়ে কম বিশ্বস্ত নেতার’ মধ্যকার চুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের স্বাভাবিককরণ যদি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে কোনো ভিন্নতা না আনে, তাহলে কেন বাইডেন প্রশাসন এমন একটি ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ চুক্তি করবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।

 এর ছোট জবাব হলো: চীন, ভূরাজনীতি এবং অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের নির্বাচন।

কৌশলগত কারণে বাইডেন প্রশাসন পশ্চিম এশিয়া ও বিশেষ করে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। চীনের এই প্রভাব বিস্তারের কাজটিকে সহজতর করে দেওয়ার জন্য বাইডেন সৌদি আরব ও ইসরায়েল উভয়ের প্রতিই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

Also Read: এখন চীনের রাজনৈতিক খেলার ঘুঁটি সৌদি আরব ও ইউক্রেন

গত বছরের শেষ ভাগে সৌদি আরব চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে বিরাট আয়োজন করে অভ্যর্থনা দেওয়ায় এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার বিষয়ে ইসরায়েলের আগ্রহের কথা কানাঘুষা হওয়ায় ওয়াশিংটন বিশেষভাবে বিরক্ত হয়েছে।

সৌদি আরব ও ইসরায়েল উভয়কেই মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ অবস্থায় আনতে এবং চীন ও রাশিয়া থেকে তাদের দূরে রাখতে বাইডেন তঁার পুরোনো নীতি অনুসরণের কথা বিবেচনা করছেন। বিশেষ করে হাইটেক, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানির ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যাতে সৌদি ও ইসরায়েলের সম্পর্ক জোরদার না হতে পারে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

Also Read: চীন–সৌদি ঘনিষ্ঠতা, মধ্যপ্রাচ্যে কঠিন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

বেইজিংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা সীমিত করতে সৌদি আরব যাতে বাধ্য হয়, সে জন্য ওয়াশিংটন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। চীনা মুদ্রা রেনমিনবিতে সৌদি আরব তেল বিক্রি করলে তা মার্কিন ডলারকে দুর্বল করবে বলে চীনা মুদ্রায় সৌদির তেল বিক্রির উদ্যোগকে তারা আটকে দিতে চাইছে। এ ছাড়া তেলের দাম বাড়তি রাখার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব রাশিয়ার সঙ্গে যে গাঁটছড়া বেঁধেছে, তা–ও বাইডেন প্রশাসন ছিন্ন করতে চায়।

বাইডেন প্রশাসন এখন এমন এক কৌশল অনুসরণ করছে, যা বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের হয় আমেরিকাকে নয়তো চীনকে (এবং তার মিত্র রাশিয়া) বেছে নিতে বাধ্য করে। এই কৌশলের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে।

Also Read: সৌদি আরবকে ব্রিকসে এনে পশ্চিমাদের যে বার্তা দেওয়া হচ্ছে

সৌদি আরব বলেছে, এই চুক্তিতে সই করার বিনিময়ে তাকে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মতো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে; সর্বাধুনিক অস্ত্র কেনার সুযোগ করে দিতে হবে এবং বিশদ পরিসরের একটি বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ দিতে হবে।

কিন্তু রিয়াদের এই প্রস্তাব মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন পাওয়া খুবই কঠিন। কারণ, ইয়েমেনে সৌদির অমানবিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া এবং ২০১৮ সালে সৌদি এজেন্টদের হাতে সাংবাদিক জামাল খাসোগির খুন হওয়ার মতো কিছু ঘটনা ওয়াশিংটনে সৌদির সুনাম ও আস্থার জায়গা নষ্ট হয়েছে।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণে সৌদি আরবের চুক্তিতে মার্কিন কংগ্রেসের মত পাওয়া কঠিন হবে না। কারণ, কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় শিবিরই ইসরায়েলের ‘দাসত্বের’ জন্য পরিচিত। ফলে সেখানে বাইডেন দ্বিদলীয় রাজনৈতিক সমর্থন পাবেন এবং এটিকে তাঁর একটি বড় রাজনৈতিক অর্জন বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

Also Read: সৌদি আরব থেকে খালি হাতেই ফিরলেন জেলেনস্কি

তবে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে সৌদিকে চীন ও রাশিয়া থেকে আলাদা করা খুব সহজ হবে না। মধ্যপ্রাচ্যের তেল কেনা এবং সেখানকার বাজারে চীনের প্রবেশাধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা শুধু অন্যায্যই নয়, বিপজ্জনকও। এটি অবশ্যই মার্কিন নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

বাইডেনকে মনে রাখতে হবে, চীন একটি বিশৃঙ্খল বিশ্বের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু আমেরিকা নয়।

  •  মারওয়ান বিশারা আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিতভাবে অনূদিত