ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভ হলো ইমান, নামাজ, জাকাত, হজ ও রোজা। (বুখারি: ৭) এর মাধ্যমে হজ শারীরিক ও আর্থিকভাবে সমন্বিত একটি ইবাদত।
সামর্থ্যবান ও সুস্থ মুসলিমের জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ (কাবা) গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে, তবে জেনে রাখো, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন: একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, ‘হে মানব সকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ পালন করো।’ এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), প্রতিবছর কি হজ করতে হবে?’ তিনি নীরব রইলেন। ওই ব্যক্তি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি যদি “হ্যাঁ” বলতাম, তবে তা (প্রতিবছর হজ করা) ফরজ হয়ে যেত। কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।’
(মুসলিম: ১৩৩৭)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘হজ ফরজ হলো একবার; এরপর যা আদায় করবে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৪)
‘ফরজ হজ আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ, তোমাদের কেউ জানে না তোমাদের ভবিষ্যতে কী ঘটবে।’
হজ বিধানের তাৎপর্য হলো হজ ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সম্পন্ন করা; বিনা ওজরে বিলম্ব না করা। কারণ, বিনা ওজরে বিলম্ব করা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (সা.) ফরজ হজ আদায়ের প্রতি এত গুরুত্বারোপ করেছেন যে কেউ যদি হজ অস্বীকার করে বা এ বিষয়ে অবহেলা প্রদর্শন করে, তবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে বের হয়ে হতভাগ্যরূপে বিবেচিত হবে। তা ছাড়া যেকোনো সময় বিপদ-আপদ, অসুখবিসুখ অথবা মৃত্যু আসতে পারে। তাই হজ ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব করলে পরে সামর্থ্য হারালে বা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহর কাছে অপরাধী হিসেবেই হাজির হতে হবে। এ জন্যই হাদিসে ফরজ হজ হওয়ামাত্র পালন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছা করে, সে যেন দ্রুত তা আদায় করে নেয়। কারণ, যেকোনো সময় সে অসুস্থ হতে পারে, বাহনের ব্যবস্থা না–ও থাকতে পারে, অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৮৩৩)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) আরও বলেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফরজ হজ আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ, তোমাদের কেউ জানে না তোমাদের ভবিষ্যতে কী ঘটবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৮৬৭; বায়হাকি, খণ্ড: ৪, পৃ: ৩৪০)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিজিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দিলাম। অথচ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজের উদ্দেশ্যে না আসে, তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত।’ (ইবনে হিববান: ৩৬৯৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার ইচ্ছা হয় কিছু লোককে বিভিন্ন শহর ও গ্রামে পাঠাই। তারা গিয়ে দেখে আসবে কারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ করছে না। তখন তাদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করবে। কারণ, তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান নয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড: ১, পৃ: ৫৭৮)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com