Thank you for trying Sticky AMP!!

ইউক্রেনের আক্রমণ অভিযানে যুদ্ধবিমান দেওয়ার ঝুঁকি নেবেন কি বাইডেন?

‘ইউক্রেনের যুদ্ধবিমানগুলোকে রাশিয়ার অগ্রসর প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানের সামনে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।’

একটি বাস্তব সত্য হচ্ছে, আধুনিক যুদ্ধে কোনো সেনাবাহিনী যদি যুদ্ধবিমানের সমর্থন ছাড়া আক্রমণ অভিযান চালাতে যায়, সেটা তাদের জন্য হবে আত্মহত্যা। ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর কাছে কিছু পুরোনো আমলের মিগ ২৯এস যুদ্ধবিমান রয়েছে। ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে সামান্য কয়েকটি যুদ্ধবিমানও পেয়েছে তারা। এগুলোর কয়েকটি একেবারেই উড্ডয়নযোগ্য নয়, আর অন্যগুলোর যন্ত্রাংশ আলাদা অবস্থায় রয়েছে।

ইউক্রেনের যুদ্ধবিমানগুলোকে রাশিয়ার অগ্রসর প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানের সামনে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। এর মধ্যে ভয়ংকর এস-৩৫ যুদ্ধবিমানও রয়েছে। যাহোক, ইউক্রেনের কাছে যে যুদ্ধবিমান থাকুক না কেন, প্রধান কোনো যুদ্ধে তারা কয়েক দিনের বেশি টিকতে পারবে না।

এখন ইউক্রেন নতুন আক্রমণ অভিযানের পরিকল্পনা করেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে বিমান প্রতিরক্ষা সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। বাইডেন এরই মধ্যে বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের পতন হতে দেবেন না। কিন্তু তাঁর প্রশাসনের মধ্যেই অনেকে আক্রমণ অভিযানে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ ধরনের আক্রমণ অভিযান পরিচালনা করার মতো সৈন্যবল এবং সফল হওয়ার মতো কৌশল ইউক্রেনের কাছে নেই, সেই ভয় থেকেই তাঁদের এই আপত্তি।

এ বাস্তবতায় দুটি প্রশ্ন সামনে চলে আসে। প্রথমত, ইউক্রেনের সামরিক নেতৃত্ব বিষয়টা ঠিকভাবে বুঝতে পারছেন কি, বর্তমান বাস্তবতায় তাঁদের স্থলসেনাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো আর মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া একই কথা। দ্বিতীয়ত, তাঁরা কি এই নিশ্চয়তা পেয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিমানবাহিনী ও বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখবে। তাহলে কি এমন কোনো সম্ভাবনা আছে, জেলেনস্কি সরকার নাম ও লোগো পাল্টানো যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬এস যুদ্ধবিমান এবং সেগুলো চালানোর জন্য আমেরিকান পাইলট পেতে যাচ্ছে?  

এ ধরনের ‘স্বেচ্ছাসেবী’ বিমান অভিযানের ধারণা মোটেই নতুন কিছু নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের বিরুদ্ধে চীনকে বিমান দিয়ে সহায়তা করেছিল আমেরিকা, যেটি ফ্লাইং টাইগারস নামে পরিচিত। কোরীয় যুদ্ধের সময় চীনের বিমানবাহিনীর পোশাকে রাশিয়ান পাইলটরা যুদ্ধে করেছিলেন। ১৯৬৭-১৯৭০ সাল পর্যন্ত চলা মিসর-ইসরায়েল যুদ্ধে রাশিয়ান পাইলটরা মিসরের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।

Also Read: ইউক্রেন থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলেই যে সুযোগ নেবে চীন

কয়েক স্তরে বিন্যস্ত রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমেরিকান যুদ্ধবিমান কতটা ভালো করতে পারবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যায়। রাশিয়ানরা যদি অর্ধেকটাও সফল হয়, তাতেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিমান ও পাইলট খোয়া যাওয়ার শঙ্কা আছে। এর চেয়ে খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে। ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দিয়ে সহায়তা করার কারণে রাশিয়া পোল্যান্ড ও রুমানিয়ায় অবস্থিত মার্কিন বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে বসতে পারে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যে নীতি ও কৌশল নিচ্ছে, সেটা মাঝেমধ্যে রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দেশটির সামরিক নেতৃত্ব সেটা ভালো করেই জানেন। বাখমুতসহ অন্যান্য শহরাঞ্চলে অবস্থান করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলেনস্কি। ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাখমুতে আরও সৈন্য পাঠিয়ে পাল্টা আক্রমণের যে পরিকল্পনা নিয়েছিল ইউক্রেন সেটা ‘ব্যর্থ’ হতে চলেছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং কর্দমাক্ত সড়ক ও মাঠের কারণে বাখমুতে উদ্ধার অভিযানের জন্য সেনা ও সরঞ্জাম পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

Also Read: ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে যা বলছে পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া নথি

ইউক্রেন তাদের আক্রমণ অভিযানের জন্য ১২টি ব্রিগেড প্রস্তুত করেছে। যদি এসব ব্রিগেডের সব লোকবল নিয়োগ করা হয়, তাহলে সৈন্যসংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ৯টি ব্রিগেড পশ্চিমা ট্যাংক, রকেট লাঞ্চার, সাঁজোয়া যান, কামান এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদে সজ্জিত।

এত বড় একটি বাহিনী, তা যদি ভাগ ভাগ করেও আক্রমণ অভিযানে নামে, তারপরও তাদের শনাক্ত করা রাশিয়ান বাহিনীর জন্য খুব মামুলি একটা বিষয়। রাশিয়ার ড্রোন ও স্যাটেলাইট আছে, ভূমিতেও তাদের পর্যবেক্ষক আছে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত সড়ক অবকাঠামো ব্যবহার করে রাশিয়া তাদের সেনাদল ও সামরিক সরঞ্জাম এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহন করতে পারবে। কামান ও রকেট লাঞ্চারের দিক থেকেও রাশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।

Also Read: ইউক্রেনে যুদ্ধ না থামলে চীনের লাভ, যুক্তরাষ্ট্রের লোকসান

এখন পর্যন্ত ইউক্রেন আক্রমণ অভিযানে গিয়ে খুব সামান্যই সুবিধা করতে পেরেছে। এর পরিবর্তে শহর, নগর ও গ্রামাঞ্চলে যে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধে তারা খানিকটা সাফল্য দেখিয়েছে, সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিখানির্ভর যুদ্ধের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।

কিন্তু এ ধরনের রক্ষণাত্মক যুদ্ধেও ইউক্রেনের অনেক হতাহত হয়েছে এবং সেটা বেড়েও চলেছে। যদিও কোনো নির্ভরশীল সূত্র থেকে হতাহতের এ সংখ্যা পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এরপরও পেন্টাগন/সিআইএর ফাঁস হওয়া নথি ধারণা করছে, একজন রাশিয়ানের বিপরীতে সাতজন ইউক্রেনীয় সেনাকে হারাতে হয়েছে।

এই একই বাহিনীকে যদি আক্রমণ অভিযানে পাঠানো হয়, তাহলে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি যাবে। সম্ভবত প্রতি একজন রাশিয়ানের বিপরীতে ১০ জন, এমনকি ২০ জন ইউক্রেনীয় সেনা হারাতে হতে পারে। এরই মধ্যে অনেক ইউনিট এ ধরনের যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, রাশিয়ানদের সামনে পড়ে মাংসের কিমা হওয়ার চেয়ে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা ভালো।

Also Read: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ থামলেও অস্ত্র প্রতিযোগিতা কি থামবে?

বাইডেন প্রশাসন যদি ইউক্রেনীয়দের এই আসন্ন পতন দেখতে পায়, তাহলে সেখানে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এ সিদ্ধান্তের জন্য বাইডেনের ন্যাটোকে প্রয়োজন হবে না। কিন্তু তিনি যদি তার জন্য ন্যাটোকে যুক্ত করেন, তাহলে এটা ভাবার অনেক কারণ আছে যে ন্যাটোও ভেঙে পড়বে। সেটা এই কারণে নয় যে ন্যাটো আক্রান্ত হবে, বরং এই কারণে যে ন্যাটো প্রতারণার শিকার হবে।

বড় যুদ্ধে ইউরোপকে টেনে আনা হবে কি না সেই বিষয় মহাদেশটির সবচেয়ে বধির নেতার জন্য উদ্বেগের কারণ। সেটা হওয়াই তাদের উচিত। সাম্প্রতিক কালে ন্যাটো একেবারে বিপর্যয়ের কিনারা ঘেঁষে চলছে। ন্যাটো কেন এই পথ বেছে নিয়েছে, তা বোঝা কঠিন। সম্ভবত আমেরিকার বিশাল চাপ তাদের ওপর রয়েছে। বাল্টিক সাগরে গ্যাসের পাইপলাইনের নাশকতা থেকে জার্মানি হাড়ে হাড়ে বুঝেছে যুক্তরাষ্ট্র কতটা বেপরোয়া হতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো, বাইডেন প্রশাসন কি সত্যি সত্যি বিশাল ঝুঁকিটা নিতে চাইবে? জেলেনস্কি কী ভাবছেন, এতে তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারবেন?

  • স্টিফেন ব্রায়েন সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসি এবং ইয়র্কটাউন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো

  • সুশানা ব্রায়েন দ্য জিউস পলিসি সেন্টারের সিনিয়র ডিরেক্টর