Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশের বেকারত্ব সমস্যার কেন সমাধান হচ্ছে না

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির পর দ্বিতীয় বড় সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব। সরকারি হিসাবে অবশ্য বেকারত্ব কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আগস্ট মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে দেশের মোট বেকার এখন ২৫ লাখ, যা আগের বছরের চেয়ে কমেছে। কিন্তু এখানে একটা বড় ফাঁক আছে। বিবিএসের সংজ্ঞায় বলা হয়, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তাঁরাই, যাঁরা গত সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেননি।

কিন্তু গত ৭ দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গাইডলাইনে যিনি কাজ করছেন অথচ প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না (সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছেন না) তাঁকে আন্ডার এমপ্লয়মেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয় (ডেইলি স্টার, ৩ আগস্ট ২০২৩)। তাই বাস্তবতার সঙ্গে বিবিএসের হিসাব ঠিক মেলে না। এদিকে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট শেষের পথে। এসব জায়গা থেকে আরও অনেক বেকার বাড়বে।

এগুলোর কি সমাধান সম্ভব? সম্ভব হলে কীভাবে?

খালি সরকারি পদে নিয়োগ

প্রথম আলোর ২ জানুয়ারি ২০২৩–এর প্রতিবেদন অনুসারে দেশে সরকারি চাকরিতে পদ খালি আছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি। এখনকার তরুণদের প্রথম পছন্দ সরকারি চাকরি। তাই অবিলম্বে এসব পদে দ্রুত নিয়োগ করে এতসংখ্যক মানুষের বেকারত্ব কমানো উচিত। এখানে আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা না নিয়ে সম্মিলিত পরীক্ষা নিলে দ্রুত প্রক্রিয়া শেষ হয়। বেকারদেরও সব জায়গায় আবেদন করতে করতে পকেট খালি করা লাগবে না।

Also Read: বেকারত্বের সঠিক সংখ্যা কেন জানতে হবে?

অবৈধ বিদেশিদের শনাক্তকরণ

দেশে কতজন বিদেশি অবৈধভাবে কাজ করছেন, তার সঠিক হিসাব নেই। ২০২০ সালে এসবির তথ্যমতে, ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৯ জন। বাংলা ট্রিবিউনের ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০–এর তথ্যমতে, দেশে থাকা মোট বিদেশি ৩০ লাখের মতো (রোহিঙ্গাসহ)। কিন্তু অবৈধভাবে কাজ করছেন প্রায় ১০ লাখ বিদেশি। উন্নয়নমূলক কাজ বেড়েছে, ফলে বিদেশি আসাও বেড়েছে এই তিন বছরে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট সামির সাত্তারের মতে, প্রতিবছর বিদেশিরা নিয়ে যাচ্ছেন ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো (ইত্তেফাক, ৯ জুলাই ২০২৩)। এই অবৈধ বিদেশিদের তাড়ালেই কিন্তু প্রায় ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়ে যায়। আর দেশ বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় করতে পারে। অবশ্য তার আগে প্রয়োজন নিজেদের তাঁদের স্থান নেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করা।

Also Read: বেকারদের শুধু স্বপ্ন নয়, ভাঙছে প্রেম–সংসারও

বিদেশে কর্মী ও শিক্ষার্থী পাঠানো

২০২২ সালে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমটি) তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী বিদেশে গেছেন ১১ লাখ ৩৬ হাজার। এ ছাড়া ইউনেসকোর তথ্যমতে, প্রতিবছর বিদেশে যান ৮০-৯০ হাজার শিক্ষার্থী (বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১৫ এপ্রিল ২০২২), যাঁদের বেশির ভাগই ফিরে আসতে চান না। এসব কর্মীকে বিদেশ পাঠানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সঙ্গে বেসিক ইংরেজি জ্ঞান দেওয়া, কীভাবে চলাফেরা করতে হবে—এসব শিক্ষা দিলে দেশেরই লাভ।

আমাদের উচিত বিদেশে ‘হোয়াইট কলার’ পাঠানো। পাশের দেশ ভারত এই ম্যানেজমেন্ট শ্রেণিতে লোক পাঠিয়ে অনেক বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে। আমাদের এই খাতে শ্রমিক পাঠানো শুরু করার সময় হয়ে গেছে। আর যাঁরা শিক্ষার্থী কোটায় বিদেশে যাবেন, তাঁদের জন্য রিসার্চ মেথডোলজি বিষয়ের সঙ্গে থিসিস যেন স্নাতক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক করা হয়। আর সবকিছুকে দালালমুক্ত করে গাইড দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। আর আমাদের প্লেনভাড়া কমাতে হবে, আমাদের পাশের দেশের চেয়ে আমাদের প্লেনের খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।

Also Read: শিক্ষিত বেকার বনাম প্রকৃত বেকারের সংখ্যা: ‘জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশল’ আছে কি

বেসরকারি খাতকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো

দেশের বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির ব্যবসার অবস্থা খারাপ। তাদের ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সরকারেরই দায়িত্ব। এদিকে বেসরকারি খাতের একটা বড় সমস্যা, তারা উপযুক্ত প্রার্থী পাচ্ছে না। এই অবস্থা কাটানোর জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতক সিলেবাসে ইন্ডাস্ট্রি সংযুক্তকরণ আর ইন্টার্নশিপ যুক্ত করতে হবে। যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করার ব্যবস্থা করতে হবে।

উদ্যোক্তা তৈরি করা

এদিকে অনেকে সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ৩০ বছরের বয়সসীমা পার করে ফেলছেন, অনেকে বেসরকারি চাকরি পাচ্ছেন না বা ছাঁটাই হচ্ছেন, তাঁদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। দেশে তরুণদের মধ্যে বেকারের হার সরকারি হিসাবে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এই দেশ আবার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের তলানিতে থাকা দেশ। আশার কথা, দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিরা কৃষিতে ফোকাস দিয়ে কিছুটা বেকারত্ব কমিয়েছেন। আবার নিরাশার কথা, অলিগার্ক গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করে কৃষিসহ সব নতুন ব্যবসার উদ্যোগ খেয়ে ফেলার চেষ্টায় আছে। এই সিন্ডিকেট গুঁড়িয়ে দিয়ে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

Also Read: বেকারদের জন্য নতুন চাকরি তৈরির দায়িত্ব কার

আইএলওর সংজ্ঞামতে দেশে ছদ্ম বেকারের সংখ্যা আরও ৬৬ লাখ। দেশে কর্মক্ষম কিন্তু একেবারেই কোনো কাজে যুক্ত নেই—এমন মানুষ আছেন ৪ কোটি ৭৩ লাখ ২০ হাজার (ডয়চে ভেলে, ২৭ আগস্ট ২০২৩)। ২০২২ সালের আগস্টে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশ বেকার।

এসব পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে আমাদের কাঠামোটাই ঠিক নেই। আমি এখানে স্বল্পমেয়াদি সমাধান দিলাম, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পুরো ব্যবস্থাপনাই নতুনভাবে ঢেলে সাজানো লাগবে। তা না হলে আমাদের বেকারসংখ্যা শুধু বাড়বেই। আর এই সবকিছুর দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই, যেখানে এখন পর্যন্ত তারা নিদারুণভাবে ব্যর্থ।

প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, মোট দেশজ উৎপাদনে দেশের ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় সামগ্রিক কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ।

  • সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক
    ই–মেইল: subail001@gmail.com