একে তো দুর্মূল্যের দিন, তার ওপরে নেই বেতন–ভাতা। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে অসহনীয় পরিস্থিতি এভাবেই পার করতে হচ্ছে যশোরের প্রায় ৬০০ জন শিক্ষক ও সুপারভাইজারকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন’ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছিলেন তাঁরা। এখন চার মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ঈদের আগেও সেটি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেন নেই? কারণ, সেই টাকা ছাড় করা হয়নি মন্ত্রণালয় থেকে। দিনের পর দিন বেতন-ভাতা ছাড়া কীভাবে এতগুলো লোক চলছে, সেটি দেখার জন্য ‘মানবিক’ হয়ে উঠতে পারেননি আমাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। আবার বিষয়টি এমনও হতে পারে, কর্মসূচির ওপরের পর্যায়ের সবাই যাঁর যাঁর সুযোগ-সুবিধা ঠিকই পেয়েছেন কিন্তু মাঠপর্যায়ের লোকগুলোর কথা তাঁরা ভুলে গেছেন। এমনই তো ঘটে থাকে এ দেশে। তাই নয় কি?
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সেখানে যশোরের বিভিন্ন উপজেলার ৫৫১টি স্কুল চালু করা হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পৌর এলাকায় শিক্ষকের বেতন ১০ হাজার এবং উপজেলার অন্যান্য স্কুলের শিক্ষকদের বেতন ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা আছে। বেতন–ভাতা পেতে ব্যাংকের হিসাব খোলানো হলেও চার মাস ধরে সেখানে ঢোকেনি কোনো টাকা।
বেতন–ভাতা বন্ধ থাকার পরও ক্ষান্ত হননি এসব শিক্ষক ও সুপারভাইজার। নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে শিশু জরিপ ও শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করে যাচ্ছেন তাঁরা। দুঃখের কথা হচ্ছে, সেই খরচও পাচ্ছেন না তাঁরা। শুধু তাই নয়, স্কুল শুরুর আগে শিশু জরিপ বাবদ প্রাপ্য সম্মানীও তাঁরা পাননি। এখন অবস্থা এমন যে ঠিকমতো দায়িত্বও পালন করতে পারছেন না, আবার চাকরিও ছাড়তে পারছেন না। যশোরের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো জানাচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে এই প্রকল্পে অর্থ ছাড় করা হয়নি। এর মানে কি প্রকল্পটিকে গুরুত্বহীন মনে করছেন তাঁরা?
করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা খাতে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঝরে পড়েছে অনেক শিশু। তাদের আবার শিক্ষামুখী করার জন্য এমন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু শিক্ষক-সুপারভাইজারদের বেতন–ভাতা আটকে রাখার মধ্য দিয়ে বলা যায়, যেনতেনভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে সেখান থেকে আদৌ কোনো সুফল আসবে কি না, আমরা সন্দিহান। অতিসত্বর শিক্ষক-সুপারভাইজারদের বকেয়া বেতন–ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হোক।