নড়াইলের কালিয়া উপজেলার খড়রিয়ায় অবস্থিত পেড়লি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের চিত্রটি আমাদের স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থার করুণ বাস্তবতাই তুলে ধরে। সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল ভবন ও একটি চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার। আছে আধুনিক অস্ত্রোপচারকক্ষও। কিন্তু নেই পর্যাপ্ত জনবল, নেই নিয়মিত চিকিৎসক, নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ। ফলে নতুন হাসপাতাল ভবন হওয়ায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার আশায় বুক বাঁধা স্থানীয় মানুষ আজ চরম হতাশ।
প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধি গত সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখতে পান, প্রধান ফটকের পকেট দরজা খোলা থাকলেও হাসপাতালের প্রায় সব কক্ষই তালাবদ্ধ। চিকিৎসক নেই, ওষুধ নেই; শুধু একজন অফিস সহায়ক ছাড়া আর কেউ নেই। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আসা কলেজশিক্ষার্থী মনোয়ারা খাতুন বা সেবাপ্রত্যাশী নাজমা বেগমের মতো শত শত মানুষ প্রতিদিনই এসে ফিরে যাচ্ছেন। কারণ, মূল্যবান এই অবকাঠামো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে।
২০২০ সালে উদ্বোধন হওয়া এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য ১০টি পদ থাকলেও অধিকাংশই শূন্য। একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও জনবলসংকটের কারণে তাঁদের অন্যান্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে তাঁরা সপ্তাহে মাত্র দুই দিন এখানে আসতে পারেন। বাকি দুই দিন একজন সংযুক্তিতে আসা চিকিৎসক রোগী দেখেন। সপ্তাহে সার্বক্ষণিক থাকেন কেবল একজন অফিস সহায়ক, তিনিও সংযুক্তিতে এসেছেন। এভাবে কি একটি হাসপাতাল পরিচালনা করা সম্ভব?
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সঠিকভাবে পরিচালিত হলে পেড়লি, পাঁচগ্রাম ও সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ উপকৃত হতেন। কিন্তু পাঁচ বছর পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। প্রশ্ন জাগে, জনগণের করের টাকায় নির্মিত এই বৃহৎ অবকাঠামো যদি জনগণের কোনো উপকারে না আসে, তবে এই বিনিয়োগের সার্থকতা কোথায়?
গোটা স্বাস্থ্য খাতে অনেক অবকাঠামো নির্মাণ এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে, জনবলসংকটের কারণে সেগুলোতে পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সারা দেশেই পরিবার পরিকল্পনায় জনবলসংকট রয়েছে, এমন যুক্তি আর কত দিন শুনতে হবে? সরকারের উচিত নড়াইলের এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো দেশের অন্য হাসপাতালগুলোতেও দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা। আমরা চাই না এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে মা ও শিশুরা সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাক।