সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

চিনাহালা-বরুয়াকোনা সড়ক

সংস্কারকাজে গাফিলতি কোনোভাবে কাম্য নয়

দেশের জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে সড়ক সংস্কারে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার শেষ নেই। ছোট ছোট প্রকল্প হওয়ার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরও থাকে না সেখানে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা-উপজেলা কার্যালয় এসব সড়কের প্রকল্প ওপর থেকে পাস করে নিয়ে আসে। যেসব ঠিকাদারের প্রকল্পগুলোর কাজ দেওয়া হয়, তা নিয়েও অভিযোগের শেষ থাকে না। ফলে কাজের অগ্রগতি থাকে না, ঠিকাদারের খবর থাকে না, মানুষের দুর্ভোগও শেষ হয় না। এমনটিই দেখা যাচ্ছে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা সদরের একটি সড়ক সংস্কার প্রকল্পের ক্ষেত্রে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলা সদরের চিনাহালা মোড় থেকে বরুয়াকোনা বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ গত ৩০ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময় দুই মাস আগে পার হয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। এখনো ৮৫ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। মনে হতে পারে এটি কীভাবে সম্ভব! আসলেই জেলা-উপজেলায় সড়ক সংস্কারের প্রকল্পগুলোর এমন চিত্র বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়। এখানে প্রকল্পের মেয়াদ গুরুত্বহীন। মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে, এমন সংস্কৃতিই এখানে তৈরি হয়নি। এ ছাড়া মেয়াদ বাড়িয়ে বরাদ্দ বাড়ানোর অসৎ উদ্দেশ্য তো থাকেই। সেখানে থাকে কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশ।

কলমাকান্দার এ সড়কের যে ছবি প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখলে মনে হবে, সেটি কোনো যুদ্ধক্ষেত্র। সড়কের বিভিন্ন অংশে খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখার কারণেই এমনটি মনে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটিতে এভাবে ফেলার রাখার কারণে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। সেখানে বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই যানবাহন চলাচল করছে সড়কটি দিয়ে। প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। প্রায় পাঁচ মাস আগে এ সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয়। তিন সপ্তাহের মতো কাজ করে চার মাস ধরে কাজ বন্ধ আছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফিলতি, সড়ক সংস্কারকাজের তদারকের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলডিইডি) কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই এমনটি হচ্ছে। ঠিকাদার আবদুল হাইয়ুল বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী বলেন, ‘ঠিকাদার এই রাস্তা নিয়ে আমাদের খুবই ভোগাচ্ছেন। কাজ শেষ করতে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারের গাফিলতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

ঠিকাদারকে শুধু চিঠি দিয়ে যাওয়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ হতে পারে না। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এমন ‘অযোগ্য’ ঠিকাদার কীভাবে এ কাজ পেলেন, সে ব্যাপারে তদন্ত করা হোক। কাজ নিয়ে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলা এমন ঠিকাদার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।