সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস

ভুয়া ওয়েবসাইটের দায় কি নাগরিকের

ই–অ্যাপোস্টিল সেবাকে সহজ, দ্রুত ও স্বচ্ছ করার উদ্দেশ্যে সরকার যে ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে, সম্প্রতি ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনা সেই উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিদেশে পড়াশোনা, চাকরি বা ব্যবসার প্রয়োজনে নথি সত্যায়নের জন্য আবেদন করতে গিয়ে অন্তত ১ হাজার ১০০ নাগরিকের এনআইডি, পাসপোর্ট, বিয়ের সনদ, শিক্ষা ও ব্যবসায়িক নথি অনলাইনে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। এটা নিছক প্রতারণার ঘটনা নয়; এটি রাষ্ট্রের ডিজিটাল গভর্ন্যান্সে গুরুতর ঘাটতির স্পষ্ট আলামত।

সরকারের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে দোকান বা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা সরকারি ওয়েবসাইটে নয়, বরং নকল বা ভুয়া প্ল্যাটফর্মে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু একজন নাগরিক নিজে আবেদন করুক বা তৃতীয় পক্ষের সহায়তা নিক, প্রশ্নটি সেখানে নয়। সরকারি সেবার আদলে তৈরি একাধিক ভুয়া ওয়েবসাইট দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় থাকা, সেখানে বিপুলসংখ্যক সংবেদনশীল নথি জমা পড়া এবং সহজেই সেগুলো দেখা যাওয়ার সুযোগ থাকা—এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে নজরদারি, প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা; তিন ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো ফাঁস হওয়া তথ্য দেখার জন্য কোনো পরিচয় যাচাই বা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়নি। ধারাবাহিক নম্বর বদলালেই এক ব্যক্তির নথি থেকে আরেকজনের নথিতে প্রবেশ করা গেছে, যা সাইবার নিরাপত্তার পরিচিত দুর্বলতা ‘ইনসিকিউর ডিরেক্ট অবজেক্ট রেফারেন্স’-এর উদাহরণ। ডিজিটাল সেবায় এমন মৌলিক ত্রুটি থাকা মানে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য কার্যত উন্মুক্ত করে রাখা। অথচ সরকার বলছে, গত ১১ মাসে প্রায় ১৭ লাখ ই–অ্যাপোস্টিল আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। এত বড় পরিসরের সেবায় তথ্য সুরক্ষার প্রশ্নে এমন শৈথিল্য গ্রহণযোগ্য নয়।

সরকার এ ঘটনাকে ‘স্যাবোটাজ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ডার্ক ওয়েবে থাকা ডেটার অপব্যবহারের কথা বলছে। সন্দেহ নেই, সাইবার অপরাধ ও ডেটা পাচার বৈশ্বিক বাস্তবতা। কিন্তু স্যাবোটাজ বলেই দায় সেরে ফেলার সুযোগ নেই। প্রশ্ন হলো ভুয়া ডোমেইনগুলো কেন আগেভাগে শনাক্ত ও বন্ধ করা যায়নি, কেন নাগরিকদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্কতা ও যাচাইব্যবস্থা জোরদার করা হয়নি এবং কেন ডিজিটাল সেবার নকশায় এমন নিরাপত্তা দুর্বলতা রয়ে গেল?

ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের এ ঘটনা একটি সতর্কবার্তা। ডিজিটাল সেবার বিস্তার যত দ্রুত হবে, নিরাপত্তা ও জবাবদিহির মানও তত কঠোর হতে হবে। এখানে মূল্য দিতে হচ্ছে নাগরিকদেরকেই।