বেড়েছে গুজব ও ভুয়া তথ্য

রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি

গত জুন ও জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে ভুয়া তথ্য ও গুজবের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, যার সিংহভাগই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এই প্রবণতা কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সমস্যা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও উদ্বেগজনক।   

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সবাই এর সুবিধা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সেটি ব্যবহার করছেন এবং দিন শেষে নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এর চরম শিকার হচ্ছেন নারীরাও। মূলধারার সংবাদমাধ্যমও আক্রান্ত হচ্ছে। গুজব ও ভুয়া তথ্য যেভাবে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এর রোধ করাটা জরুরি। 

সিজিএসের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে শনাক্ত হওয়া ৩৪০টি ভুয়া তথ্যের মধ্যে ২৬৮টিই ছিল রাজনীতিসংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে ৯৬টি ভুয়া তথ্য সরাসরি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এই গুজবের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে।

ভুয়া তথ্যের এই বিস্তার প্রমাণ করে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক এবং এক্স এখন কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বা মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটি ‘উর্বর ক্ষেত্র’। সিজিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৯৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভুয়া তথ্য এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে ছড়িয়েছে। এর ফলে দ্রুতগতিতে মিথ্যা খবর জনগণের মাঝে পৌঁছে যাচ্ছে, সত্য ও মিথ্যার তফাত বুঝতে বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যা জনমতকে বিকৃত করছে এবং সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে।

এই সমস্যার সমাধানে শুধু ফ্যাক্টচেকিং বা তথ্য যাচাই-বাছাই যথেষ্ট নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া ও উদ্দেশ্যমূলক প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো এবং ভুয়া তথ্য শনাক্ত করার ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা উচিত। সিজিএসের পরামর্শ অনুযায়ী, এই বিষয়টি জাতীয় পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের সদিচ্ছা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ভুয়া তথ্য ছড়ানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং গঠনমূলক আলোচনার পরিবেশ তৈরি না হলে, কেবল আইন দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের এ বিষয়ে সচেতন করে তোলাসহ সতর্কবার্তাও দিতে হবে। যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিজেই গুজবের জন্ম দেয় বা তাকে উৎসাহিত করে, তাহলে গণতন্ত্রের ওপর এর চেয়ে বড় হুমকি আর কিছু হতে পারে না।