চিঠিপত্র

গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা

স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজে ঘেরা মলচত্বরে।
স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজে ঘেরা মলচত্বরে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ বা গাছপালা থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে সম্পর্কে প্রায় সবাই অবগত। তবে বৃক্ষকে যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখার বদলে যদি হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়, সেটার অনুভূতি বড্ড খারাপ। আর কাজটা যদি দেশসেরা বিদ্যাপীঠ তথা প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে, সেটি মানতে একটু বেশিই কষ্ট হয়।
অনেকে হয়তো জানেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরবের ১০০ বছর অতিক্রম করেছে।

সেই গৌরব স্মৃতিময় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আর স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজে ঘেরা মলচত্বরে। মলচত্বরকে নিচ থেকে দেখলে মনে হতো সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়ানো, আর ওপর থেকে পাখির চোখে একখণ্ড সবুজ সমুদ্র। কিন্তু গত কয়েক মাসে এই সুন্দর চিত্র একেবারে পাল্টে গেছে। ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির যজ্ঞ।

গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত মলচত্বরে এমন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে প্রথমে অনেকে কথা ওঠালেও পরে কর্তৃপক্ষের নির্মাণের নকশা দেখে আশ্বস্ত হয়। নির্মাণের নকশা অনুযায়ী কোনো গাছ কাটা হবে না, গাছের ফাঁকে ফাঁকে গড়ে উঠবে স্তম্ভসমূহ।

দুঃখের ব্যাপার হলো, গাছ কাটা না পড়লেও নির্মাণকাজের গর্তের জন্য প্রায় প্রতিটি গাছের শিকড় কেটে ফেলা হচ্ছে। এ ঘটনা অনেকটা বাংলা প্রবাদ ‘গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা’র মতো। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায়ই দেখা যায়, অল্প বাতাসে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ছে। আসলে এর অন্যতম কারণ হলো বিভিন্ন সময়ে নির্মাণকাজের জন্য গাছের শিকড় কেটে ফেলা।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ, যাঁরা শ্রেণিকক্ষে বৃক্ষের গুরুত্ব নিয়ে বড় বড় বক্তব্য দেন, তাঁরাই আবার এসব প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছেন। তবে কালেভাদ্রে ক্যাম্পাস এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেওয়া হয়। কিন্তু এসব কর্মসূচি শুধু বৃক্ষরোপণ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে, বৃক্ষের পরিচর্যা পর্যন্ত পৌঁছায় না। ফলে বৃক্ষ তার কৈশোর থেকে যৌবনে উপনীত হওয়ার আগেই বৃক্ষ চক্রের সব ধাপ অতিক্রম না করে মৃত্যুতে উপনীত হয়।

পরিশেষে বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে আমরা যতটা সচেতন, তার সিকি ভাগও যদি বৃক্ষের প্রতি সদয় হই; তবে গড়ে উঠবে এক চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ।

  • নুরে আলম ছিদ্দিক
    শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
    ই-মেইল: nur.du.geo63.65@gmail.com