চিঠিপত্র

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে

বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জনজীবনে অনেক দুর্ভোগ নেমে এসেছে।

বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছেন। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও, তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। ১ জুন ২০২৩-এর  নির্ধারিত বাজারমূল্য প্রতি কেজিতে বা লিটারে উল্লেখ করা হলো। প্রতি কেজি আলু ৪০-৪২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৭০-৮০, আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫-৮৫, রসুন (দেশি) ১৪০-১৬০, শুকনা মরিচ (দেশি) ৩৯০-৪২০, বেগুন ৪০-৬০, আদা (দেশি) ৩২০-৩৪০, লবণ (আয়োডিনযুক্ত) ৩৮-৪২, চিনি ১৩০-১৪০, মসুর ডাল ১৩০-১৩৫, ছোলা ৮০-৮৫, ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২১০, খাসির মাংস ১ হাজার-১ হাজার ১০০, গরুর গোশত ৭৫০-৭৮০ টাকা, ডিম (ব্রয়লার) ৪৭-৫০ টাকা হালি, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার (খোলা) ১৭৫-১৮৫ ও শর্ষের তেল (বোতল) ৩৬০ টাকা। নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির ফলে নানা পেশাজীবীর মানুষ, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছেন। নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের মূল্য ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই তুলনায় মানুষের আয় দ্রব্যমূল্যের সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ তাঁদের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ছেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বর্তমানে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে এই বিশাল লাইনের বার্তা, নিঃসন্দেহে দরিদ্র মানুষেরা স্বল্প আয়ে চলতে পারছেন না কিংবা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না, সেটাই বুঝিয়ে দেয়। বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এসব দরিদ্র লোকের জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে হবে, তাঁদের সরকারি সহায়তা দিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হচ্ছে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি আরও বাড়ানো।

বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের মধ্য থেকে আগ্রহী এবং যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনীত করে টিসিবি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সফল ব্যক্তিদের একটি সনদ প্রদান বা নিবন্ধনের মধ্যে নিয়ে আসা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন বেকারত্বের সমস্যা কমে যাবে, অন্যদিকে দ্রব্য সঠিক দামে ক্রেতারা ক্রয় করতে পারবেন। এ ছাড়া আমরা সচেতনতা এবং চেষ্টার মাধ্যমে পচনশীল খাদ্যপণ্য, যেমন আলু, মরিচ, বেগুন, পটোলসহ বিভিন্ন সবজি যথাযথ সংরক্ষণের জন্য উপজেলাভিত্তিক হিমাগার স্থাপন করতে পারি।

এক তথ্যমতে জানা গেছে, দেশে সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়। ফলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাপ কমাতে এটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এসব বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

মানিক চন্দ্র শীল
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল:manikchandro206646@gmail.com