একটি সমাজ এগিয়ে চলে মূলত তরুণ সমাজের কাঁধে ভর করেই। যুবকেরাই হয় সমাজের সবচেয়ে বেশি উদ্যমী আর কর্মঠ সদস্য। এই তরুণেরা যখন সমাজের জন্য বোঝা যায়, তখন সেই সমাজ মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। আমাদের এই উন্নয়নশীল দেশকে দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হলে তরুণ সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। নেট দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে পদচারণা করতে হবে বাস্তব জীবনে। বর্তমানে আমাদের তরুণ সমাজ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
আমাদের সমাজের বড় একটি অংশ রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন গেমিংয়ে আসক্ত। অপর আরেকটি অংশ ডুবে আছে মাদকের অন্ধকার দুনিয়ায়।
বর্তমানে স্মার্টফোনের আসক্তি এত বেড়েছে যে, তরুণ প্রজন্ম জ্ঞানচর্চার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বইয়ের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হবেন জ্ঞান অর্জনের জন্য মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে বেড়াবেন, নানা ধরনের নানা জ্ঞানের বই পাঠ করে নিজের মস্তিষ্ককে করবেন আরও উর্বর, নিজেকে করবেন আরো সমৃদ্ধ; সেখানে তারা স্মার্টফোনে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলছেন। এ সমস্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপকভাবে আচ্ছন্ন।
অপরদিকে, মাদক শিক্ষার্থীদের জন্য আরো একটি ভয়ানক ব্যাধি। গ্রামগঞ্জ, শহর, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবখানেই পড়েছে মাদকের ভয়াল থাবা। পুরোনো মাদকের পাশাপাশি নিত্য নতুন মাদকের সহজলভ্যতার কারণে শত শত তরুণ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে দেশের অর্থনৈতিক ও শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সর্বোপরি মাদকের কারণে দেশ ও সমাজের তৈরি হচ্ছে অস্থিতিশীলতা, নষ্ট হচ্ছে ভারসাম্য। এই সংকটাপন্ন তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে দেশের সরকার ও সুশীল সমাজকে। গ্রহণ করতে হবে আরও নতুন নতুন পরিকল্পনা এবং সেগুলোর বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি অনুদানে অন্ততপক্ষে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একটি করে পাবলিক লাইব্রেরি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক সচেতনতা, করতে হবে নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং মাদক থেকে তরুণদের দূরে রাখতে সুশীল সমাজকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মূলত একজন জ্ঞান সমৃদ্ধ মানুষ ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হওয়া উচিত একজন ব্যক্তির শৈশব থেকেই। এই ক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষকদের ভূমিকাই মুখ্য। প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব সন্তানকে শৈশবে থেকেই স্ব-স্ব ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করা, সমাজের আচার ব্যবহার ও রীতিনীতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। যাতে তার মধ্যে নৈতিকতা জাগ্রত হয়, সৃষ্টি হয় পরিমিতিবোধ। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের দায়িত্ব নানাবিধ জ্ঞানদানের মাধ্যমে তাদের আরও সমৃদ্ধ করা। অতঃপর রাষ্ট্রের দায়িত্ব একজন নাগরিকের উচ্চশিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাঁর যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
মো. রবিউল আওয়াল
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়