প্রতিক্রিয়া

নারী ফুটবলারদের উপর হামলা কেন?

খুলনায় নারী ফুটবলারদের উপর হামলার প্রতিবাদে বরিশালে মিছিল
খুলনায় নারী ফুটবলারদের উপর হামলার প্রতিবাদে বরিশালে মিছিল

মাঠের খেলোয়াড় হোক কিংবা ঘরের গৃহিণী হোক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হোক কিংবা শিক্ষক হোক দেশের কোন জায়গায় নারী নিরাপদ বোধ করে? সম্প্রতি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রামে বিভাগীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় কৃতিত্ব অর্জন করা চার নারী ফুটবলারকে মারধর করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, স্থানীয় ফুটবল একাডেমি মাঠে অনুশীলনের সময় ফুটবলারের ইউনিফর্ম পরা ছবি তুলে ও পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে নূপুর খাতুন নামের আরেক তরুণী। চার ফুটবলার নূপুরের বাড়িতে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতর্কিতে রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে কয়েকজন নারী ও পুরুষ। ভুক্তভোগী সাদিয়া ভাষ্য, ‘বাড়িতে গিয়ে আমি মা-বাবা, কোচ ও অন্য খেলোয়াড়দের ঘটনাটি জানাই। তারা আমাকে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে নূপুর খাতুনের বাড়িতে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূপুর, তার বাবা নূর আলম খাঁ, ভাই সালাউদ্দিন ও নূপুরের মা রঞ্জি বেগম আমাদের ওপর হামলা করে। এতে মঙ্গলী বাগচী, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মণ্ডল আহত হয়। তারা লোহার রড দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়, চায়নিজ কুড়াল নিয়ে এসে হত্যার হুমকি দেয়।’ (সমকাল, ৩ আগস্ট ২০২৩)

কয়েক বছর আগে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলার কারণে জাতীয় দলের এক নারী ফুটবলারকে বাসে হেনস্তা হতে হয়েছিল। একই কারণে একজন নারী ফুটবলারের বাবাকে নিজের এলাকায় মারধর করা হয়। কুড়িগ্রামে পোশাক বিরোধিতার মুখে পড়ে বন্ধ করে দিতে হয় নারীদের একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট। নারী খেলোয়াড়দের ওপর হামলা ও খেলার মাঠ থেকে টেনে নিয়ে এসে ঘরে বন্দী করে রাখতে চায় একটি গোষ্ঠী।

বটিয়াঘাটায় চিকিৎসা নিয়ে নারী ফুটবলাররা বাড়ি ফিরলেও নিরাপদের স্বস্তি ফিরে পায়নি। তাঁদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতি হঠাৎ করে বা একদিনে তৈরি হয়েছে? তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচারহীনতার সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে। অ্যাসিড সহিংসতা আগের মতো না হলেও, সমাজে এ অপরাধ এখনো থেকে গেছে। যার কারণে নারী ফুটবলারকে এমন হুমকি দেওয়া হয়। সম্প্রতি এ ধরনের অপরাধ আবারও সংবাদমাধ্যমের খবর হচ্ছে। ফলে এমন হুমকিকে কোনোভাবেই অবহেলা করার সুযোগ নেই।

দেশে ছেলে ক্রিকেটারের তুলনায় মেয়ে ক্রিকেটারও কম নয়। বরং ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ক্রিকেটে বেশি সাফল্য অর্জন করছে, দেশকে বহির্বিশ্বের সাথে পরিচিতি করাচ্ছে। নারী ফুটবলাররা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে গোটা দেশকে গর্বিত করেছে। বেগম রোকেয়া নারী ও পুরুষ উভয়কে গাড়ির দুটি চাকার সাথে তুলনা করেছেন। গাড়ির একটি চাকা না থাকলে কিংবা অকেজো হলে ওই গাড়িকে নিয়ে যেমন বেশি দূর এগোনো যায় না, ঠিক তেমনি নারী-পুরুষ সমান্তরালভাবে প্রগতির পথে না হাঁটলে সমাজের পরিবর্তন হয় না, সমাজ সামনের দিকে অগ্রসর হয় না। পুরুষের সাথে সমভাবে সমানতালে নারীদের হাঁটার পথে তৈরি হওয়া বাঁধা সরাতে হবে রাষ্ট্রকেই। কিন্তু রাষ্ট্র দীর্ঘদিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি চর্চা করার কারণে এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। ফলে ব্যক্তি পর্যায় থেকে ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়তে হবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে।

জাফর হোসেন জাকির
লেখক
ই-মেইল: zaforhosenzakir@gmail.com