শ্রদ্ধাঞ্জলি

জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সংকট এবং কমরেড মণি সিংহের শিক্ষা

মণি সিংহ
মণি সিংহ

আশু রাজনৈতিক সংকট

বাংলাদেশের সমাজজীবন এখনো নানা অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সংঘাতে ভরপুর। একদিকে রয়েছে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে রয়েছে আদর্শ বিচ্যুত দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। একটি দল মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট তৈরি করেছিল, একজন যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রীও বানিয়েছিল, অপর দলটি ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বিসর্জন দিয়ে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করে নিয়েছে। দেশে স্বজনতোষণমূলক পুঁজিবাদ ও ‘শংকর গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিয়েছে এবং বিচার অব্যাহত আছে, কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র কিছুটা ধ্বংস করা হয়েছে ও রাজনীতিতে ধর্মীয় শক্তিকে ‘বিভক্ত কর ও আপস কর’ এই কৌশল গ্রহণ করেছে। এই পিচ্ছিল পথে শেষ রক্ষা না হয়ে আম ও ছালা দুটোই হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমান রাজনীতিতে প্রধান যে সংকটটি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তা হচ্ছে, গণতন্ত্রের সংকট। বর্তমানে এমন একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে, যেখানে সব মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে এবং দল-মত-ধর্মনির্বিশেষে জনগণও খুশিমতো নিজের নিজের ভোট পছন্দমতো প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে দিতে পারবেন। সেটার জন্য কর্তৃত্বপরায়ণতা ও প্রতিশোধবৃত্তি বাদ দিয়ে অন্যদের প্রতি শাসক দলের যে রকম সহনশীল আচরণ দরকার, সেটি না তৈরি হলে গণতন্ত্র ফেরত আসবে না। মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য মৌলিক ইস্যুতে ও দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্যও গঠন করা যাবে না। কিন্তু সেখানে সহনশীল সৌজন্য প্রয়োজন, আদর্শগত আপস নয়।

সুতরাং, এই রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এমন একটি উত্তরণকালীন সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, যাতে একই সঙ্গে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের ন্যূনতম চেতনা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনা যাবে এবং রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জঙ্গি-সন্ত্রাসী মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো এবং সামাজিক অঙ্গন থেকে ধর্মের অনালোকিত অসহনশীল, কুসংস্কারাচ্ছন্ন বা রাজনৈতিক স্বার্থবিজড়িত অনুদার ব্যাখ্যাদাতাদের সাময়িক নেতিবাচক উত্থান রহিত ও পরাজিত করা যাবে। সেই সঙ্গে দলমত–নির্বিশেষে লুটেরাদের দমন করে জনগণের জন্য সুশাসন কায়েম করা যাবে।

আর জনগণকে বিশেষ করে শ্রমিক, কৃষক ও উদীয়মান মধ্যবিত্তকে বলতে হবে শাসক শ্রেণির প্রচলিত দলগুলো যদি পালাক্রমে লুণ্ঠনের ধারাতে চলতেই থাকে, তাহলে তারা বিকল্প শক্তি গড়ে তুলবেন, হতাশ হয়ে দেশ ত্যাগ করবেন না বা ঘরে বসে থাকবেন না বা ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’—এই নীতি নিয়ে চলতে চেষ্টা করা ছেড়ে দিয়ে সাহস করে রুখে দাঁড়াবেন।

কমরেড মণি সিংহের ৩২তম প্রয়াণ দিবসে এই বিশেষ সন্ধিক্ষণে জাতীয় পুনরুত্থানের জন্য, গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রশ্নে কমরেড মণি সিংহের কাছ থেকে সাধারণভাবে জাতি এবং বিশেষভাবে তাঁর অনুসারী বামেরা কী শিক্ষা পেতে পারে—তা নিয়েই কিছু মন্তব্য করব।

মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্রসঙ্গে মণি সিংহ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কমরেড মণি সিংহ জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন সম্পর্কে কী বলেছিলেন? স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রে কমরেড মণি সিংহ প্রদত্ত সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়ে আপনারা জানতে পারবেন। সেখান থেকে আমি এ প্রসঙ্গে কিছু উদ্ধৃতি নিচে তুলে ধরছি।

তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন সম্পর্কে কমরেড মণি সিংহ তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়ন করে আমরা (কেন্দ্রীয় কমিটি) আরও দেখেছিলাম যে আওয়ামী লীগ কেবল “পূর্ব-পাকিস্তানের” জনগণেরই সর্বাত্মক সমর্থন পায়নি, তৎকালীন পাকিস্তানের সরকার গঠনের অধিকার লাভ করেছে। ...পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো এবং এই শাসকদের মদদদাতা সাম্রাজ্যবাদ কিছুতেই নির্বাচনের এই ফলাফল মেনে নেবে না এবং তা বানচাল করার ষড়যন্ত্র করবে।...এমতাবস্থায় বাংলাদেশ স্বাধীনতাসংগ্রামের দিকেই অগ্রসর হবে এবং সে সংগ্রামের জন্য জনগণকে প্রস্তুত করা দরকার।’

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সেদিকে এগিয়ে গেলে, পাকিস্তানের দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মভিত্তিক দল ও শক্তিগুলো পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে। এই মুষ্টিমেয় অংশকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে ব্যাপক জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্ন ১৯৭১ সালে সামনে চলে আসে। তখন বামপন্থীদের মধ্যে দুটো মত বিরাজ করছিল। একটি মত ছিল, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করা। অপর মতটি মুক্তিযুদ্ধকে দেখছিল ‘দুই কুকুরের লড়াই’ হিসেবে। দ্বিতীয় মতটি ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী’ এবং ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বাহিনী’ উভয়কেই সমশক্র জ্ঞান করে সমদূরত্বের নীতির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। বিভ্রান্ত চীনাপন্থীদের বৃহৎ একটি অংশ তখন এই অবস্থান গ্রহণ করেন। তবে কাজী জাফর ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন চীনপন্থী বামের আরেকটি ক্ষুদ্র অংশ স্বকীয় পৃথক অবস্থান বজায় রেখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লড়াই চালানোর কথাও বলেছিলেন।

এই বিশেষ শক্তিটি প্রসঙ্গে মণি সিংহ তাঁর প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘অন্যান্য দলের মধ্যে কাজী জাফর আহমেদ ও রাশেদ খান মেননদের দলের সঙ্গেও আমাদের সাক্ষাৎ হয়। এরা মাওবাদী নীতি অনুসরণ করলেও ২৫শে মার্চের পর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যায়। এরা স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন দিলেও আওয়ামী লীগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীনতার শক্তিগুলোর ঐক্য এবং স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক শক্র-মিত্র সম্পর্কে এঁদের নীতির সঙ্গে আমাদের প্রভূত পার্থক্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালে এঁরাসহ কিছু মাওবাদী শক্তি আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে একটি “বামপন্থী ফ্রন্ট” গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তাকে আমরা বিভেদাত্মক ও স্বাধীনতাসংগ্রামকে দুর্বল করার প্রয়াস বলে ভ্রান্ত মনে করে প্রত্যাখ্যান করি এবং আওয়ামী লীগসহ জাতীয় ঐক্য গঠনের নীতি অনুসরণ করি। স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী দলগুলোকে আমরা শক্র চিহ্নিত করি।’

এই দুটি উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ন্যূনতম ‘জাতীয় ইস্যুতে’ বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে এগোনোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন কমরেড মণি সিংহ। ‘জাতীয় ইস্যু’-র বিপরীতে সংকীর্ণ বামপন্থী অবস্থানকে তিনি ‘বিভেদাত্মক’ এবং ‘ভ্রান্ত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এখনো কি ব্যাপারটা তা–ই বলব? আমার মতে এবং আমার মনে হয়, কমরেড মণি সিংহ নিশ্চয় সেটাই বলতেন। এখন পরিস্থিতি মৌলিকভাবে ভিন্ন, কারণ ইস্যু এখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, শত্রু এখন অভ্যন্তরীণ এবং ইস্যু এখন স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা এবং সে জন্যই আর্থসামাজিক মুক্তি প্রতিষ্ঠা করা। এটাকে উন্নয়ন বললে পুরোটা বোঝা যাবে না। উন্নয়ন, কিন্তু কী ধরনের উন্নয়ন?

কেউ এখন চাইলেও বাংলাদেশকে রাজনৈতিক ভাবে ভারত বা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ বানাতে পারবে না, তবে বাংলাদেশের ভেতরেই পরাজিত শক্তির পুনরুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানি বৈষম্যমূলক অর্থনীতি ও ধর্মভিত্তিক ভাবাদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠা অসম্ভব নয়। তা যদি সত্যিই হয়, তখন আমরা নামে বাংলাদেশ হলেও আদর্শে অনেকাংশে পাকিস্তানের মতোই হয়ে যাব। টু ইকোনমি বা দুই অর্থনীতির বদলে তৈরি হতে পারে টু সোসাইটি বা দুই সমাজ এবং সমাজটা তখন হয়ে যাবে লুটেরা–অধ্যুষিত ও একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সুযোগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুসারীদের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের অধীন। আধুনিক মুক্তচিন্তাবিরোধী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে তখন তারা এগিয়ে যেতে পারে। ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক বা পয়লা বৈশাখ নিয়ে বিতর্ক বা জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক বা মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতিকে ধর্মীয় পবিত্র ভাবার ভ্রান্তি বা বিজ্ঞান বিরোধিতা তারই সাইরেন সংকেত!

জাতীয়তাবাদী ও বাম শক্তির সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মণি সিংহ

আমরা জানি, সাধারণত ‘জাতীয় ঐক্যের’ মধ্যে বাম ও ডানপন্থী উভয় প্রকার শক্তি বিদ্যমান থাকে। সেই জাতীয় ঐক্য জনগণের স্থায়ী কল্যাণে কতটুকু আসবে, তা নির্ভর করে ঐক্যের ভেতরে শক্তি ভারসাম্য ও নেতৃত্বের শ্রেণিচরিত্রের ওপর। বিষয়টি সম্পর্কে কমরেড মণি সিংহ কি সজাগ ছিলেন? তিনি কি ‘জাতীয় ঐক্যের’ অবস্থান নিতে গিয়ে জাতীয় ঐক্যের অভ্যন্তরে ‘বিভিন্ন শ্রেণিগুলোর অভ্যন্তরীণ সংগ্রামের’ দিকটিকে ভুলে গিয়েছিলেন, বা তার ওপর জোর কম দিয়েছিলেন? প্রশ্নটিও বিচার করা প্রয়োজন। মণি সিংহের সাক্ষাৎকারের আরেক অংশে আছে,
‘আমরা আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তির বৃহত্তম জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলাম। এই প্রচেষ্টা তেমন সফল হয়নি। শেষের দিকে বাংলাদেশ সরকারের “পরামর্শ দাতা কমিটি” গঠিত হয় এবং তাতে আমাদের পার্টির প্রতিনিধিরূপে আমি ছিলাম। সশস্ত্র সংগ্রামের অগ্রগতির পর্যায়ে আমাদের উভয় দলের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য ছিল। আমরা মুক্ত এলাকা গড়ে তুলে সেখানে প্রগতিশীল অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক নীতি গ্রহণ ও কার্যকর করার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মডেল জনগণের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতাম এবং ওই রকম রণকৌশল গ্রহণের কথা বলতাম। আমরা স্বাধীনতাসংগ্রামকে কেবল সাধারণ জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতাম না।’

এই উদ্ধৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে কমিউনিস্টদের ন্যূনতম ইস্যুতে বৃহত্তম জাতীয় ঐক্যের সমর্থক হওয়ার অর্থ নিছক জাতীয়তাবাদী বা নিছক বুর্জোয়া গণতন্ত্রী হয়ে যাওয়া নয় বা নিজস্ব বিশেষ আত্মসত্তা বিসর্জন দেওয়া নয়। নিজস্ব পৃথক বৈশিষ্ট্য, নিজস্ব ধারায় সংগ্রাম ও পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখার শর্ত মেনে নিয়েই জাতীয় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে। এ জন্য অপেক্ষাকৃত ঘনিষ্ঠ ও দৃঢ় বামপন্থী মিত্রদের সঙ্গে ফ্রন্ট গঠন, অন্যদের সঙ্গে ইস্যুভিত্তিক ঐক্য, যুগপৎ লড়াই, সম–অভিমুখী কিন্তু পৃথক বা সমান্তরাল লড়াইয়ের মতো নানা নমনীয় কৌশল, সুনির্দিষ্ট অবস্থায় সুনির্দিষ্টভাবে প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়।

উপরিউক্ত আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে, জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের নানা পর্বে ন্যূনতম সুনির্দিষ্ট জাতীয় ইস্যুতে বামপন্থীদের সঙ্গে অন্যান্য অ-বাম শক্তির ব্যাপক ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু সেই প্রয়োজনীয় ঐক্যের সুনির্দিষ্ট রূপ এমন হতে হবে, যাতে জাতীয় ন্যূনতম ইস্যুর সমর্থক বামপন্থীদের অন্যান্য উচ্চতর সংগ্রামগুলো চালানোর স্বাধীন সুযোগ ও অধিকার বজায় থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তাদের শক্তি ভারসাম্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। চূড়ান্ত লক্ষ্য ও আশু লক্ষ্যের মধ্যে যাতে সংযোগ বজায় থাকে।

তবে উপরোক্ত রাজনৈতিক দিকটি ছাড়াও অন্য আরও অনেক প্রসঙ্গে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় কমরেড মণি সিংহের সমগ্র জীবনের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে। এসব গুণ থেকে আমরা আদর্শ সুশাসন কি হতে পারে, তার একটি জীবন্ত নিদর্শন দেখতে পাই। তাঁর সততা, নিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা—এসবের বহু দৃষ্টান্ত আমাদের জানা আছে। একাধারে মানবতাবাদী, জাতীয় ঐক্যের ধারক এবং শ্রমজীবী মেহনতিদের স্বার্থেও প্রতি চূড়ান্ত শ্রদ্ধা, অঙ্গীকার ও অকৃত্রিম ভালোবাসা—দুই–ই তিনি অপূর্ব ভারসাম্যেও সঙ্গে বজায় রেখে গেছেন। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য গুণগুলো হচ্ছে—সংগঠনে অধস্তনদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দরদ, দলের ভেতরে নিজের বিরুদ্ধে গিয়েও অহংশূন্যভাবে গণতন্ত্রচর্চা, ব্যক্তিপূজাকে প্রশ্রয় না দেওয়া, অন্য দলের নেতা ও কর্মীদের প্রতি সর্বদা শিষ্টাচার, সরল সাদাসিধা জীবন ও সবহারাদের সঙ্গে একাত্মতা ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ই আমাদের নানাজনের নানা স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে আছে। এবারও তাঁর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রের বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও দলমত-নির্বিশেষে সবাই তাঁর অম্লান স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে শ্রদ্ধাসূচক উপসম্পাদকীয়। এই মহান নেতার ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা।

  • এম এম আকাশ অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক