কেশবপুরে হাতুড়ি বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিমন্ত্রী

যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা
যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

যশোরের কেশবপুর উপজেলার মানুষদের জন্য আতঙ্কের নাম ‘হাতুড়ি বাহিনী’। এই বাহিনীর সদস্যদের পকেটে থাকে হাতুড়ি। যখন যাকে মনে করে তুলে নিয়ে হাতুড়িপেটা করে। তাদের হামলা থেকে বাদ যাচ্ছেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও। এই বাহিনীর নেতৃত্বে আছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য খন্দকার আবদুল আজিজ ও তাঁর ভাই শরিফুল ইসলাম।
স্থানীয় সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রতিমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনকে ‘শায়েস্তা’ করতে এই বাহিনীকে ব্যবহার করছেন বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, ‘কেশবপুরে হাতুড়ি বাহিনীর এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমীনেরা হাতুড়ি বাহিনী সৃষ্টি করেছিল। তা ছাড়া মানুষ কোনো বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত হলে এ অন্যায় কি আমি মেনে নেব? খন্দকার আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তারা প্রমাণ করুক। কারা নির্যাতিত হচ্ছে তাদের নাম-ঠিকানা তারা বলুক।’
খন্দকার আবদুল আজিজ বলেন, হাতুড়ি বাহিনী বলে কিছু নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান আমির হোসেনের পক্ষের কিছু সাংবাদিক আছেন, যাঁরা এসব মিথ্যা খবর ছড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে, সেগুলোও মিথ্যা ও বানোয়াট। বেশির ভাগ মামলায় খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে চারটি মামলা আছে। তিনি প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের সঙ্গে আছেন। দলীয় কর্মসূচিতে বেশি মানুষের সমাগম ঘটাতে পারেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমীন বলেন, প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক কেশবপুরের হাতুড়ি বাহিনীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। এ বাহিনীকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। দলীয় কার্যালয়ের নিচতলায় কৃষক লীগের কার্যালয় দখল করে ছাত্রলীগের বসার জায়গা করে দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। ছাত্রলীগের নামধারী হাতুড়ি বাহিনীর সদস্যরা সেখানে বসে নেতা-কর্মীদের নাজেহাল করেন। সম্প্রতি মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাবেয়া ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগমসহ কয়েকজনকে মারধর করা হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, সম্প্রতি হাতুড়ি বাহিনী আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। ওই মামলার বাদী হাতুড়ি বাহিনীর প্রধান খন্দকার আবদুল আজিজ।
সম্মেলন থেকে বলা হয়েছে, আজিজের বিরুদ্ধে মনিরামপুর, কেশবপুর থানাসহ বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তারপরও এই আজিজ বাদী হয়ে থানায় বসে কীভাবে মামলার বাদী হতে পারেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এইচ এম আমির হোসেন বলেন, প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কেউ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নেই। যে কারণে তিনি হাতুড়ি বাহিনীকে দিয়ে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চান। সম্প্রতি ২৬ মার্চের মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি সভা হাতুড়ি বাহিনী পণ্ড করে দিয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে তুলে নিয়ে হাতুড়ি বাহিনী দিয়ে শায়েস্তা করা হচ্ছে।
আমির হোসেন আরও বলেন, ‘কেশবপুরের ১৪৪ গ্রামের জনপদ এখন হাতুড়ি বাহিনীর ভয়ে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্যসহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর দৌরাত্ম্যের কোনো সমাধান হয়নি। এখন আমরা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাব।’
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবদুল্লাহ বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। আজিজের বিরুদ্ধে কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, এমন তথ্য তাঁর জানা নেই।

আওয়ামী লীগে দ্বিধারা
কেশবপুরে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নেতৃত্বে সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক ও অপর অংশের নেতৃত্বে উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন। তাঁদের নেতৃত্বে পৃথকভাবে দলীয় সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আমির হোসেন বলেন, সুবিধাবাদী কয়েকজনকে নিয়ে প্রতিমন্ত্রী তাঁর প্রশাসনিক ইজম বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন। প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, তিনি কোনো বিভক্তির মধ্যে নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দাওয়াত দিলে তাঁরা কোনো জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে আসেন না।