Thank you for trying Sticky AMP!!

যে কারণে ছাত্রদলের ওপর হামলা

সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার পর নিজের অনুসারীদের নিয়ে সামাদ আজাদের (বাঁ থেকে তৃতীয়) মহড়া। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী

বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলটিকে ছোট ছোট সভা-সমাবেশের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিতে চায়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা বা কর্মসূচিকে সহজভাবে নেবে না ক্ষমতাসীন দল। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদল ও বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা বা হামলার পেছনে এমন চিন্তা কাজ করেছে বলে দলীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

যার কারণে এক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদল ও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে হামলা ও বাধা এসেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। আবার ঢাকার বাইরে বিএনপির কিছু কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। এসব কর্মসূচি ছিল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্যবস্তু করে বা খালেদা জিয়াকে নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের প্রতিবাদে। তবে একই সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিএনপি বা এর অঙ্গসংগঠন অন্যান্য কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পেরেছে।

সম্প্রতি তারা প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে এবং উন্নয়নবিরোধী যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, তাতে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
মাহবুব উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
সর্বোচ্চ আদালতের বাইরে (হাইকোর্টের মাজার গেট) লাঠিসোঁটা হাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার পর তাঁরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন

বিএনপি ও ছাত্রদলের ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে সম্প্রতি তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে এবং উন্নয়নবিরোধী যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, তাতে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সুতরাং বিএনপি শান্তিপূর্ণ থাকলে আওয়ামী লীগ অশান্তি সৃষ্টি করতে যাবে কেন?

Also Read: হামলার নেতৃত্বে বাইরের নেতারা

১৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অতীতে দেওয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। সেতুতে যে স্প্যানগুলো বসাচ্ছে, এগুলো তার কাছে ছিল জোড়াতালি দেওয়া। বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে। আবার তার সঙ্গে কিছু দোসরেরাও…তাদেরকে এখন কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত।’

এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি চলতে থাকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে। সংঘাতের সূত্রপাত ২২ মে। ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রদল প্রতিবাদ সমাবেশ করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে। সেখানে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় টিএসসিতে ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

পরদিন সিলেটে একই ইস্যুতে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

ছাত্রদল তাদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে ২৪ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ওই দিন সকালে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসি যাওয়ার পথে শহীদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়। এই হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদল গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়। সেদিন তারা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে আবারও ছাত্রলীগ হামলা করে। একপর্যায়ে ছাত্রদলের একাংশ সুপ্রিম কোর্ট ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়লে সেখানেও তাদের পেটানো হয়।

একই দিন ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকির’ প্রতিবাদে খুলনা মহানগর ও পটুয়াখালী জেলা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা হয়। পটুয়াখালীতে হামলা করে ছাত্রলীগ আর খুলনায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। সর্বশেষ গতকাল বরিশালে পুলিশি বাধায় ছাত্রদলের মিছিল পণ্ড হয়ে যায়। তবে গতকাল ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যুবদল সমাবেশ করেছে। তাদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।

ছাত্রদলের ওপর হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ইদানীং ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙচুর থেকে শুরু করে অছাত্র-বহিরাগতদের নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রসহ ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার অপকৌশল নিয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ছাত্রদলকে প্রতিহত করেছে। এখন থেকে সহিংসতার উদ্দেশ্যে ছাত্রদল যখনই ক্যাম্পাসে আসবে, তখনই তাদের প্রতিহত করা হবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একটি সূত্র বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের চড়াও হওয়ার পেছনে আরও কারণ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কর্তৃত্ব খর্ব হতে দেওয়া হবে না।

এ ছাড়া সম্প্রতি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয়েছে। তারাও কিছুটা নিজেদের শক্তি দেখানোর চেষ্টা করেছে। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিরও মেয়াদ শেষ, সম্মেলন আসন্ন। তাদের মধ্যেও নেতৃত্ব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে তৎক্ষণাৎ কড়া জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ