জসীম উদ্দিন
জসীম উদ্দিন

ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ শতভাগ ঠিক আছে

প্রচার, আচরণবিধি এবং নিরাপত্তা-প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন-এর সঙ্গে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার

প্রশ্ন

ভোটের প্রচার কেমন দেখলেন, আচরণবিধি মানার ব্যাপারে প্রার্থীদের আগ্রহ কতটা ছিল?

জসীম উদ্দিন: প্রার্থীরা পূর্ণ আনন্দ ও উদ্যম নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। একটা নির্বাচনের পরিবেশ যেমন হওয়ার কথা, সে রকমই হয়েছে। বড় ধরনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সব মিলিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ ১০০ ভাগ ওকে (ঠিক আছে)। সবকিছু ভালোই চলেছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের ছোট ছোট কিছু অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এসেছে। আমরা বসে সঙ্গে সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা জবাবও দিয়েছেন। সতর্ক করার পর তাঁরা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়বার ঘটবে না।

আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে যেসব অভিযোগ (সাইবার বুলিংয়ের) এসেছে, সেগুলোর স্ক্রিনশটসহ একটি আবেদন বিটিআরসির চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এগুলো তাঁরা পাঠাবেন (মেটার কাছে) এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএমপির সাইবার সেলকেও বলা হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরাও একটা সেল করেছি।
প্রস্তুত ব্যালট বাক্স। পাঠানো হবে কেন্দ্রে। সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশ্ন

প্রার্থীদের অনেকেই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। এসব ঘটনায় কী ব্যবস্থা নিলেন?

জসীম উদ্দিন: এটা কেউ চট করে বন্ধ করে দিতে পারেন না। এটা বন্ধ করতে গেলে একেবারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ মেটায় (ফেসবুকের পরিচালন প্রতিষ্ঠান) পাঠাতে হয়। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসতে ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় লাগে। অবশ্য একটি ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে যেসব অভিযোগ (সাইবার বুলিংয়ের) এসেছে, সেগুলোর স্ক্রিনশটসহ একটি আবেদন বিটিআরসির চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এগুলো তাঁরা পাঠাবেন (মেটার কাছে) এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএমপির সাইবার সেলকেও বলা হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরাও একটা সেল করেছি।

ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে প্রস্তত করা হয়েছে ভোট কেন্দ্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম
প্রশ্ন

নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা-প্রস্তুতি কেমন? আপনারা প্রথমে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েনের কথা বলেছিলেন। পরে আবার সেখান থেকে সরে এলেন...

জসীম উদ্দিন: নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা-শঙ্কা নেই। তবে শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে দুটি বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। প্রথমত, হলের বাইরে ভোট হতে হবে। আমরা সেটা আমলে নিয়েছি। শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভোটের সময় আট ঘণ্টা (সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত) করা হয়েছে। এমনকি চারটার সময় যদি কেউ ভোটকেন্দ্রের আঙিনায় থাকে, তাঁদের ভোট গ্রহণ করতে যদি পাঁচটাও বাজে, আমরা তাঁদের সেই অধিকার দেব।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের বিএনসিসি, রোভার ও রেঞ্জাররা ভোটারদের লাইন ম্যানেজমেন্টে (ব্যবস্থাপনা) ও ভোটকেন্দ্রে থাকবেন। তাঁরা হলেন প্রাথমিক ডিফেন্স (প্রতিরক্ষা)। দ্বিতীয় হলো আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি আর তৃতীয় হলো আমাদের শিক্ষকেরা। এর বাইরে আর নিরাপত্তার প্রয়োজন থাকার কথা নয়। আমরা প্রাথমিকভাবে এগুলোই চিন্তা করছি। পুলিশও থাকবে। কিন্তু আমরা আমাদের ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কেন ব্যবহার করব? আমরা যদি দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বলি যে ‘গন্ডগোল করছ কেন, এটা তো তোমাদের ভোট, তোমরা শান্ত হয়ে যাও’; তাহলে তো আর পুলিশের প্রয়োজন হয় না।

আমরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছিলাম। যেহেতু সেনাবাহিনী এখন মাঠে আছে, পরিস্থিতি যদি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সেনাবাহিনী ডাকতে পারি—এ কথাটা আমরা বলেছিলাম শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার জন্য। কিন্তু এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি, আমরা প্রশাসনকেও কিছু বলিনি। এটা ছিল কেবল কথার কথা, বলার জন্য বলা। আমরা মনে করি, পুলিশ-আনসারসহ অন্য বাহিনীগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট। তবে তাদেরও আমাদের সীমানার বাইরে থাকার কথা বলেছি। ভেতরে বিএনসিসি-রোভার, প্রক্টরিয়াল বডি, শিক্ষক, নির্বাচন কমিশন—আমরাই যথেষ্ট। শিক্ষকদের কথা বাদ দিয়ে তো শিক্ষার্থীরা মারামারি করবে না।

প্রশ্ন

প্রতিবছর ডাকসু হোক, এমন প্রত্যাশা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে।

জসীম উদ্দিন: দেশ যখনই বিপদে পড়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন উদ্ধার করেছেন। বায়ান্নো, ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বই—সবক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। পরিশেষে চব্বিশেও বাংলাদেশকে তাঁরা একটা সঠিক পথে নিয়ে এসেছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন প্যানেল থেকে যাঁরা লড়ছেন, তাঁরা দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করবেন। আমরা চাই, এভাবে প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হোক, নেতৃত্ব তৈরি হোক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা যেভাবে বারবার বিপদে পড়ে, যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হলে এভাবে আর বিপদে পড়বে না।

আমরা মনে করি, পুলিশ-আনসারসহ অন্য বাহিনীগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট। তবে তাদেরও আমাদের সীমানার বাইরে থাকার কথা বলেছি। ভেতরে বিএনসিসি-রোভার, প্রক্টরিয়াল বডি, শিক্ষক, নির্বাচন কমিশন—আমরাই যথেষ্ট। শিক্ষকদের কথা বাদ দিয়ে তো শিক্ষার্থীরা মারামারি করবে না।
প্রশ্ন

শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য ভোটারদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?

জসীম উদ্দিন: আমাদের প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা ঐতিহাসিকভাবে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের কথা বাদ দিলে ৩৫ বছর ধরে ডাকসুর ভোট থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ছিলেন। এবার যে শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন, তাঁদের বেশির ভাগ নতুন ভোটার। আমি আশা করব, ছাত্রছাত্রীরা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে তাঁদের নেতা নির্বাচন করবেন। নির্বাচিতরা ছাত্রছাত্রীদের অধিকারের পক্ষে লড়াই করবেন। এই আবেদনটুকু আমি সব শিক্ষার্থী ও সব ছাত্রসংগঠনের প্রতি রাখছি। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে যদি একটা মডেল তৈরি করা যায়, তাহলে সেই মডেলটা সারা বাংলাদেশ অনুসরণ করবে। রাকসু, চাকসু, জাকসু—সবাই ডাকসুর দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রশ্ন

আপনাকে ধন্যবাদ।

জসীম উদ্দিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।