বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শিশির মজুমদার মারা গেছেন। তিনি দলটির কন্ট্রোল কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
আজ সোমবার ভোর ছয়টার দিকে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
ডা. শিশির মজুমদারের মৃত্যুতে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) শোক জানিয়েছেন। এক শোকবার্তায় তাঁরা বলেন, ‘ডা. শিশির মজুমদার মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক হারাল। তাঁর স্মৃতি সচেতন মানুষের মধ্যে অমর হয়ে থাকবে। তিনি আমৃত্যু অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধ ও শোষণমুক্ত সমাজের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। সিপিবির শুভাকাঙ্ক্ষী ও সদস্যরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংগ্রাম জারি রাখবে।’
ডা. শিশির মজুমদার ১৯৬২ সালে সিপিবির সদস্য হন জানিয়ে শোকবার্তায় বলা হয়, ‘আজীবন তিনি চিকিৎসা ও মানুষের মুক্তির আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি বহুবার জেল-জুলুমের শিকার হন।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডা. শিশির মজুমদারের মরদেহ সিপিবি কার্যালয়ে আনা হলে তাঁর কফিন সিপিবির দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন দলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন। পরে ফুলের মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। এ সময় সিপিবির পাশাপাশি বাসদ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে বিপ্লবী গান ‘কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল’ গেয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর তাঁর মরদেহ পিরোজপুরে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়।
ডা. শিশির মজুমদার ১৯৬২ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। এর পর থেকে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নেন তিনি।
ছাত্রজীবনে ১৯৫৫ সালে ডা. শিশির মজুমদারের উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজে বুদ্ধিজীবী মহলে প্রথম বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়। এ ছাড়া ১৯৫৭ সাল থেকে তাঁর উদ্যোগেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলপনা আঁকা শুরু হয়। ১৯৬১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সাত দিনব্যাপী রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উৎসব পালনেও তিনি ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া ১৯৭৬ সালে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসকদের আলাদা আলাদা পেশাগত আন্দোলনেও তিনি অসামান্য ভূমিকা রাখেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের চিকিৎসকদের নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন পুনর্গঠন করেন ডা. শিশির মজুমদার। পরে কলকাতার লেনিন সরণিতে অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় স্থাপন করে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সহায়তা করেন।