বিদায়ী বছরে চট্টগ্রাম নগর আ.লীগ

সাফল্য শেখ হাসিনার জনসভা, ব্যর্থতা সম্মেলন করতে না পারা

গত ৪ ডিসেম্বর জনসভা চলাকালে সুসজ্জিত চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড মাঠ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বিদায়ী বছরে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রাপ্তির খাতায় সবচেয়ে বড় তিলক এঁটে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা। পলোগ্রাউন্ড মাঠে গত ৪ ডিসেম্বরের এই জনসভাকে দলটির স্থানীয় নেতারা স্মরণকালের বড় জনসমাগম হিসেবে দেখছেন। তবে তৃণমূলসহ নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে না পারার ব্যর্থতা বছর শেষে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে উঁকি দিচ্ছে। জনসভা সফল করতে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চোখে পড়লেও, সম্মেলন করতে না পারার দায় সংগঠনের পুরোনো বিরোধকে ইঙ্গিত করে।

পূর্বঘোষিত ১৮ ডিসেম্বরের নগর কমিটির সম্মেলন না হওয়ার পেছনে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয় দলীয়প্রধানের জনসভার প্রস্তুতিকে। সম্মেলন নিয়ে সময় দিতে গিয়ে জনসভার জনসমাগমে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেছিলেন কেউ কেউ। ফলে গত ১৭ নভেম্বর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। সম্মেলন না হওয়ায় নগরের মতো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশও অসন্তুষ্ট।

পূর্বঘোষিত ১৮ ডিসেম্বরের নগর কমিটির সম্মেলন না হওয়ার পেছনে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয় দলীয়প্রধানের জনসভার প্রস্তুতিকে। সম্মেলন নিয়ে সময় দিতে গিয়ে জনসভার জনসমাগমে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেছিলেন কেউ কেউ। ফলে গত ১৭ নভেম্বর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। সম্মেলন না হওয়ায় নগরের মতো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশও অসন্তুষ্ট।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে দুটি ধারা রয়েছে। এর একটি সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। পক্ষটি বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বলয়ভুক্ত। অন্যটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

নগরের বেশির ভাগ ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন হলেও ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করা যায়নি। জনসভা–পরবর্তী সময়েও এসব ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন করা যেত বলে মনে করছে কমিটির একটি অংশ। উল্লেখ্য, জনসভার পর ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘কেউ কেউ মনে করছিলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতির কারণে জনসভার জনসমাগমে ব্যাঘাত হবে। তাই সম্মেলন স্থগিত করা হয়। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে এটি মনে করি না। তারপরও আমাদের প্রাপ্তি হচ্ছে, ইউনিট সম্মেলন সম্পন্ন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বছরে বাকি সম্মেলনগুলো করতে পারব বলে আশাবাদী। আর সবচেয়ে বড় অর্জন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় স্মরণকালের বড় জনসমাগম।’

তিন বছর পরপর তৃণমূলের সম্মেলন হলে নেতাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। পাশাপাশি নেতৃত্বের জটও কমে। তৃণমূল সংগঠিত থাকলে দল শক্তিশালী হয়।
আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র

চট্টগ্রামের জনসভার পর ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ। তিনি আবার একই পদের দায়িত্ব পেলেও এখনো সাংগঠনিক বিভাগ ভাগ করে দেওয়া হয়নি। তবে চট্টগ্রাম নগরের সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় তিনিও অখুশি ছিলেন।
এ বিষয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেতারা সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে জনসভা সফল করেছেন। তবে নগরের কয়েকজন নেতা আমাকে পাশ কাটিয়ে ঊর্ধ্বতন নেতাকে দিয়ে ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন স্থগিত করেছিলেন। এখন সম্মেলন হওয়া না হওয়ার বিষয়টি আমার এখতিয়ারে নেই। তাই আমার পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মহিউদ্দিনের পক্ষের নেতা নগর কমিটির সহসভাপতি খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় সাফল্য জনসভায় সমাগম। তবে সম্মেলন করতে পারাটা আমাদের উচিত ছিল। এখন কেন কার জন্য করতে পারিনি, এসব হিসাব করে লাভ নেই। সামনে করতে হবে। আমাদের মধ্যে দৃশ্যত কোনো বিভেদ নেই। সবাই একসঙ্গে কেন্দ্রীয় সম্মেলনে গিয়েছি।’

নগর সম্মেলন না হওয়ায় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, নগর সম্মেলনের ওপর থানা ও ওয়ার্ডের সম্মেলন নির্ভর করছিল। সম্মেলন না হওয়ায় এখন পুরোনো কমিটিগুলোর আর পরিবর্তন হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে একই নেতৃত্ব থাকার কারণে তৃণমূলে কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য কমে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির এক নেতা বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সম্মেলন হয়ে গেছে। তারাও অল্প সময়ে ইউনিয়ন ও থানা সম্মেলন করেছে। নগরেও এ রকম করা যেত। কিন্তু নানা কারণে এটা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে কর্মীরা সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। সম্মেলন হলে সেটি আরও জোরদার হতো।

এ বিষয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, তিন বছর পরপর তৃণমূলের সম্মেলন হলে নেতাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। পাশাপাশি নেতৃত্বের জটও কমে। তৃণমূল সংগঠিত থাকলে দল শক্তিশালী হয়।