
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফায় রেইনবো নেশনের বিষয়টি রয়েছে; অর্থাৎ সব জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়া তোলা হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে গারো জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের সব সম্প্রদায়—বাঙালি, গারো বা অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী—সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা দিয়ে সব ধর্ম–বর্ণের মানুষকে এক পরিচয়ের বন্ধনে যুক্ত করেছেন। সেই ধারায় খালেদা জিয়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় পৃথক অধিদপ্তর গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি সরকারে এলে ঢাকায় একটি পৃথক সাংস্কৃতিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর উৎসবগুলো সরকারিভাবে পালনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা ও প্রয়োজনগুলো কাছ থেকে দেখেছেন। বিশেষ করে ময়মনসিংহে গারো সম্প্রদায়ের সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি তাদের সংস্কৃতি, জীবনযাপন ও উৎপাদনশীলতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও এ উৎসবে যোগ দিতে পেরে তিনি আনন্দিত ও গর্বিত। গারো সম্প্রদায়ের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি বাংলাদেশের মূল সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘গারো সম্প্রদায়সহ দেশের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির গভীর শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। বড় পরিবর্তন আসতে হবে মানসিকতায়—নিজেদের কখনো দুর্বল মনে করা যাবে না। সংখ্যায় কম হতে পারেন, কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা আপনাদের ভাই।’
আন্দালিভ রহমান আশ্বাস দিয়ে বলেন, গারো সম্প্রদায়ের যেকোনো দাবি বা সমস্যা তাঁর কাছে সরাসরি জানাতে পারেন। বিজেপির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁদের পক্ষে সংসদে যেভাবে একজন প্রতিনিধি কথা বলতেন, তার চেয়ে কোনো অংশে কম করে নয়—বিএনপি তাদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়ভাবে পাশে থাকবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ (প্রিন্স) বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে ধারণা দিয়েছিলেন, তাতে সবাই বাংলাদেশি পরিচয়ে একত্র। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সেই ঐক্যের ধারায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছেন।
শেষে এমরান সালেহ হালুয়াঘাটে আগামী ১৫ নভেম্বর ওয়ানগালা উৎসব আয়োজনের ঘোষণা দেন এবং সবাইকে সেখানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
ওয়ানগালা উৎসবের আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সভাপতি মৃগেন হাগিদক, বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির পরিচালক পরাগ রিছিল বক্তব্য দেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ওয়ানগালা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি শুভজিৎ সাংমা। সভাপতিত্ব করেন ওয়ানগালা উদ্যাপন ২০২৫ কমিটির সভাপতি সঞ্চয় নাফাক।
ওয়ানগালা উৎসব গারো জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব। নতুন ফসল ঘরে তোলার পর সৃষ্টিকর্তার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ফসল উৎসর্গ করে এ উৎসব উদ্যাপন করা হয়। গারো জাতিসত্তার মানুষের এটাই ঐতিহ্য। দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর এ উৎসবের নাম ওয়ানগালা। আজ বনানী স্কুল মাঠে দিনব্যাপী এ উৎসব উদ্যাপন করা হচ্ছে। গারোরা নেচে-গেয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে দিনটি উদ্যাপন করে থাকেন।