‘এখন দেখি, পুলিশ চোখে–মুখে–বুকে গুলি করে’

গত ১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে আহতদের নিয়ে আজ ঢাকায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: সংগৃহীত

‘আগে শুনতাম পুলিশ পায়ে গুলি করে। এখন দেখি পুলিশ চোখে-মুখে-বুকে গুলি করে’, এই বক্তব্য দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুব সংগঠনের একজন কর্মী মোস্তফা কামাল। গত ১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত মোস্তফা কামাল তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারান।

গত ১৮ জুলাই কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে সংঘর্ষে নিহত কৃষক দল নেতা সজীব হোসেনের পরিবার এবং পুলিশের গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঢাকায় মতবিনিময় সভার আয়োজন করে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ১৮ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ছয়জন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। দৃষ্টিশক্তি হারানো যুবদলের কর্মী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন হেলমেট পরে গুলি করে। আগে শুনতাম পুলিশ পায়ে গুলি করে। এখন দেখি চোখে-মুখে-বুকে গুলি করে।’

দৃষ্টিশক্তি হারানো লক্ষ্মীপুর কৃষক দলের নেতা বোরহানউদ্দিন বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে কিছু লোক ছিল, তারাও গুলি করে। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। আমার অপরাধ কী ছিল?’

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ১৮ জুলাইয়ের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে কৃষক দলের কর্মী মো. সজীব হোসেন (৩০) নিহত হন। নিহত সজীব হোসেন চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষক দলের সদস্য ছিলেন। বিএনপি অভিযোগ করেছে, পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলায় অংশ নেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সজীবকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

নিহত সজীব হোসেনের বাবা আবু তাহের বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই বিএনপি করে। ছেলে মিটিংয়ে গেল আর ফিরে আসল না। আমাকে আব্বা বলার মতো কেউ থাকল না। ছেলে এই দলের জন্য মারা গেছে, এই দলই ছেলে হত্যার বিচার করবে।’

এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দেশ ও মানুষ কিছুই নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, দমনপীড়নের হাত থেকে মুক্তির একটাই উপায়, এই সরকারের পতন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নির্যাতনে বিএনপির বহু নেতা-কর্মী গুম-খুন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন। এই নেতা-কর্মীদের ত্যাগ বৃথা যাবে না। দল সব সময় এসব পরিবারের পাশে থাকবে।

সভায় সজীবের পরিবারকে দলের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়। আর দৃষ্টিশক্তি হারানো ছয় নেতা-কর্মীর প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী।

সভায় বক্তব্য দেন লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।