
শুধু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার কথা বলে নির্বাচন হলে তা দেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে পারবে না বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন আয়োজন করব এবং পরে দেশটা কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটা যদি আমরা এখন ঠিক করতে না পারি, তাহলে সেই নির্বাচন আমাদেরকে কাঙ্ক্ষিত সফলতা দেবে না। আমাদের কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জায়গাতে আমাদেরকে পৌঁছে দেবে না।’
প্রথম আলোর আয়োজনে ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় আখতার হোসেন এ কথাগুলো বলেন।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
আখতার হোসেন বলেন, ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার কথা বলে ’১৪-তে, ’১৮–তে, ’২৪-এ আওয়ামী লীগ নির্বাচন করেছে, সেটা তো আমাদের এখানে গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে পারে নাই।’
এনসিপির নেতা আরও বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর প্রস্তাবনার জন্য তাঁরা ঐকমত্য কমিশনে বসেছেন। কিন্তু সেটা (রাষ্ট্র কাঠামো) যদি আগের কাঠামোতেই থাকে; সে নির্বাচন শুধুই কি নির্বাচন, সেটি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দিতে পারবে কি না, এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আখতার হোসেন বলেন, ‘ঐক্যমতের জায়গা থেকেই আমরা ঐক্যমত্য কমিশনে গিয়ে বসেছি; যদি আলাপটা এ রকম হতো যে পরবর্তী কোনো সংসদ এসে সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করবে এবং সেগুলোকে বাস্তবায়ন করবে, তা হলে আমরা সেই সংসদের কাছেই আমাদের সমস্ত কিছু অর্পণ করতে পারতাম, আমরা ঐক্যমত্য কমিশনে বসতাম না।’
জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো সংশয় আমাদের কারো নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যেই এখন পর্যন্ত এই ধরনের বক্তব্য নেই যে, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, এমন মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এ সরকারের (অন্তর্বর্তী সরকার) গঠন প্রক্রিয়া, সেটা নিয়ে আমরা যখন কথা বলি ১০৬–এর (অনুচ্ছেদ) কথা আসে সংবিধানের। এটা নিয়ে একধরনের হাহাকার, হতাশা—অনেক কথা শুনি। কিন্তু ১০৬–এ যে এটাকে ডকট্রিন অব ইনস্টিটিউটের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো, এটার আসলে গ্রাউন্ড–টা কী? এটার গ্রাউন্ড হচ্ছে ’২৪–এর অভ্যুত্থান। যে জায়গা থেকে এটা মূল বৈধতা পেয়েছে।’
আখতার হোসেন তাঁর বক্তব্যে জুলাই জাতীয় সনদ, সংবিধান সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়। সঞ্চালনা করছেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন উপস্থিত আছেন ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি সংস্থা পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা উপস্থিত আছেন অনুষ্ঠানে।