দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী ও রংপুরের পর আরও দুটি বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নতুন অনেকে এসেছেন, কিছু আসনে বাদও পড়েছেন।
আজ শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামীকাল না হলেও রোববার ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। আমরা যখন বিভাগের নাম ঘোষণা করি, তখন ভিড় বেড়ে যায়, নির্দিষ্ট বিভাগ শুনলে পীড়াপীড়ি শুরু হয়ে যায়। কীভাবে নাম বের করা যায়? সে কারণে বিভাগের নাম ঘোষণা করছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুনও এসেছেন, বাদও পড়েছেন। নির্বাচনে জিতবেন, যাঁরা ইলেকটেবল, তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা মনোনয়নের ব্যাপারটাকে সুনির্দিষ্ট করে এখন বলছি না। কারণ, এর মধ্যে আমরা যেসব প্রার্থী দিয়েছি, সেসব মনোনয়নে ভুলত্রুটিও থাকতে পারে। সেটাও আমাদের সংশোধনের একটা সুযোগ রেখেছি। এ কারণে আমরা ঠিক করেছি ভিন্নভাবে, জেলা বা বিভাগ হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণা করব না। আমরা একসঙ্গে ৩০০ আসনের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে চাই।’
যাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা জয়ী হওয়ার মতো নন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাঁরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। জনগণের কাছে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচনে জিততে পারেন, তাঁরা পুরুষ হউন আর নারী হউন, তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
জনপ্রিয় নন, এমন প্রার্থীকে অন্য দল থেকে এনে নির্বাচনের প্রার্থী করার ইচ্ছা নেই বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘শরিক দল হোক আর যে হোক, আমাদের বিবেচনায় যেটা আসবে, আমি আমার দলে প্রার্থী নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীকে বাছাই করছি। অন্য দল থেকে এলেও তার জনপ্রিয়তা থাকতে হবে।’
শরিকদের মনোনয়নের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শরিক দলের বিষয়টা আমরা সবাই ধারণ করছি না। কারণ, এখানে জোটের বিপরীতে জোট, এখানে অন্য কোনো জোট নাই, যা আমাদের অপজিশন। সে রকম বাস্তব পরিস্থিতি নেই। কাজেই আমরা এখন দলীয়ভাবে আমাদের মনোনয়ন দিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত যদি প্রয়োজন হয়, আমাদের তো সুযোগ আছে।’
তিনি বলেন, ইসলামিক দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে, তারা তাদের মন্তব্য ব্যক্ত করেছে। ইসলামি দলগুলো নির্বাচনে আসবে।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কত নায়ক-নায়িকা এমপি। তাঁরা তো সরাসরি দল করেন না। ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশেও আছে। আর সাকিব আল হাসান রাজনীতি করবেন, জনগণের সেবা করবেন। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় তিনি দাঁড়াতে পারেন।’
উপনির্বাচনের দলীয় প্রার্থী হয়ে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাঁদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাঁরা আবার দাঁড়াচ্ছেন। তাঁরা এখানে মনোনয়ন চাইবেন, আমরা তাঁদের এখানে মনোনয়ন দিতেও পারি। কারণ, তাঁরা তো কাজ করার কোনো সুযোগ পাননি। সেই সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি যদি আমরা মনে করি, এই প্রার্থী এলাকাকে, পার্টিকে কিছু দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি আসবে না, সে কথা এক কথা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বিএনপির এখনো আসার সুযোগ আছে। হয়তো বিএনপি দলীয়ভাবে, জোটগতভাবে না-ও আসতে পারে। বিএনপির ভেতর থেকে অনেকেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে। তাঁরা প্রার্থী হিসেবে অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। শেষ মুহূর্তে ছবিটা কোন পর্যায়ে যায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।’
বিএনপিকে অপরাজনীতি পরিহার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আন্দোলনের নামে নাশকতা করছে। রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার পথ বেছে নিয়েছে। রাজনৈতিক আন্দোলনে তারা ব্যর্থ। চোরাগোপ্তা হামলা করে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না। ভন্ডুল করা যাবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হবে।
গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনা নিয়ে রাশিয়ার মন্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে বহিঃশক্তি যাঁরা আছেন, আমরা তাঁদের কোনো মন্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছি না। নির্বাচনটা করার দিকে আমাদের মনোযোগ। দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করবে, আমরা এর সঙ্গে শরিক হতে চাই না।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন।