
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ বি এম খায়রুল হকের অপরাধ বিবেচনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকেরা সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ দাবি জানান। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিলম্বে হলেও বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, সে জন্য সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে তাঁকে তাঁর অপরাধ বিবেচনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন ওই পবিত্র জায়গায় বসে রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষতি করতে না পারে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের একজন বড় শত্রু গ্রেপ্তার হলো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাতে চাই, বাংলাদেশের একজন বড় শত্রু গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি দেশের বিশাল ক্ষতি করেছেন। তিনি সাংবিধানিক পদে থেকে এবং সেই পদ ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সেই জায়গায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ বি এম খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে যে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে যে পূর্ণাঙ্গ রায় দেওয়া হয়, তাতে আকাশপাতাল তফাত ছিল। সংক্ষিপ্ত যে রায়টা দিয়েছিলেন, সেটাও আমরা মনে করি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেছে।’ তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট তৈরিতে এ বি এম খায়রুল হক দায়ী ছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর জন্য তিনি শতভাগ দায়ী।
এ বি এম খায়রুল হকের কী ধরনের শাস্তি চান, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা (শাস্তির বিষয়) তো আমার বলা ঠিক হবে না। আইনগতভাবে যে বিধানগুলো আছে, সেই বিধানগুলো দেখে তাঁকে প্রসিকিউট করে আইনের বিধান নিশ্চিত করতে হবে। তবে তাঁকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ওই জায়গায় বসে রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে না পারে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরও যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বি এম খায়রুল হকের রায়ের পরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটা বাতিল হলো এবং বাংলাদেশে পরবর্তীকালে যত রকমের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, জাতি তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, বিচার বিভাগ সবচেয়ে বড় জায়গা, যেখানে মানুষের আস্থা থাকে। সেই আস্থার জায়গাটা তিনি ধ্বংস করেছেন শুধু তাঁর রাজনৈতিক অভিলাষ থেকে। যেটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে।’
শিশু একাডেমি ভেঙে ফেলার আলোচনা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে হাইকোর্টের পাশে শিশু একাডেমি ভবনটিকে ভেঙে ফেলার জন্য কথাবার্তা চলছে বা এ ধরনের প্রক্রিয়া বা প্রস্তাব নেওয়া হচ্ছে। আমরা এটার বিরোধিতা করি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিরোধিতা করি এ কারণে যে এটা শিশুদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের বিভিন্ন রকমের কার্যক্রম, তাদের (শিশুদের) গঠন, তাদের বেড়ে ওঠা, তাদের মনমানসিকতা তৈরি করা, তাদের এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিজসহ (শিক্ষার বাইরের সৃজনশীল কার্যক্রম) প্রভৃতি ব্যাপারে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং তিনিই প্রথম শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সারা দেশে এর শাখা রয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠাকে এখান থেকে সরানোটা আমি মনে করি একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। এ ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, আমরা চাই না, শিশু একাডেমি ভবনটি সেই জায়গা থেকে স্থানান্তরিত করা হোক বা অন্য জায়গা নেওয়া হোক। এটা আমার মনে হয় জাতি গঠনের ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’