বিএনপির নেতারা ভারতীয় শাড়ি তেমন কেনেন না, দাবি রিজভীর
বিএনপির নেতাদের বউদের ‘ভারতীয় শাড়ি’ পরা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির নেতারা ভারতীয় শাড়ি তেমন কেনেন না। তবে রিজভী বলেন, ‘বিয়ের পর উপহার হিসেবে বউকে আমার মামা একটি ভারতীয় শাড়ি দিয়েছিলেন, সেটি পরার পর কাঁথা সেলাই করা হয়েছিল, সেই কাঁথাও কবে ছিঁড়ে গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘গুম-খুন ও অঙ্গহানির শিকার’ পরিবারের সদস্য নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
গতকাল বুধবার স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের’ ডাক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, যে বিএনপি নেতারা বলছেন ভারতীয় পণ্য বর্জন, তাঁদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? তাঁদের বউদের কাছ থেকে সেই শাড়িগুলো এনে কেন পুড়িয়ে দিচ্ছেন না।’
এ বক্তব্যের উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আমাদের বিএনপির নেতারা (ভারতীয়) শাড়ি তেমন কেনেন না। আমার নানাবাড়ি হচ্ছে ইন্ডিয়া। বিয়ের পরে একবার (ভারত) গিয়েছিলাম, আমার ছোট মামা একটা শাড়ি (ভারতীয়) দিয়েছিল। স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, ওই শাড়িটা কই। সে বলল, সেটা দিয়ে কবে কথা সেলাই করা হয়েছে, সেটাও ছিঁড়ে গেছে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির এই নেতা মন্তব্য করেন, আজকে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলাই মনে হচ্ছে পাপ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি জিনিস না বললেই নয়। দুই-একটি পত্রিকা, খুব দেখি বিচলিত হয়ে গেছে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করা ঠিক হচ্ছে কি না। এটা নিয়ে দেখি প্রতিবেদন হচ্ছে, নিউজ করছে।’
প্রসঙ্গত, রুহুল কবির রিজভী গত ২০ মার্চ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এরপর তিনি নয়াপল্টনের বিএনপির কার্যালয়ের সামনে নিজের ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা সেখানে চাদরটি আগুন দিয়ে পোড়ান। এ ঘটনার পর বিষয়টি দলের ভেতরে-বাইরে আলোচিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা রিজভীর ভারতীয় পণ্য বর্জনে সংহতি প্রকাশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান।
ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘আমরা যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করি, আমাদের কখনো বলা হয়নি যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা থাকে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা, সমালোচনা করা যাবে না। আমরা ছাত্রজীবন থেকে “সিকিম নয়, ভুটান নয়—এ দেশ আমার বাংলাদেশ” স্লোগান দিয়েছি। রুশ-ভারতের দালালেরা স্লোগান দিয়ে এসেছি। আজকে কয়েকটি মিডিয়া যেন খুব বিচলিত হয়ে গেছে—এ কী ব্যাপার! এটা তো শুধু আজকে নতুন নয়, স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের বামপন্থীরা তাদের গবেষণায়, তাদের মূল্যায়নে, ভারতকে আগ্রাসী-সম্প্রসারণবাদী শক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করেছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘এ দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম তূর্যবাদক মাওলানা ভাসানী ১৯৭২ সালেই ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে তোমাদের সেনাবাহিনী কবে নিয়ে যাবা। কেন আমরা অনেক বিষয়ে সমালোচনা করি। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিতে কথা ছিল, আমাদের তিনবিঘা করিডর দেওয়া হবে আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে যাওয়ার জন্য। সেটা এখনো দেওয়া হয়নি আইনগতভাবে। প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা হচ্ছে, পরশু দিন দুজন—এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করতে পারব না?’
নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নাম উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আজকে ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে কেন, এটা কি মানুষ জানে না? মানুষ তো বলে, টিপাই মুখে ভারত যে বাঁধ করছিল, তার প্রতিবাদে তাঁর যে শক্ত অবস্থান, তার প্রতিবাদে সে যে লং মার্চ করেছিল, তারপর সে নাই...। আজকে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, সে এমপি ছিল কয়েকবার, মন্ত্রী ছিল, হঠাৎ করে সে নাই হয়ে গেল, গুম হয়ে গেল, চলে গেল আরেকটি দেশে। এসব কি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায় না?’
রিজভী আরও বলেন, ‘এত ঘটনা, এত কিছু, হঠাৎ করে পেঁয়াজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কেন? এতই যদি সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক—তাহলে এটা হয় কেন?’ তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই শুনলাম, বাংলাদেশের একজন ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক করেছেন বাংলাদেশ বিমানে। বোম্বের কাছাকাছি নামবেন। তাঁকে নামতে দেওয়া হয়নি। পরে পাকিস্তানে তিনি বিমান নেমেছেন। এগুলো কিসের আলামত?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘২০১৪ সালে পার্শ্ববর্তী দেশের কূটনৈতিক এসে ভোটারবিহীন সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে গেলেন, ২০১৮ সালে রাতে ভোট হলো, সেই নির্বাচনকেও তারা স্বীকৃতি দিল। এবার ২০২৪ সালে এত বড় একটা ডামি নির্বাচন হয়ে গেল, তারপরও প্রকাশ্যে তাঁরা বলছেন, আমরা এই সরকারের পাশে আছি।’
রিজভী বলেন, ‘যারা একটি ভোট ডাকাত সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে, সেই দেশের পণ্য বর্জন করা ন্যায়সংগত, তাদের বিরুদ্ধে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে, আমরা সেই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করি।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন প্রমুখ।
আরও পড়ুন
-
মাছ, মাংস ও ডিমের সঙ্গে চড়া সবজির দামও
-
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর বিরোধ ছিল কী নিয়ে
-
দেশবাসী পাশে আছে, কাউকে পরোয়া করি না: প্রধানমন্ত্রী
-
আগুন ধরলে বিমানটিকে সরিয়ে নদীতে নিয়ে যান দুই বৈমানিক
-
গুচ্ছের সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ, পরীক্ষার্থী ৪০১১৬, পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে পৌঁছাতে হবে কেন্দ্রে