সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত আলোচনা সভায়
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত আলোচনা সভায়

বল এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে: বদিউল আলম মজুমদার

আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বদিউল আলম মজুমদার এক আলোচনা সভায় এই মত প্রকাশ করেন।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের বল এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে রয়েছে। দলগুলো সদাচরণের দায়িত্ব না নিলে পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।

‘আমার মনে হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন সবচেয়ে বেশি নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রার্থীদের সদাচরণের ওপর,’ এ কথা বলার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেরও আইন ও বিধির প্রয়োগ নিশ্চিতের ওপর জোর দেন তিনি।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে গতকালই তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। অন্তর্বর্তী সরকার আশা করছে, এই নির্বাচন বাংলাদেশের ‘ইতিহাসের সেরা’ নির্বাচন হবে।

দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে আসা বদিউল আলম মজুমদার ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের উদাহরণ টেনে বলেন, সেই দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। কারণ, তখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের জন্য একটা আচরণবিধি প্রণয়ন করেছিল। তিনটি জোটের নেতারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু অভিন্ন অঙ্গীকার পালন করেছিলেন। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিপরীত মতের প্রতি সহিষ্ণু থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কোনো সমস্যা দেখা দিলে দলগুলো সেটা নিজেরাই সমাধান করত।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। কারণ, তখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের জন্য একটা আচরণবিধি প্রণয়ন করেছিল। কোনো সমস্যা দেখা দিলে দলগুলো সেটা নিজেরাই সমাধান করত।

তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংশয় বহুলাংশে দূর হলেও ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না, সেই সংশয় এখনো পুরোপুরি কাটেনি বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম মজুমদার।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এখানে কতগুলো ধাপ আছে। ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা, নির্বাচনী বিরোধ মীমাংসা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটা কারসাজিমুক্ত এবং এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয় কি না, তার ওপর নির্ভর করবে নিরপেক্ষ নির্বাচন।’

‘বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার’ শিরোনামের এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, সরকারেরর অংশ হয়ে নয়, একজন নাগরিক হিসেবে তিনি কমিশনে কাজ করেন এবং এই কাজের জন্য তিনি সরকার থেকে কোনো পারিশ্রমিকও নেননি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দল নিবন্ধনের যে বিজ্ঞপ্তি, সেটা অন্তর্বর্তী সরকারে সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে মেলে না; বরং এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন আদালত অবমাননা করেছে।
—হাসনাত কাইয়ুম, সভাপতি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আপনাকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে নাকি বিপক্ষে? মানুষ যদি হ্যাঁ ভোট দেন, তার অর্থ দাঁড়াবে তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে। আর না ভোট দেওয়ার অর্থ হবে বিপক্ষে অবস্থান জানানো।’

আলোচনা সভার আয়োজক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি সব সংশ্লিষ্টদের কাছে গিয়েছি, কিন্তু কিছু হয়নি। এখন আমি আরও প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলব যে কেন হয়নি?’

সভার সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুমও এই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দল নিবন্ধনের যে বিজ্ঞপ্তি, সেটা অন্তর্বর্তী সরকারে সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে মেলে না; বরং এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন আদালত অবমাননা করেছে।

আগামী রোববার ইসিকে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠাবেন জানিয়ে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সোমবারের মধ্যে যদি নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে নিবন্ধন না দেয়, তাহলে জবাবদিহি চাইতে আগামী মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশনের কাছে যাবেন তাঁরা।

সভায় বক্তব্যে লেখক–গবেষক আলতাফ পারভেজও রাজনৈতিক দল হিসেবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে নিবন্ধন না দেওয়ার বিষয়টি ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেন।

দেশে রাষ্ট্র মেরামতের বিষয়টি সবার আগে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করে আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘গতানুগতিক ব্যবস্থায় এই দল নিবন্ধন পেতে পারে। কারণ, এটা অনেক পুরোনো দল। তাদের পরে আবেদন করে, নিবেদন করে, নানা ধরনের কৌশলে অনেকে নিবন্ধন পেয়ে গেছে। পত্র–পত্রিকার মাধ্যমে দেখেছি। সেটা একধরনের অন্যায়।’

বৈষম্যকে দূরে ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়, অভ্যুত্থানের পর সেই প্রক্রিয়া থমকে গেছে বলে মনে করেন আলতাফ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থান কীভাবে বেহাত হলো, কারা করল—বিষয়গুলো এখনই জনগণকে জানানো উচিত।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, লেখক ও গবেষক জিয়া হাসান, অধিকারকর্মী জাকির হোসেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের শেখ নাসিরুদ্দিন, অহিংস গণ–অভ্যুত্থান আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আবুল বাশার প্রমুখ।